ঢাকা শনিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৫

আলুবোখারার যতগুণ

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: এপ্রিল ২৬, ২০২৫, ০২:৩৯ পিএম
আলুবোখারা। ছবি: সংগৃহীত

আলুবোখারা টক মিষ্টি স্বাদের মাংসালো এই ফলটি খেতে খুবই সুস্বাদু। চাষের ভিন্নতায় আলুবোখারার রং ভিন্ন হয়ে থাকে, যেমন- লাল, কফি, গাঢ় নীল, ম্যাজেন্টা, হলুদ এবং হালকা সবুজ। ফলটি সাধারণত গোলাকৃতির হয়, মাঝে মাঝে হৃদয়াকৃতিরও পাওয়া যায়। আমরা সাধারণত আলুবোখারা বলতে যেটা পাই সেটা ফলটির শুকনো রূপ। এটা খেতে খুবেই সুস্বাদু। খাবারের স্বাদ বাড়াতেও মসলা হিসেবে এর জুড়ি নেই। শুধু কি তাই, ফলটিতে রয়েছে নানা ধরনের পুষ্টি উপাদান।

আলুবোখারার পুষ্টিগুণ

ফাইবারে সমৃদ্ধ: আলুবোখারা একটি দুর্দান্ত আঁশ এর উৎস, যা হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।

অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট: আলুবোখারায় প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে, যা কোষের ক্ষয় রোধ করে এবং বার্ধক্য প্রতিরোধে সহায়তা করে।

ভিটামিন এবং খনিজ:

ভিটামিন এ- দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে।

ভিটামিন কে- রক্ত জমাট বাঁধা ও হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।

পটাসিয়াম- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।

আয়রন- রক্তশূন্যতা রোধে সাহায্য করে।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: এতে থাকা পটাসিয়াম ও আঁশ উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।

হাড়ের স্বাস্থ্য: নিয়মিত আলুবোখারা খেলে হাড় শক্তিশালী হয়, বিশেষ করে নারীদের মেনোপজ-পরবর্তী সময়ে এটি উপকারী।

প্রাকৃতিক মিষ্টি: এটি একটি স্বাস্থ্যকর মিষ্টির বিকল্প, ডায়াবেটিস রোগীরাও পরিমিতভাবে খেতে পারেন।

আলুবোখারা খাওয়ার নিয়ম

সরাসরি খাওয়া: শুকনো আলু বোখারা সরাসরি খাওয়া যায়। এটি একটি স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
পানিতে ভিজিয়ে খাওয়া: ২-৩টি আলু বোখারা এক গ্লাস পানিতে সারারাত ভিজিয়ে রেখে সকালে খেলে হজমশক্তি ভালো হয়।
রান্নায় ব্যবহার: ডাল বা মাংস রান্নায় আলু বোখারা যোগ করলে খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি পায়। বিভিন্ন মিষ্টি পদে এটি ব্যবহার করা যায়।
পানীয় হিসেবে: আলু বোখারা দিয়ে পানীয় তৈরি করে খাওয়া যেতে পারে। এটি শরীর ঠান্ডা রাখে।

গর্ভাবস্থায় আলুবোখারা খাওয়া কি নিরাপদ? 

গর্ভাবস্থার আলুবোখারা হলো একটি আদর্শ খাবার কারণ এগুলো দ্রুত ক্ষুধা কমাতে বেশ কার্যকর এবং এতে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিকর ভিটামিন এবং ফাইবার থাকে। ফলে, তারা পেশী গঠনে এবং পেশী শক্তিশালী করে তুলতে সাহায্য করে। এটি প্রসবের সময় উল্লেখযোগ্যভাবে শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।

আলুবোখারার উপকারিতা

হজম শক্তি বৃদ্ধি করে: আলুবোখারার উচ্চ ফাইবার (আঁশ) কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং হজম সহজ করে।

রক্তস্বল্পতা (অ্যানিমিয়া) প্রতিরোধ করে: এতে থাকা আয়রন রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সহায়তা করে, ফলে রক্তশূন্যতা কমে।

হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: এতে থাকা পটাসিয়াম ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হৃদযন্ত্রের সুরক্ষা দেয় এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে।

ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে: বেশি আঁশযুক্ত হওয়ায় এটি দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে, ফলে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমে।

চামড়া সুন্দর রাখে: এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন এ ত্বক মসৃণ ও উজ্জ্বল করে।

হাড় মজবুত করে: নিয়মিত আলুবোখারা খেলে হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়, হাড় ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি কমে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে: এতে থাকা প্রাকৃতিক চিনির গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম, তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও তুলনামূলক নিরাপদ।

দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে: ভিটামিন এ থাকার কারণে চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে।

আলুবোখারার যেমন উপকারিতা আছে, তেমনি কিছু অপকারিতাও আছে।

আলুবোখারার অপকারিতা

অতিরিক্ত খেলে ডায়রিয়া হতে পারে: এতে প্রচুর আঁশ থাকে। বেশি খেলে হজমে সমস্যা হতে পারে, বিশেষ করে ডায়রিয়া বা পেট ব্যথা দেখা দিতে পারে।

রক্তচাপ খুব বেশি কমে যেতে পারে: পটাসিয়াম বেশি থাকায় যাদের স্বাভাবিকভাবেই রক্তচাপ কম থাকে, তাদের জন্য সমস্যা হতে পারে।

ওজন বাড়ার আশঙ্কা: যদিও আলুবোখারা স্বাস্থ্যকর, তবে এটি শর্করা এবং ক্যালরিতে কিছুটা উচ্চ। অতিরিক্ত খেলে ওজন বাড়তে পারে।

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সাবধানতা প্রয়োজন: প্রাকৃতিক মিষ্টি থাকলেও বেশি খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।

অ্যালার্জির সমস্যা: কারও কারও ক্ষেত্রে আলুবোখারা খাওয়ার পর অ্যালার্জির সমস্যা হতে পারে (যেমন চুলকানি, র‍্যাশ ইত্যাদি)।

বাতের সমস্যা বাড়াতে পারে: যাদের ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা বা গাউট আছে, তাদের জন্য অতিরিক্ত আলুবোখারা খাওয়া ঠিক নয়। কারণ এতে কিছু প্রাকৃতিক যৌগ আছে যা ইউরিক অ্যাসিড বাড়াতে পারে।