ডুমুরের সংসার
তোমাকে দেখলেই বেড়ে যায় সংসারের লোভ
এই ধরো, ঘুম ভাঙতেই শুভ সকালের পর
তোমাকে জিজ্ঞেস করি ‘কী করো’
তুমি দিলে নির্ভার উত্তর ‘ও বেরিয়ে যাবে
খাবার সাজিয়ে দিচ্ছি, খেতে ওর মনে থাকে না’।
আমি তখন আহত জানালার পর্দা সরিয়ে
পোড়াচ্ছি এক জনমের নিকোটিন
ওড়াচ্ছি দুঃখলিপির জমানো ধোঁয়া
বুকের ভেতর বাড়াচ্ছি ব্যথা গ্যাস্ট্রিকের,
তখনও আমার মনে নেই নাশতার টেবিলে
কী কী থাকার কথা ছিল কী কী নেই!
তবুও তোমাকে দেখলেই বেড়ে যায় সংসারের লোভ।
তুমি যখন স্নানে যাবে কিংবা খেতে বসবে বেলা করে
তখনই তোমার কাছে উড়ে আসবে যত্নের টেলিফোন
দেরি করে স্নান সারলে চুল শুকাবে না, ঠাণ্ডা লাগবে
দেরি করে ভাত খেলে দুর্বল হবে তুমি, মনে করিয়ে দেবে সব।
আমি তখন রেডিমেড লাঞ্চবক্সের দিকে তাকিয়ে ভাবছি
আজ না খেলেই কি তেমন কোনও ক্ষতি হবে পৃথিবীর!
একবারও চুমু না খেয়ে আমার ঠোঁট তো জেগে আছে
কথা বলছে ঠিকঠাক, ভুল হচ্ছে না বাক্যালাপে,
যা কিছু খেতে হয় বেঁচে থাকতে, খাই না তার অনেককিছুই।
তবুও তোমাকে দেখলেই বেড়ে যায় সংসারের লোভ ।
ধরো কোনোদিন তোমার মন খারাপ
চোখ তুলে তাকাচ্ছো না, দেখছো না সুন্দর
তখনই তোমার ঘর ভরে যাবে উপঢৌকনে
নীল শাড়ি আসবে অপরাজিতা ফুলের মতন
প্রজাপতির মতো দেখতে একটা চুলের ক্লিপ
ভোমরের মতো তোমার কাঁধের কাছে নিঃশ্বাস
তুমি দেবে সম্মতি আর তখনই একটা সমুদ্র
সুখের জলোচ্ছ্বাস তোমার বদ্ধ ঘরে,
আমি তখন ছেঁড়া স্যান্ডেল আর রঙচটা প্যান্টের
অবিচ্ছেদ্য পোস্টার ভবঘুরের, এই কাঙাল শহরে।
তাই তোমাকে দেখলেই বেড়ে যায় সংসারের লোভ ।
এসেছো যেপথেই ভিন্ন পন্থায়, ঘুমাতে যাবে তো একত্রে
সে যদি হয় চিরনিদ্রা- শিউলি ফুলে ঢাকা মমতার কবরে।
তোমার সঙ্গে চাদর-বালিশের ভাগাভাগি নয়
কেবল স্বর্গের দিকে যেতে চাই বলে
তোমাকে দেখলেই বেড়ে যায় সংসারের লোভ ।
বায়োস্কোপ
আজ এই ছুটির হাওয়ায়
তুমি কোনদিকে মুখ করে
জেগে থাকবে সারারাত!
কোনদিকের জানালার পর্দায়
সাবধানে গেঁথে দেবে খুলে রাখা
সুগন্ধীমাখা চুলের ক্লিপ!
কোন পায়ের আঙুলে ধরবে
ষোলগুটির অদম্য বাজি
সপ্তাহান্তর না কাটা নখের ডগায়!
আজ সারারাত তুমি গান শুনবে না,
আজ সারারাত তুমি গল্প লিখবে ভুল বানানে,
আজ সারারাত তোমার ক্লান্ত মাথা
খুঁজে নেবে নির্ভরতার পুরনো অভ্যেস।
আজ সারারাত তুমি আমাকে ভুলে থাকবে
আর ছুটির পর বলবে -
`যতগুলো রাত ঘুমাই, সব নিজের,
জেগে থাকা মানে তোমাকে নিয়ে থাকা`।
অমনি আমি এই ভেবে সুখী হই -
তোমার সঙ্গে ঘুমাতে না পারি
জেগে থাকি তো সারারাত।
এই করে কেটে যাচ্ছে জীবন,
আমার সংসার দেখার বায়স্কোপ পাচ্ছি না।
তোমাকে পাচ্ছি না
জীবন ফুরিয়ে যাচ্ছে
তোমাকে পাচ্ছি না।
নিয়ম করে ঘুম ভাঙছে
সবজি কুটছো রান্না করছো
স্নান সারছো চুল শুকাচ্ছো
ভাত খাচ্ছো ভাত খাওয়াচ্ছো
বিকেলে বেরুচ্ছো মন ভালো হচ্ছে
সন্ধ্যায় ঘরে ফিরছো আলো জ্বালাচ্ছো
ডিনার সারছো সব গোছাচ্ছো
বসছো গিয়ে আয়নার সামনে
খোঁপা খুলছো খোঁপা বাঁধছো
বেণী খুলছো ক্লিপ পরছো
ব্রা খুলে মিহিন জামা পরছো
বাতি নিভাচ্ছো শুয়ে পড়ছো
লিখে রাখছো ঢেউ জলোচ্ছ্বাস
ঝড় হচ্ছে ধ্বংস লিখছো
অবসাদে ডুবছো তৃপ্ত হচ্ছো
তারপর ফের ঘুমিয়ে পড়ছো
ঘুমের ভেতর স্বপ্ন দেখছো
স্বপ্ন ভাঙছে জড়িয়ে ধরছো
সান্ত্বনা পাচ্ছো বেঁচে থাকছো।
এদিকে আমি একা তাকিয়ে দেখছি
অন্ধকার আকাশ এবং চাঁদের নিঃসঙ্গতা
জীবন ফুরিয়ে যাচ্ছে
তোমাকে পাচ্ছি না।
তোমার প্রার্থনায় প্রেম
তোমাকে এনে দেব এরকম
ডুবে যাওয়া চাঁদের বিষণ্ণ বৈভব,
এনে দেব দ্রুতগামী রাতের এমন
উজ্জ্বল অন্ধকার,
তবু তুমি মন খারাপ করে থেকো না।
তোমাকে এনে দেব কাঁকনের
মিহি সুরের মতো দূরগামী পাখির গান,
এনে দেব সদ্য জল পাওয়া
কিশোরী নদীর কলরোল,
তবু তুমি চুপ করে থেকো না আজ।
তোমাকে এনে দেব প্রজাপতির আকণ্ঠ চুম্বনে
ভীষণ তৃপ্ত ফুলের স্পর্শ,
এনে দেব ছিপি হারানো শিশি থেকে
গড়িয়ে পড়া আতরের প্রেম,
তবু তুমি বলো না সব ইচ্ছে মরে গেছে তোমার।
অন্তত তোমাকে এনে দেব
আমি ছেড়ে যাবার বিপুল সম্ভাবনা,
এনে দেব তোমার অস্বস্তি ভাঙার
সবকটা চাবি,
তবু তুমি সুখী থাকো প্রিয়তমা আমার।
কী তোমার নাম
আমি বললাম ‘বৃষ্টি ভেজা সবকটা সোনালু ফুল তোমার’।
তুমি বললে ‘আর কিছু?’
আমি ফের বললাম ‘তবে তুমি কেঁপে ওঠা অনিন্দ্য জারুল।‘
তুমি হাসলে বুঝি?
বললে অমনি ‘আর কিছু?’
আমি বললাম ‘এই জল-হাওয়ায় কেঁপে ওঠা কৃষ্ণচূড়াটা তুমি’।
এবার আর আমার দিকে তাকালেও না, সম্ভবত বিশ্বাস করতে পারছো না যে - পৃথিবীর সব প্রেমিকার হৃদয়েই ততদিন কৃষ্ণচূড়ার লাল, যতদিন সে ভালোবাসতে জানে।‘
আসো তোমাকে তবে তোমার নামেই ডাকি।
আপনার মতামত লিখুন :