সাধারণ লবণের তুলনায় বিট লবণ খুব কম ব্যবহার হয়ে থাকে। কিন্তু এই বিট লবণ খাওয়ার অনেক উপকারিতা, তা অনেকেরই অজানা রয়েছে।
গবেষণা বলছে, বিট লবণ খেলে কমবে অ্যাসিডিটি সমস্যা। এমনকি বমি বমি সমস্যাসহ আরও কয়েকটি সমস্যা ও দূর করবে এ লবণ।
বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ দক্ষিণ এশিয়ার রন্ধনপ্রণালীতে বিট লবণ খুব পরিচিত নাম। এটি কালো লবণ বা সুলেমানি লবণ নামেও পরিচিত। চাটনি, সালাদ, ফল, জুস, বোরহানি, ফুচকা, রাইতাসহ প্রায় সব ধরনের ভারতীয় ও চাইনিজ খাবারে বিট লবণের ব্যবহার রয়েছে।
লবণের মতো বিট লবণেও সোডিয়াম ক্লোরাইড থাকে, যা টক-ভাব আনতে সাহায্য করে। তবে, এর সঙ্গে আরও যুক্ত হয় আয়রন সালফাইড, যা এর ধুসর রং আনতে সাহায্য করে। আরেকটি হলো হাইড্রোজেন সালফাইড (পচা ডিমের মতো গন্ধ), যা এর কটু গন্ধ আনার ক্ষেত্রে দায়ী।
সুতরাং বলা যায়, বিট লবণের প্রধান উপাদানগুলোর মধ্যে রয়েছে, সোডিয়াম ক্লোরাইড, সোডিয়াম সালফেট, লোহা, ম্যাগনেসিয়াম, ফেরিক অক্সাইড, ফেরাস সালফেট ও ফ্লুরাইড ইত্যাদি।
বিট লবণের যত উপকারিতা
ফ্যাট পোড়াতে বিট লবণ
আমাদের দেহে উপস্থিত বিপজ্জনক ব্যাকটিরিয়া দূর করে এবং দেহে বর্ধিত ফ্যাট পোড়াতে সহায়ক। শুধু এটিই নয়, খাবারের স্বাদকে বহুগুণ বাড়িয়ে তোলে। আয়ুর্বেদ বিশ্বাস করেন যে, প্রতিদিন সকালে উত্তপ্ত জলে বিট লবণ মিশ্রণ শরীর সুস্থ রাখে।
হাড় শক্ত করতে বিট লবণ
বিট লবণ অনেক পুষ্টি এবং খনিজসমৃদ্ধ। এটি নিয়মিত খাওয়া হলে শরীরের হাড় শক্ত হয়ে যায় ।
পেটের গ্যাস ও অন্যান্য সমস্যায় বিট লবণ
খাদ্য পরিপাকজনিত সমস্যা, পেটে গ্যাস হওয়া, বুক জ্বালাপোড়া করা এমনকি কোষ্ঠ্যকাঠিন্যের সমস্যা কমাতেও সাহায্য করে বিট লবণ।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিট লবণ
ডায়াবেটিস রোগীদের সাদা লবণের চেয়ে বিট লবণের বেশি ব্যবহার করা উচিত। বিট লবণ শরীরে রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে কাজ করে এবং তারা আরও সুস্থ বোধ করবে।
ক্ষুধাভাব কমাতে বিট লবণ
ওজন কমানোর চেষ্টায় থাকলে বিট লবণ ভালো সহায়ক হতে পারে। ঘনঘন ক্ষুধাভাব কমানোর জন্য বিট লবণ উপকারি।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিট লবণ
সাদা লবণ যেখানে রক্তচাপ বৃদ্ধির জন্য দায়ী, সেখানে বিট লবণ উচ্চ রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ করে। এমনকি রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সাদা লবণের পরিবর্তে বিট লবণ খাওয়ার পরামর্শ দেন ডাক্তাররা।
ঘুমের সমস্যা কমায়
রাতে ভালো ঘুম না হলে অথবা ইনসমনিয়ার সমস্যা থাকলে নিয়মিত বিট লবণ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। ঘুমের সমস্যা মূলত দেখা দেয় শরীরে মেলাটোনিনের মাত্রার তারতম্য দেখা দিলে। বিট লবণ এই মেলাটোনিনের মাত্রাকে স্থিতিশীল করতে সাহায্য করে।
ঠান্ডার সমস্যায় বিট লবণ
সাইনাসের সমস্যা, শুকনা কাশি, গলাব্যথ্যা কিংবা ঠান্ডা সর্দির সমস্যায় গরম পানির সঙ্গে বিট লবণ মিশিয়ে গার্গল করলে উপকার পাওয়া যাবে।
ক্লান্তি দূর করতে বিট লবণ
কর্মব্যস্ত সারাদিনের ক্লান্তি দূর করতে এক গ্লাস পানি বিট লবণ ও এক টুকরো লেবু মিশিয়ে পান করুন। দেখবেন মুহূর্তেই চাঙ্গা বোধ করছেন।
ত্বকের সুরক্ষায় বিট লবণ
স্বাস্থ্য উপকারিতার কথা তো জানানো হলো, এবার জানুন বিট লবণ ব্যবহারে ত্বকের উপকারিতা। এই লবণ ত্বকের উপরিভাগের ময়লা ও মরা চামড়া দূর করতে প্রাকৃতিক স্ক্রাবার হিসেবে কাজ করে। এ ছাড়া, বন্ধ রোমকূপ খুলে ভেতরের ময়লা দূর করে ত্বকে প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা এনে দিতেও দারুণ কার্যকর বিট লবণ।
বিট বা কালো লবণের উপকারিতা
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, বিট লবণে প্রায় প্রতি মিলিয়নে রয়েছে আড়াইশ শতাংশ পরিমাণ ফ্লুরাইড। এটি পটাশিয়াম বা সোডিয়াম যেকোনো ফ্লুরাইড হতে পারে। যা প্রচুর টক্সিন সমৃদ্ধ। ৪.৯ গ্রাম অর্থাৎ, প্রতি চা চামচ বিট লবণে রয়েছে ০.৫৬ গ্রাম ফ্লুরাইড। ফ্লুরাইড থাইরয়েড গ্রন্থি, হাড়, জয়েন্টের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক।
এ ছাড়াও এটি রক্তস্বল্পতা, রক্তপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি ও পাকস্থলির ঝিল্লির ক্ষতি করতে পারে। এটি এমন একটি উপাদান যা সিসা, পারদ ও রেডন গ্যাসের (radon gas) মতোই বিষাক্ত। দাঁত ও হাড়ের গঠনে ফ্লুরাইড প্রয়োজনীয় উপাদান। মানবদেহে ফ্লুরাইডের সহনীয় মাত্রা ২ থেকে ৩ মিলিগ্রাম।
কিন্তু তা যদি ৪ মিলিগ্রামের ওপরে চলে যায় তাহলে তা বিষে পরিণত হয়। খাবার পানিতেও ফ্লুরাইড রয়েছে। এক লিটার পানিতে ০.৫ থেকে ১.০ মিলিগ্রাম ফ্লুরাইড থাকে। এর বেশি মাত্রায় থাকলে তা দূষণ পর্যায়ে চলে যায়। শরীরে ফ্লুরাইডের অতিরিক্ত মাত্রা ফ্লুরোসিস নামের রোগ তৈরি করে। ফলে ওজন হ্রাস পায়, ত্বকে প্রদাহ দেখা দেয়, দাঁতের ক্ষতি হয় ও চুল পড়া থেকে শুরু করে নানা সমস্যা দেখা দেয়।
অনেকের ধারণা, সাধারণ লবণের চেয়ে বিট লবণে সোডিয়াম কম থাকে বলে তা হয়তো উচ্চ রক্তচাপ কমায় এবং শরীরের পক্ষে ততটা ক্ষতিকর নয়।
ভারতের দিল্লির ফ্লুরোসিস গবেষণা ও পল্লী উন্নয়ন ফাইন্ডেশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দীর্ঘদিন ধরে বিট লবণ খাওয়ায় ভারতে ফ্লুরাইড বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা ছাড়িয়েছে প্রায় ৬৬ মিলিয়নেরও বেশি।
এই গবেষণার পর প্রতিষ্ঠানটি বিট লবণ ও বিট লবণ দিয়ে তৈরি স্ন্যাকস বা আয়ুর্বেদিক ওষুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেয়।
সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদের দৈনিক ২.৩ গ্রামের কম ও পঞ্চাশোর্ধ্বদের ১.৫ গ্রাম লবণ খাওয়া উচিত। সে ক্ষেত্রে লবণে যদি ফ্লুরাইড থাকে তাহলে তা হাড় ও জয়েন্টের ব্যথা সৃষ্টি করে, রক্তস্বল্পতা, রক্তপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি ও পাকস্থলির ঝিল্লির ক্ষতি করতে পারে।