ঢাকা শনিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৫

গরমে স্বস্তি দেবে সুপার ফুড ছাতু

লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশিত: এপ্রিল ২৬, ২০২৫, ১১:৫৪ এএম
সুপার ফুড ছাতু। ছবি: সংগৃহীত

ছাতু বাংলার ঐতিহ্যবাহী একটি খাবার। ছাতু হলো ভাজা ছোলা বা বিভিন্ন ধরনের ডাল ও শস্য গুঁড়ো করে তৈরি এক ধরনের পুষ্টিকর খাদ্য।  এই পুষ্টিকর খাবার দীর্ঘ সময় ক্ষুধা নিবারণ করে। তাই ওজন কমানো থেকে শুরু করে শরীর সুস্থ রাখতে ছাতুর তুলনা নেই। ‘খেটে খাওয়া মানুষের’ খাবার হিসেবে পরিচিত ছাতুর কদর এখন স্বাস্থ্যসচেতন মানুষের কাছেও। 

ছাতুর পুষ্টিগুণ

প্রোটিন: ছাতুতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে, যা শরীরের কোষ গঠনে সাহায্য করে এবং পেশি শক্তিশালী রাখে।

কার্বোহাইড্রেট: শক্তির উৎস হিসেবে ছাতুতে থাকা কার্বোহাইড্রেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

ফাইবার (আঁশ): ছাতু হজমে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।

চর্বি: এতে থাকা সামান্য পরিমাণ স্বাস্থ্যকর চর্বি শরীরের প্রয়োজনীয় ক্যালোরি জোগাতে সাহায্য করে।

ভিটামিন ও খনিজ

আয়রন- রক্তে হিমোগ্লোবিন গঠনে সহায়তা করে।

ক্যালসিয়াম- হাড় ও দাঁত মজবুত রাখে।

ভিটামিন বি কমপ্লেক্স- স্নায়ুতন্ত্র এবং শক্তি উৎপাদনের জন্য উপকারী।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট- ছাতুতে থাকা বিভিন্ন উপাদান শরীরকে টক্সিনমুক্ত রাখতে সাহায্য করে।

ছাতু খাওয়ার নিয়ম

ছাতু নানাভাবেই খাওয়া যায়। তবে সবচেয়ে প্রচলিত পদ্ধতি হলো, পানিতে ভিজিয়ে খাওয়া। বাটি বা থালায় পরিমাণমতো ছাতু নিয়ে তা কতটা শক্ত বা নরম করে খাবেন, সে অনুযায়ী পানি নিয়ে ভিজিয়ে ফেলুন। ভেজানো ছাতু স্বাদহীন হয়ে যায়। তাই সামান্য লবণ মিশিয়ে খেতে পারেন।

সকালে খালি পেটে ছাতু খেলে কি হয়?

ছাতুতে আছে পর্যাপ্ত খনিজ ও ভিটামিন, যা মস্তিষ্কের দক্ষতা বাড়ায়। এ ছাড়া মস্তিষ্ক ঠান্ডা ও সচল রাখার জন্য সঠিক মাত্রায় রক্ত সঞ্চালন নিশ্চিত করে ছাতু। আর মস্তিষ্কের এই কার্যকারিতা ধরে রাখতে প্রতিদিন সকালে চিনি না মিশিয়ে ছাতু খাওয়া বেশ উপকারী।

ছাতু আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি খাদ্য। এটি সহজলভ্য, সস্তা এবং পুষ্টিতে ভরপুর। 

গরমকালে ছাতু খুবই উপকারী একটি খাবার। আমাদের দেহ যখন অতিরিক্ত গরমে দুর্বল হয়ে পড়ে, তখন ছাতু অনেকভাবে শরীরকে ঠান্ডা ও সজীব রাখতে সাহায্য করে।

গরমে ছাতুর কাজ

শরীর ঠান্ডা রাখে- ছাতু শরীরের ভেতরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ঠান্ডা পানি বা দুধে ছাতু মিশিয়ে খেলে তা শরীরকে শীতল করে।

ঘাম ও লবণপানের ঘাটতি পূরণ করে- গরমে ঘামে শরীর থেকে লবণ ও মিনারেল বেরিয়ে যায়। ছাতুতে থাকা খনিজ পদার্থ ও লবণ শরীরের ইলেক্ট্রোলাইট ব্যালান্স রক্ষা করে।

শক্তি জোগায়- গরমে শরীর দুর্বল লাগলে ছাতু খেলে তা দ্রুত শক্তি দেয়, কারণ এতে প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট থাকে।

ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করে- ঠান্ডা পানির সাথে ছাতু খেলে তা শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে এবং পানিশূন্যতা দূর করে।

ক্ষুধা ও তৃষ্ণা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে- ছাতু খেলে অনেকক্ষণ পেট ভরা থাকে, ফলে অতিরিক্ত খাওয়া ও তৃষ্ণা কমে যায়।

দেহে তাজা ভাব এনে দেয়- গরমে ক্লান্তি বা ঝিমঝিম ভাব দূর করে সতেজ বোধ করাতে সাহায্য করে।

ছাতুর উপকারিতা

শক্তি বাড়ায়- ছাতুতে প্রচুর প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট থাকে, যা শরীরকে দীর্ঘ সময় ধরে শক্তি জোগায়। খেটে খাওয়া মানুষের জন্য দারুণ উপযোগী।

হজমে সহায়ক- এতে থাকা আঁশ (ফাইবার) হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।

ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে- ছাতু দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে, ফলে অতিরিক্ত খাওয়া কমে যায় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।

রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে সহায়ক- ছাতুতে আয়রন থাকে, যা রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সহায়তা করে এবং রক্তশূন্যতা (অ্যানিমিয়া) প্রতিরোধ করে।

হাড় ও দাঁতের গঠন মজবুত করে- এতে থাকা ক্যালসিয়াম হাড় ও দাঁত শক্তিশালী রাখে।

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভালো- ছাতুর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম, তাই এটি ধীরে ধীরে রক্তে গ্লুকোজ ছাড়ে—যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী।

তাপ প্রশমনকারী খাদ্য- ছাতু শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে, বিশেষ করে গরমকালে ঠান্ডা পানি বা দুধের সাথে খেলে স্বস্তি দেয়।

সস্তা অথচ পুষ্টিকর- কম খরচে প্রচুর পুষ্টি পাওয়া যায়, যা বিশেষ করে নিম্নআয়ের মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

ছাতু অনেক উপকারী হলেও কিছু মানুষের জন্য কিছু অপকারিতা রয়েছে। বিশেষ করে যদি বেশি খাওয়া হয় বা নির্দিষ্ট শারীরিক অবস্থায় খাওয়া হয়।

ছাতুর অপকারিতা

গ্যাস ও পেটফাঁপা: ছাতুতে আঁশ বেশি থাকায় কিছু মানুষের পেটে গ্যাস বা ফাঁপা ভাব হতে পারে, বিশেষ করে যাদের হজমশক্তি দুর্বল।

অতিরিক্ত খেলে ওজন বেড়ে যেতে পারে: যদিও ছাতু ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক, তবে অতিরিক্ত খেলে এতে থাকা কার্বোহাইড্রেট ও ক্যালোরির কারণে ওজন বাড়তে পারে।

ডালজাতীয় অ্যালার্জি: যাদের ডালজাতীয় খাবারে অ্যালার্জি আছে, তাদের ছাতু খাওয়ার পর চুলকানি, বমি বা অস্বস্তি হতে পারে।

কিডনির রোগীদের জন্য সতর্কতা: ছাতুতে প্রোটিন বেশি, তাই যাদের কিডনি সমস্যা রয়েছে, তাদের বেশি ছাতু খাওয়া ঠিক নয়—কারণ অতিরিক্ত প্রোটিন কিডনির ওপর চাপ ফেলতে পারে।

ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা হতে পারে: হঠাৎ করে বেশি ছাতু খেলে বা অপরিষ্কার পানি দিয়ে তৈরি ছাতু খেলে হজমের সমস্যা হতে পারে, এমনকি ডায়রিয়াও হতে পারে।

শিশু ও বয়স্কদের জন্য সহজে হজম নাও হতে পারে: অতিরিক্ত পরিমাণে বা সঠিকভাবে প্রস্তুত না করলে শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য হজমে সমস্যা হতে পারে।