আজ আমাদের ছুটি প্রসঙ্গে আপনার মাথায় নিশ্চয়ই ঘুরছে সুইজারল্যান্ড কিংবা থাইল্যান্ডের কোনো দ্বীপ বা কোনো বিশেষ জায়গা? যেখানে আপনি কয়েক টুকরো বরফ আর এনার্জি ড্রিংকসের সংমিশ্রণে দূর করবেন দীর্ঘ দিনের ক্লান্তি। অথবা আপনি ভাবছেন, ঘরে বসেই কাটাতে চান একটা ছুটির দিন। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো, ভালো মন্দ খাওয়া দাওয়া, বিরক্তহীন ঘুম কিংবা কফির পেয়ালা হাতে বারান্দায় বসে উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থের একটা রোমান্টিক কবিতার বই এক বসায় শেষ করে ফেলা মন্দ নয়; তবে এর বাইরেও আপনি চাইলে কাটাতে পারেন একটা অন্যরকম ছুটির দিন।
ইতোমধ্যে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশের একটি করুণ দৃশ্য! যাকে আখ্যায়িত করা হচ্ছে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা বলে। যেখানে নবজাতক শিশু থেকে বয়োজ্যেষ্ঠ মিলে পানিবন্দী হয়ে আছে প্রায় ৩৬ লাখ মানুষ। যাদের প্রত্যেকের রয়েছে আলাদা আলদা সংগ্রামের গল্প। আপনি চাইলে ছুটির দিনে হতে পারেন সেই সংগ্রামের সঙ্গী। কিন্তু কিভাবে?
বন্যার পরবর্তী সময়ে বানভাসিরা সবচেয়ে বড় যে বিপদগুলোর সম্মুখীন হয়; তা হচ্ছে, পানির সরবরাহ, স্বাস্থ্যের সমস্যা, খাদ্য সংকট, আবাসন সংকট, বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক ক্ষতি। যা সামাল দিতে নিরাশ হয়ে পড়ে বানভাসিরা। আপনি চাইলে ছুটির দিনে সামর্থ্য অনুযায়ী এসব সমস্যা নিরসনে কাজ করতে পারেন। প্রয়োজনে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিয়ে ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, খাগড়াছড়ি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লক্ষ্মীপুর, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ অথবা সিলেটের কোন বন্যা কবলিত এলাকা নিজের চোখে পরিদর্শন করে দেখতে পারেন বন্যার্তদের করুণ পরিণতি। ধরুন, আপনি একজন চিকিৎসক। ছুটির দিনে বন্যার্তদের কিছুটা স্বাস্থ্য পরামর্শ দিয়ে আসতে পারেন।
কেউ ঘর হারা আবার কেউ স্বজনহারা ব্যথা নিয়ে পার করছে বিমর্ষ জীবন। বিশুদ্ধ পানি এবং জীবনের প্রয়োজনীয় উপাদানের অভাবে ভুগছে নানা রোগব্যাধিতে। আপনার এই ছুটির দিনটা কাজে লাগাতে পারেন তাদের জন্য। যদি আপনার জন্য বরাদ্দ থাকে স্বল্প সময়ের ছুটি; তাহলে ঘুরে আসতে পারেন ঢাকার টিএসসি থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন গণত্রান কেন্দ্র গুলোতে। যেখানে গেলে দেখতে পাবেন জাতি ধর্ম নির্বিশেষে একটি স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। মাটির ব্যাংক ভেঙ্গে শিশুরা দিয়ে দিচ্ছে তাদের জমানো শখের টাকা; নারীরা দিচ্ছে সংসারের খরচ বাঁচিয়ে রাখা অবশিষ্ট টাকা; আর প্রবীণরা বিলিয়ে দিচ্ছে তাদের শেষ সময়ের সহায়সম্বল। দেখে মনে হবে এ যেন অন্য এক বাংলাদেশ। অর্থ শ্রম মেধা দিয়ে নিরলস ভাবে বন্যার্তদের বাঁচাতে কাজ করছে সর্বস্তরের মানুষ। যেখানে চাইলেও আপনিও আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী এগিয়ে আসতে পারেন। যা হতে পারে আপনার জীবনের একটি শ্রেষ্ঠতম ছুটির দিন।
আপনার মতামত লিখুন :