আধুনিক সময়ে শহরের জীবনে প্রকৃতির ছোঁয়া যেন ধরাছোঁয়ার বাহিরে! উঁচু ভবন, কংক্রিটের ঘনবসতি কিংবা জনসমাগমের মধ্যে প্রাকৃতিক পরিবেশের অভাব প্রকট হয়ে উঠেছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সবুজের প্রতি আকর্ষণ আমাদের মধ্যে হারিয়ে যেতে বসেছে। তবে, এই পরিস্থিতির মাঝেও একটি ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে ছাদ বাগানে। ছাদ বাগান শুধু এক টুকরো সবুজ স্থান নয়, এটি শহরের পরিবেশগত সমস্যার সমাধানে একটি কার্যকরী উপায়।
এটি শহরের আবহাওয়া উন্নত করতে এবং বায়ুমানের গুণগত মান বাড়াতে সাহায্য করে। যা শহরের বাসিন্দাদের প্রকৃতির সান্নিধ্য এনে দেয়; ফিরিয়ে দেয় নগর জীবনে শান্তির স্বর্গ। তবে শহরের উঁচু দালানের ছাদে গড়ে ওঠা এই বাগান, শুধু পরিবেশকে সজীব করে তোলে না বরং তা মানসিক শান্তিও প্রদান করে থাকে। তাই আধুনিক যুগে জায়গা স্বল্পতায় প্রকৃতিপ্রেমীরা বেছে নিচ্ছে ছাদ বাগান। ফেনী জেলার, ফুলগাজী থানার জিএম হাট, লক্ষ্মীপুর গ্রামের সৈয়দ আজহার উদ্দিন নিশাদ তেমনই একজন।
তিনি পড়াশোনার পাশাপাশি বাসার ছাদে গড়ে তুলেছেন ছাদ বাগান। মুঠোফোনের মাধ্যমে কথা হলে তিনি বলেন, ছাদ বাগান করার শুরুটা মূলত শখের বশেই। ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে আমার অদক্ষ হাত মিলিয়ে সবজি গাছ লাগাতাম বাড়ির পাশে। ছোট থেকেই চাষ-বাস করা আমার খুবই পছন্দসই একটা কাজ। এই কাজটা আমি বেশ আনন্দসহিত প্রফুল্ল মন নিয়ে করতে পারি। তবে ২০২০ সালে করোনাকালীন কোনো এক বিশেষ কারণে ছাদ বাগানের প্রতি তুমুল আকর্ষণ জন্মে। সেই থেকে ছাদ বাগান করার সূচনা। কিন্তু ধীরে ধীরে গাছের নিয়মিত যত্ন নেওয়া, গাছের সঙ্গে সময় কাটানো, নতুন নতুন গাছ সংগ্রহ করে নিজের আয়ত্তে রাখা এটা একপ্রকার কঠিন অভ্যাসে পরিণত হয় এবং এটি ক্রমবর্ধমান হারে বেড়েই চলেছে, থামাথামির নাম নেই। তবে বলতেই হয়, এই ছাদ বাগানেই আমার মানসিক শান্তি মিলে। এই বাগানগুলো শুধু যে শোভা বাড়ায় তাই নয়, বরং এগুলোর মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন, বায়ুর গুণগত মান বৃদ্ধি, এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। এ ছাড়া পরিবেশ সুরক্ষা, শহরের তাপমাত্রা হ্রাস, স্বাস্থ্যকর খাদ্য উৎপাদনসহ জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করতে সাহায্য করে। কেউ চাইলে উপযুক্ত গাছ নির্বাচন করে ছাদ বাগান করতে পারবে। সেক্ষেত্রে স্থানীয় আবহাওয়া ও জলবায়ু অনুযায়ী গাছ নির্বাচন করুন। কিছু সহজ পরিচর্যা করার গাছ যেমন- সবজির চাষ করলে টমেটো, মরিচ, পালংশাক, বেগুন, লাউ, মিষ্টিকুমড়া, পুদিনা, ধনে ইত্যাদি।
ফুল চাষ করলে গ্লাডিওলাস, কাঠগোলাপ, গোলাপ ইত্যাদি। ফলের ক্ষেত্রে আম, পেয়ারা, লিচু, ডালিম, ড্রাগন, কমলা, সফেদা এবং ঔষুধি গাছের ক্ষেত্রে তুলসি, নিম গাছ, পাথর কুচি, ইত্যাদি লাগাতে পারেন। তবে এসব গাছের রক্ষণাবেক্ষণ একটি সুস্থ এবং ফলপ্রসূ বাগানের জন্য অপরিহার্য। নিয়মিত জল দেওয়া, মাটি পরীক্ষার মাধ্যমে পুষ্টি নিশ্চিত করা এবং গাছের বৃদ্ধি অনুযায়ী পরিচর্যা করা গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া পোকামাকড় এবং রোগের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে, প্রয়োজনে প্রাকৃতিক কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে। গাছগুলোর আগাছা কাটা-ছাঁটাই করাও গুরুত্বপূর্ণ, যাতে সঠিক শ্বাস-প্রশ্বাস ও আলো পাওয়া যায়। এছাড়াও ঋতু অনুযায়ী সঠিক গাছের নির্বাচন এবং চাষের পদ্ধতি পরিবর্তন করা বাগানের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এভাবে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ একটি সফল ছাদ বাগানের ভিত্তি গড়ে উঠতে সাহায্য করবে।
আপনার মতামত লিখুন :