অভাব
এক মুঠা পুঁইশাক কিনতে
বাবা নিজেকে বিক্রি করতে চান
আমার ভয় লাগে জগৎ সংসার
যন্ত্রণা কাকে বলে —
বাবা মায়ের ঝগড়া দেখে
বড়ো হওয়া শিশুর থেকে ভালো কে জানে?
এক ছটাক রক্তের মূল্য জানতে চাইলে
লালশাকওয়ালা কসাইয়ের মতো তাকায়
আমার ভয় লাগে বাবার অসহায়ত্ব
বাবা বেছে বেছে লেবু পাতা কিনেন
এ বাজারে লেবুর থেকে পাতার গন্ধ বেশি
একটা পঞ্চান্ন কেজি ওজনের বাটখারার অভাবে
বাবা নিজেকে মাপতে পারেন না
মুদ্রাস্ফীতির বাজারে বাবার মূল্য কত?
আমার ভয় লাগে এই মর্ত্যলোকে
এই লুকোচুরির সংসার —
কখনো মা বুঝতে পারলে মন খারাপ করবেন
মায়ের মন খারাপের প্রতিটি সকাল
আকস্মিক শোক সংবাদে ঘুম ভাঙার মতো ভয়ঙ্কর!
অসুখের দিনে
ডক্টর খানার সিরাপগুলো কি দিয়ে বানানো?
তারা কি আমার মা`কে চেনেনা?
থার্মোমিটার কতটা তপ্ত হলে আমার মায়ের হাত পুড়ে যায়!
এ বিষয়ে তাদের সাথে আমার আগেও কথা হয়েছে।
যে পৃথিবীতে মায়ের হাতের ঝোল মেশানো
এক চামচ সিরাপ পাওয়া যায় না —
সে পৃথিবীতে আমি বাঁচার আশা করি না।
কিন্তু আমার অসুখের দিনে মা আমাকে বাঁচিয়ে তোলেন।
এবার বাড়ি গেলে মায়ের সাথে বসতে হবে,
মা`কে একটা ডক্টরখানা খুলতে বলবো।
জানি, মা রাজি হবেন না —
এক ফোয়ারা জল ছেড়ে আমি মায়ের চোখে
ম্লান হয়ে তাকিয়ে থাকবো —
খোদার কাছে চাইবো, এ তাকিয়ে থাকা যেন শেষ না হয়।
তুমি না থাকার দিনে আমায় কে বাঁচাবে, মা?
আত্মসমর্পণ
আগ্নেয়গিরির কন্যা
কুন্ডলী হাতে আমাকে স্পর্শ করো না
তোমার স্পর্শের কাছে থমকে যায় উহুদের যুদ্ধ
আমি আর কে?
তুমি আমাকে কোনো দুর্গম পথে বয়ে চলা
নিঃসঙ্গ ঝিরিপথ ভাবতে পারো
অথবা ভাবতে পারো কোনো নির্জন নদী
সীমানা শেষ হলে যেখানে একটা
উত্তাল সমুদ্রের প্রয়োজন
আমি সাদা নিশান উড়িয়ে দিয়েছি
তুমি বরং সুমুদ্দুর হও আমাকে গ্রহণ করো —
অপেক্ষা
গতকাল বলেছিলে আজ
কাল তুমি ফিরবে হয়তো
এইভাবে অপেক্ষায়
কেটে যায় কত ছাতিমের দিন
সূদুর হেমন্তের ধূসরতার আকাশ
আর দেখবো ক`দিন বলো?
কবে তুমি ফিরবে —
বন্য মোরালের চৈতন্য বুকে?
প্রেমের আঁচল
আমি কতশত বছর পালিয়ে বেড়াচ্ছি
জাদুকরী আঁচলের খুঁটি থেকে
তাতে এমন কোনো লাভ পাবোনা জানি
যা পাবো আমি তোমার আঁচল হতে
কি মায়াময় আঁচলের কুঁচি
কোমড় হতে পিঠের মুলুক
চুক্তিহীন প্রেমের বন্ধনে আমায়
বেঁধে রাখতে চায় ইহলোক
আমার ভয় হয় মায়াবিনী
মন কয় শীর্ষ শূন্যতার বন্দনা
প্রেমের আঁচল ধরে টানলে
আমার কাছে ফিরে আসে বেদেনা—
জারুল কাঠের ঠোঁট
জারুল কাঠের লালচে রঙের ঠোঁট
তুমি না নাড়িয়ে থাকতেই পারো -
এই নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই
যে পৃথিবীতে এখনো ফুল সজ্জার জানালা দিয়ে
বেরিয়ে আসে স্মৃতিগন্ধার মাতাল মিছিল
সে পৃথিবীতে আমাকে ভুলে যাওয়ার মতো
দুঃসাহস তুমি কিভাবে দেখাও?
কাকের কলসিতে পাথর ফেললে যদি
এখনো ভেসে উঠে টগবগে জল
তাহলে কিসের এতো অভিনয়?
জানতে চেয়েছো কখনো?
দক্ষিণ হাওয়ায় তোমার উড়ে যাওয়া চুল
কোথায় যেতে চায়?
কেন মৃদু স্পর্শে এখনো কেঁপে উঠে
তোমার লজ্জাবতী শরীর?
কেন তোমার থেকে পালিয়ে বেড়ায় মৃদুল সন্ধ্যা?
অবশ্য তোমার জানার কথা না
সব ফুল তো আর খুঁজে পায় না হৃদয়ের জানালা
প্রশ্ন রেখোনা
কখনো প্রশ্ন রেখোনা হিমাদ্রি —
হলদে খাম
প্রেমের সুর
নির্লিপ্ত ডাকপিয়ন!
আমি বলেছিলাম আমি শ্রেষ্ঠ প্রেমিক সর্বোচ্চ দাবিদার
কেউ শুনতে পায়নি—
যেমন শুনতে পায়না ঘুম থেকে নামাজ
উত্তম বলা ফজরের আজান!
বিষণ্নতা
এই শহরে আমার কথা বলার মানুষ নাই
বিষণ্নতা আমায় তাড়া করলে
আমি মায়ের কাছে,ছুটে যাই —
এই তাড়াহুড়োর পৃথিবীতে
মায়ের মতো ভালো শ্রোতা আর, কোথাও নাই —
তোমায় দিলাম অন্ধ চোখের ভার
পৃথিবীর সব দৃশ্যের মায়া ফুরিয়ে গেছে
তোমায় দেখার পর
সর্বহারা এই মনের সঙ্গে
বাঁধবে তুমি ঘর?
তোমায় পেলে কিচ্ছু চাইনা আর
তোমায় দিলাম অন্ধ চোখের ভার
আমায় তুমি পথ দেখিয়ো
সবুজ করুণ বনে
আমায় তুমি সঙ্গে নিও
একলা থাকার ক্ষণে
তোমায় দিলাম আমার
অন্ধ চোখের ভার
তুমি আমায় পার করিও
কিয়ামত আঁধার
আপনার মতামত লিখুন :