শহরের ফুটপাত, রেলস্টেশন কিংবা বস্তির অলিগলিতে প্রতিদিন অসংখ্য সুবিধাবঞ্চিত শিশুর জীবনযাত্রা চোখে পড়ে। এরা কেউ পথশিশু, কেউ বস্তিবাসী, আবার কেউ কর্মজীবী শিশু। এদের জীবনমান উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে অ্যাকশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট (এএসডি)। ঢাকা মহানগরীর মোহাম্মদপুর, রায়ের বাজার, কল্যাণপুর, ভাষানটেক, সদরঘাট এবং কমলাপুর এলাকায় শিশুদের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প পরিচালিত হচ্ছে। এএসডির কার্যক্রম সম্পর্কে দৈনিক রূপালী বাংলাদেশ-এর সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলেছেন আরইএসএইচ প্রজেক্ট-এর প্রকল্প ব্যবস্থাপক, ইউ কে এম ফারহানা সুলতানা। বিশ্লেষণের মাধ্যমে তা তুলে ধরা হলো-
বস্তিবাসী শিশুদের শিক্ষার সুযোগ তৈরিতে এএসডি স্কুল পরিচালনা করছে। এসব স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা দিয়ে তাদের সরকারি বা বেসরকারি স্কুলে ভর্তি করানো হয়। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার আলো পৌঁছাচ্ছে এমন অনেক শিশুর কাছে, যারা অন্যথায় শিক্ষা থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত থাকত।
পথশিশুদের জন্য আনন্দ নিবাস নামে একটি বিশেষ আশ্রয়কেন্দ্র পরিচালিত হচ্ছে। এখানে বর্তমানে ৪০ জন মেয়ে শিশু পরিবার-সদৃশ পরিবেশে বাস করছে। এ শিশুদের শুধু থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা নয়, ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত তাদের জীবিকার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতাও শেখানো হয়। আনন্দ নিবাস একটি নিরাপদ পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে পথশিশুদের ভবিষ্যৎ গঠনে কাজ করছে।
কর্মজীবী শিশুদের জন্য এলআরসি প্রকল্প পরিচালিত হচ্ছে। কর্মজীবী শিশুরা কাজের ফাঁকে এখানে এসে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ নিতে পারে। এএসডি বিশেষত ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যুক্ত শিশুদের সেখান থেকে সরিয়ে এনে তুলনামূলক নিরাপদ কাজে যুক্ত করার পাশাপাশি তাদের শিক্ষার সঙ্গে সংযুক্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
যেসব শিশু স্টেশন বা রাস্তায় থাকে এবং কোনো নির্দিষ্ট স্থানে থাকার সুযোগ পায় না, তাদের জন্য এএসডি পরিচালনা করছে ওপেন লার্নিং সেন্টার। এ ছাড়া, মোবাইল লার্নিং সেন্টারের মাধ্যমে সরাসরি শিশুদের কাছে শিক্ষা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। বিশেষভাবে ভ্যান বা রিকশার মাধ্যমে পরিচালিত সেবাটি তাদের জন্য, যারা ময়লা কুড়ানো বা অন্যান্য অনানুষ্ঠানিক কাজে যুক্ত থাকে এবং যাদের পক্ষে কোনো কেন্দ্রে আসা সম্ভব নয়।
তহবিলের অভাব এ ধরনের প্রকল্পগুলোর বড় একটি চ্যালেঞ্জ। বর্তমানে ব্রেড ফর দ্য ওয়ার্ল্ডের মাধ্যমে জার্মান গভর্নমেন্টের অর্থায়নে কার্যক্রম পরিচালিত হলেও প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে অনেক কার্যক্রম থেমে যায়। ফলে পথশিশুরা আবার তাদের পুরোনো জীবনে ফিরে যায়। এ ধরনের কার্যক্রম টেকসই করতে এনজিওর পাশাপাশি সমাজের প্রতিটি অংশের সহযোগিতা প্রয়োজন।
পথশিশুদের জীবনযাত্রা নিয়ে যে ধারণা প্রচলিত, তা আংশিক সত্য। পথশিশুদের একটি বড় অংশ বাবা-মা থাকা সত্ত্বেও পারিবারিক অশান্তি, বিচ্ছেদ বা দারিদ্র্যের কারণে রাস্তায় চলে আসে। এ ধরনের পরিস্থিতি প্রতিরোধে অভিভাবকদের দায়িত্বশীলতার ওপর জোর দেওয়া দরকার। উপযুক্ত আইন প্রণয়ন এবং তার সঠিক বাস্তবায়নের মাধ্যমে শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব।
এএসডি সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জীবন বদলে দেওয়ার জন্য অসাধারণ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তবে এ প্রচেষ্টার সফলতা নিশ্চিত করতে সবার সম্মিলিত ভূমিকা জরুরি। প্রতিটি শিশুর জীবন গড়ে তোলার এ চেষ্টাকে টেকসই করার জন্য সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি এবং স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ প্রয়োজন। সহযোগিতা আর সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ তৈরি সম্ভব, যেখানে কোনো শিশু বঞ্চিত থাকবে না।
আপনার মতামত লিখুন :