কখনো দূরে থাকার কষ্ট, আবার কখনো একসঙ্গে হাসি আর গল্পের আড্ডা; এ যেন জীবনের এক অন্যরকম অধ্যায়। এখানে খুঁজে পাওয়া যায় কিছু চিরস্থায়ী বন্ধু, আর কিছু মুহূর্ত যা কেবল মনে নয়, জীবনের প্রতিটি ধাপে অনুপ্রেরণা হয়ে থাকে। রাতের গভীরতায় চলতে থাকা নীরবতায় কান পেতে শোনা যায় গল্পের খেলা। থাকে পরিবার ছেড়ে এই ছোট্ট পৃথিবীতে, একজন আরেকজনের কাছে কিছু পাওয়া ও হারানোর গল্প। প্রতিটি দিন নতুন শিক্ষা, আর প্রতিটি রাত হৃদয়ে জাগিয়ে তোলে স্মৃতির গভীর ছায়া।
হল বা হোস্টেল জীবন শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বিশেষ অভিজ্ঞতা। বিশেষ করে যখন একজন শিক্ষার্থী নিজের বাসা থেকে দূরে থাকে, তখন ক্যাম্পাসের হল জীবনের সঙ্গে মানিয়ে চলার মাধ্যমে তার জীবনে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। এই অভিজ্ঞতা শুধু শিক্ষার সঙ্গে নয়, বরং বন্ধুত্ব, সহযোগিতা এবং আত্মনির্ভরশীলতার সঙ্গেও গভীরভাবে যুক্ত। হোস্টেল লাইফের অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলেছেন ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী রাহেল আকন্দ। রাহেল বলেন,
‘হোস্টেল জীবনের শুরুটা বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। প্রথম প্রথম পরিবারের বাইরে একা থাকার অভ্যাস তৈরি করা সহজ ছিল না। কিন্তু ধীরে ধীরে আমি এ পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে শিখেছি। এখানকার বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, যারা আমার দ্বিতীয় পরিবারের মতো। অনেক বড় ভাই পেয়েছি, যারা সাদরে গ্রহণ করে অনেক সদুপদেশ এবং অনুপ্রেরণা দিয়েছেন।’ হোস্টেলে থাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো রুমমেটের সঙ্গে সম্পর্ক। একজন রুমমেট হয়ে ওঠেন জীবনের প্রতিদিনের সঙ্গী। রাহেলের কথায়, ‘আমার রুমমেটের সঙ্গে শুরুতে একটু অসুবিধা ছিল। তার সঙ্গে আমার রুটিন বা পছন্দের মিল হতো না। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমরা নিজেদের মধ্যে একটা বোঝাপড়া তৈরি করেছি। এখন সে আমার ভাইয়ের মতো।’ এভাবে রুমমেটদের সঙ্গে থাকার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা পারস্পরিক সহযোগিতা, সহনশীলতা, এবং বন্ধুত্বের গুরুত্ব বুঝতে শিখে। হোস্টেল জীবনের আরেকটি উল্লেখযোগ্য অংশ হলো আড্ডা এবং গ্রুপ স্টাডি। বন্ধুরা মিলে রাতে আড্ডা, গল্প করা, কিংবা কোনো পরীক্ষার আগে গ্রুপ স্টাডি করা যেন প্রতিদিনের একটি অংশ। এ বিষয়ে রাহেল বলেন, ‘পরীক্ষার আগে আমরা সবাই একত্রে পড়াশোনা করি। কেউ কিছু বুঝতে না পারলে অন্যজন সাহায্য করে। এভাবেই কঠিন বিষয়গুলো সহজ হয়ে যায়।’ এ ধরনের গ্রুপ স্টাডি শুধু পড়াশোনায় সাহায্য করে না, বরং শিক্ষার্থীদের মধ্যে দলবদ্ধভাবে কাজ করার দক্ষতা গড়ে তোলে। হোস্টেল জীবনে মজার এবং স্মরণীয় মুহূর্তের অভাব নেই। রাহেল স্মরণ করেন তার প্রথম রমজান মাসের কথা, যখন রাতের খাবারের পর বন্ধুরা মিলে সেহরির জন্য অপেক্ষা করতেন। সেই রাতগুলোয় ঘুমঘুম চোখে একসঙ্গে গল্প করা, হাসি-ঠাট্টা, সবকিছু তাকে এখনো প্রেরণা দেয়।’ তার কথায় ওই সময়টা ছিল জীবনের সেরা সময়গুলোর একটি।
হোস্টেল জীবন শিক্ষার্থীদের স্বাধীনতা দেয়, কিন্তু সঙ্গে আসে দায়িত্ব। অনেক শিক্ষার্থীর জন্য এটি প্রথমবারের মতো অর্থ ব্যবস্থাপনার অভিজ্ঞতা। এ প্রসঙ্গে রাহেল বলেন, ‘প্রতি মাসে খরচ পরিকল্পনা করে চলতে হয়। কখনো পকেটের টাকা শেষ হয়ে গেলে বন্ধুরা সাহায্য করে। এতে আমাদের মধ্যে আরও ভালো বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে।’ কিন্তু সবকিছু আনন্দের মধ্যে থাকলেও হোস্টেল জীবনে কিছু কষ্টকর দিকও আছে। পরিবারের থেকে দূরে থাকা, মায়ের হাতের রান্না মিস করা, এবং কখনো কখনো একাকিত্ব অনুভব করা; এগুলো হোস্টেল জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবে এ কষ্টের মধ্যেই শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। সামগ্রিকভাবে, রেসিডেন্স হল বা হোস্টেল জীবন শিক্ষার্থীদের জীবনকে সমৃদ্ধ করে। এই অভিজ্ঞতার মাধ্যমে তারা বন্ধুত্ব, দায়িত্ববোধ এবং আত্মনির্ভরশীলতার মতো গুণাবলি অর্জন করে, যা তাদের ভবিষ্যৎ জীবনে একটি মজবুত ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।
আপনার মতামত লিখুন :