ঢাকা শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৫

ওজন কমাতে টক দই এর উপকারিতা

ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: এপ্রিল ২৫, ২০২৫, ১১:১৪ এএম
টক দই। ছবি: সংগৃহীত

চিকন বা রোগা হওয়া কিন্তু সহজ নয়। আর ওজন কমানোর দ্রুত কোনো উপায়ও নেই। এর জন্য পরিশ্রম করা প্রয়োজন। নিয়মিত ব্যায়াম অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে ঠিকই, তবে এর পাশাপাশি সঠিক ডায়েট অনুসরণ করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। রোগা হওয়ার প্রক্রিয়ায় প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় কী থাকছে তা খুব জরুরি। এমন কিছু খাবার ডায়েটে রাখতে হবে যা পেট ভর্তি রাখবে, স্বাস্থ্যকর, আবার ওজন কমানোর ক্ষেত্রেও বড় ভূমিকা পালন করবে।

টক দই আমাদের দৈনন্দিন জীবনে একটি পরিচিত এবং পুষ্টিকর খাদ্য উপাদান। এটি শুধুমাত্র একটি সুস্বাদু খাবার নয়, বরং শরীরের সুস্থতা বজায় রাখার জন্য এক অমূল্য প্রাকৃতিক উপহার। দুগ্ধজাত এই খাবারটি দুধকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় ফারমেন্ট করে তৈরি করা হয়, যার ফলে এতে গঠিত হয় উপকারী ব্যাকটেরিয়া, যাকে বলা হয় প্রো-বায়োটিক। এই ব্যাকটেরিয়াগুলো হজম শক্তি বাড়ানো, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করা এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। টক দইয়ের মধ্যে রয়েছে উচ্চমাত্রার প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন বি ও মিনারেল, যা আমাদের শরীরের গঠন ও রোগ প্রতিরোধে সহায়ক।

বর্তমানে স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের কাছে টক দই একটি জনপ্রিয় খাবারে পরিণত হয়েছে, বিশেষ করে যারা ওজন নিয়ন্ত্রণ, হজম সমস্যা বা ত্বকের যত্নে প্রাকৃতিক সমাধান খুঁজছেন। এভাবেই টক দই ধীরে ধীরে শুধুমাত্র রান্নাঘরের উপাদান নয়, বরং স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক খাদ্যতালিকার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে।


টক দইয়ের পুষ্টিগুণ

১. টক দইয়ে আছে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন বি-সিক্স, টুয়েল্ভ, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস ইত্যাদি।

২. টক দই প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ যা পেটের নানান সমস্যা দূর করে।

৩. এতে আছে নানান খনিজ উপাদান ও ভালো ব্যাক্টেরিয়া যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে।

৪. প্রতি এক কাপ টক দইয়ে প্রায় ২৭০ মি.গ্রা. ক্যালসিয়াম থাকে যা হাড়ের গঠনে সহায়তা করে।

৫. প্রোটিনের মাত্রা বেশি থাকায় টক দই খাওয়া ক্ষুধাভাব কমায় ফলে ওজন কমানো সহজ হয়।

৬. ভালো ব্যাক্টেরিয়া থাকায় অন্ত্র সুস্থ রাখে।

টক দইয়ের উপকারিতা অনেক। এটি শুধু স্বাদের জন্যই নয়, স্বাস্থ্য রক্ষার জন্যও অত্যন্ত উপকারী একটি খাবার। নিচে

টক দইয়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা তুলে ধরা হলো:

হজমে সহায়তা
টক দইয়ে প্রো-বায়োটিক (উপকারী ব্যাকটেরিয়া) থাকে, যা অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং হজমে সাহায্য করে। বদহজম, গ্যাস্ট্রিক বা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কমাতে কার্যকর।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
টক দইয়ে থাকা উপকারী ব্যাকটেরিয়া শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়তা করে।

হাড় ও দাঁত মজবুত করে
এতে উচ্চমাত্রায় ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস থাকে, যা হাড় ও দাঁতের গঠন মজবুত করতে সাহায্য করে এবং অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ করে।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
নিয়মিত টক দই খাওয়ার মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। এতে থাকা পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে।

ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
টক দইতে ক্যালরি কম, প্রোটিন বেশি—যা ক্ষুধা কমায় এবং ওজন কমাতে সহায়তা করে।

ত্বক ও চুলের যত্নে কার্যকর
টক দই ভেতর থেকে ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। অনেকে এটি ফেসপ্যাক বা হেয়ারপ্যাক হিসেবেও ব্যবহার করেন।

কোলেস্টেরল কমায়
নিয়মিত টক দই খেলে খারাপ কোলেস্টেরল কমে এবং হৃদযন্ত্র ভালো থাকে।

তবে যাদের ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা আছে, তাদের টক দই খাওয়ার আগে সতর্ক হওয়া উচিত।

টক দইয়ের রেসিপি 

১. টক দই সালাদ
উপকরণ: ১ কাপ টক দই, ১/২ কাপ কুচি করা শসা, ১/২ কাপ কুচি টমেটো, ১/২ কাপ গাজর কুচি, লেটুস পাতা (ঐচ্ছিক), বিট লবণ ও ভাজা জিরা গুঁড়া, ১ চিমটি গোলমরিচ।

Best 2 Healthy Salad Recipe | দুই রকমের স্বাস্থ্যকর সালাদ
টক দইয়ের সালাদ

প্রস্তুত প্রণালি: সব উপকরণ মিশিয়ে ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা ঠান্ডা পরিবেশন করো। মেওনেজের বদলে টক দই হওয়ায় এটা খুব লো ক্যালোরি হয়।

২. স্মুদি বোল (টক দই বেসড)

উপকরণ: ১/২ কাপ টক দই, ১টা কলা, ১ চা চামচ চিয়া সিড, ১ চা চামচ মধু, কিছু বেরি (স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি হলে ভালো), কিছু ওটস (ঐচ্ছিক)।

প্রস্তুত প্রণালি: সব উপকরণ ব্লেন্ড করে বাটিতে ঢালো। ওপরে কিছু চিয়া সিড ও বাদাম ছিটিয়ে দাও। প্রোটিন-প্যাকড হেলদি ব্রেকফাস্ট!

৩. টক দই ও ওটসের পুডিং

উপকরণ: ১/২ কাপ ওটস, ১ কাপ টক দই, ১ চা চামচ মধু, কিছু ফল (আপেল, কিউই, আঙুর)

প্রস্তুত প্রণালি: সব একসাথে মিশিয়ে কিছুক্ষণ ফ্রিজে রেখে দাও। ঠান্ডা ঠান্ডা খাও—ব্রেকফাস্ট বা হালকা ডিনারের জন্য পারফেক্ট।

৪. টক দই রায়তা

Cucumber Raita Recipe: गर्मियों में ठंडक का एहसास पाने के लिए खाएं खीरे का  रायता, दूर होगी थकावटNaN
টক দই ও শসা দিয়ে বানানো রায়তা

উপকরণ: ১ কাপ টক দই, ১/২ কাপ কুচানো শসা, বিট লবণ, ভাজা জিরা গুঁড়া, কিছু ধনে পাতা কুচি।

প্রস্তুত প্রণালি: সব উপকরণ মিশিয়ে ভাত বা রুটির সাথে পরিবেশন করো। হজমেও ভালো, ক্যালরিও কম।

৫. টক দই দিয়ে গ্রিলড চিকেন ম্যারিনেট

উপকরণ: ২ টুকরো মুরগির বুকের মাংস, ১/২ কাপ টক দই, রসুন বাটা, আদা বাটা, লেবুর রস, মরিচ গুঁড়া, লবণ, অলিভ অয়েল (১ চা চামচ)।

প্রস্তুত প্রণালি: সব মসলা ও টক দই দিয়ে মুরগি ম্যারিনেট করে ১ ঘণ্টা রেখে গ্রিল করো বা হালকা করে ভেজে নাও। প্রোটিন রিচ, লো ফ্যাট ডিশ!