মঙ্গলবার, ০১ এপ্রিল, ২০২৫

গাধা-ষাঁড়ের কথোপকথন

মো. আশতাব হোসেন

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১১, ২০২৪, ০৪:৩৭ পিএম

গাধা-ষাঁড়ের কথোপকথন

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

চরের নাম চৌদ্দকুড়ি। সেই চরে বাস করে ঝনঝন মিয়া। সে প্রতি বছর দুটি করে ষাঁড় গোরু লালন-পালন করে। তাদের মোটাতাজা করে কোরবানি ঈদে বিক্রি করে মোটা অংকের টাকা আয় করে। সেই সঙ্গে একটি গাধাও বোঝা টানার কাজে পালে। সেই গাধার পিঠে তুলে বাজার থেকে খড় ভুসিসহ ষাঁড় দুটিকে মোটাতাজা করার জন্য যেসব খানার দরকার তাই কিনে গাধার পিঠে তুলে দেয়। তারপরে বাড়ি এসে ষাঁড় দুটিকে খাওয়ায়। আর গাধাকে খুব ভালোমানের খাবার দেয় না। ভালো মানের খাবার গাধাকে খাওয়ালে নাকি সে মোটা হয়ে অলস হয়ে যাবে এবং ঠিকমতো বোঝা টানার কাজ করতে চাইবে না। ঝনঝন মিয়া একটি ষাঁড়ের নাম দিয়েছে চররাজ, অন্যটির নাম দিয়েছে চরবাহাদুর। আর গাধাটির নাম হলো গাগলশা। 
গাগলশাকে দিয়ে সারা দিন বোঝা টানার কাজ করে ঝনঝন মিয়া। যা টাকা পায় তা দিয়ে পরিবারের জন্য চাল-ডাল তরিতরকারি আর ষাঁড় দুটির জন্য গমের ভুসি চিটাগুড় কিনে। এবং মাঝে মধ্যে পাকা কলা কিনে সব বস্তায় ভরে গাধার পিঠে শক্ত করে বেঁধে দিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসে। গাধাটির ভাগ্যে জোটে মাত্র শুকনা খড় আর লবণ ঘোলা নদীর জল। শীতকালে মাঝে মধ্যে গাধা গাগলশাকে সস্তা দামের মুলা তুলে খেতে দেয়। গাধার আবার মুলা খুব পছন্দ। এভাবে দিন যায় মাস যায় গাগলশা বোঝা টেনেই চলে। আর চররাজ ও চরবাহাদুর উন্নতমানের খাবার খেয়ে গরমের দিনে ফ্যানের নিচে আর শীতের দিনে কম্বল পেঁচিয়ে মহাসুখে ঘুমিয়ে নিজেদের দেহ সুঠাম করে নিচ্ছে। সামনে কোরবানির ঈদ আসছে।
ঝনঝন মিয়া প্রতিদিন ষাঁড় দুটির চেহারা দেখছে আর টাকার হিসাব করছে। এদিকে গাধা ঝনঝন মিয়ার এমন পক্ষপাতমূলক আচরণের খুব বেজার হয়ে আছে। 
একদিন গাগলশা প্রতিদিনের ন্যায় বাজার থেকে বোঝা বহন করে ঝনঝন মিয়ার বাড়ির দিকে যাচ্ছে। ঝনঝন মিয়া তার এক বন্ধুসহ গাধার পিছে পিছে যাচ্ছে আর আলাপ করছে যে ক’দিন পর কোরবানির গরু কেনার জন্য দুজন লোক বাড়ি আসবে আমার চররাজ ও চরবাহাদুরকে দেখার জন্য। দাম ভালো হলে বিক্রি করে দিব। এসব কথা গাগলশা সব শুনে যায় আর মনে মনে হাসে। ঝনঝন মিয়া বাড়ি গিয়ে গাধার পিঠ থেকে সব মালামাল নামিয়ে গাধাকে কিছু খড় পানি খেতে দেয় আর ষাঁড়দুটিকে কলা, চিটাগুড়, গমের ভুসি, বট খেতে দিয়ে নিজেও রাতের খানা খেয়ে ঘুমিয়ে যায়। গাধা ও ষাঁড়দুটি রাতে প্রায় পাশাপাশি থাকে। জানা যায় মানুষজন সবাই ঘুমিয়ে গেলে রাত গভীর হলে পশুরা নাকি নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে। ঠিক তেমনি সেদিন ঝনঝন মিয়া ঘুমিয়ে যাওয়ার পর ষাঁড় চরবাহাদুর গাধাকে বলে, কিরে গাধা সারা জীবন গাধাই রয়ে গেলি। মালিক তোকে দিয়ে বহন করে এনে আমাদের সব ভালো ভালো খাবার খেতে দেয় আর তোকে দিয়ে সারা জীবন বোঝা টানার কাজ করেও শুকনা খড় আর লবণ জল দেয়। আমাদের কি সুখ! উন্নত খাবার উন্নত বিছানা সবই তো আমাদের জন্যই। তারপর একটু কাশি বা জ্বর হলে কত বড় বড় ডাক্তার এনে চিকিৎসা করেও মালিকের ঠিকমতো ঘুম হয় না। আমাদের কষ্টে মালিকের বুক ফেটে খানখান হয়ে যায় আর
এদিকে চরবাহাদুর খেয়ে খুব আয়েস করে জাবর কাটছে। 
সে চররাজকে বলে তুই তো বেশি কথা বলিস গাধার সঙ্গে এত প্যাচালের কি আছে এখন আমি ঘুমাব আর তোদের দুজনে ঘ্যানর ঘ্যানর শুনতে  পারছি না। চুপ করে ঘুমা। গাধা তো গাধাই ওর সঙ্গে আমাদের এত কথা মানায় না। এমন কথা বলার পর গাধা বলে ঠিক আছে ঠিক আছে। খুব করে ঘুমিয়ে নাও ক’দিন পরেই কোরবানি ঈদ! বুঝবে আরাম করে খাওয়া আর ঘুমানোর মজাটা কি! 
ক’দিন পর কোরবানির জন্য দুজন লোক ঝনঝন মিয়ার কাছে এসে গরু দুটির দরদাম চূড়ান্ত করে। তারপর বাড়ির ভেতরে যায় লোকদুটিসহ। এই সুযোগে গাধা বলে এবার হলো তো? আরাম করে খাওয়ার মজা কি হবে বুঝলে তো! বাড়ির ভেতরে লোক দুজনকে নিয়ে গিয়ে চা নাস্তা আপ্যায়ন করার পর ঝনঝন মিয়া টাকা সব বুঝে নিয়ে বের হয়। ষাঁড় দুটির পিঠে হাত বুলিয়ে বলে যা যা! ভালোভাবে চলে যা। চররাজ আর চরবাহাদুর গাধার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে লোক দুটির সঙ্গে শেষ বিদায় নিয়ে চলে যায়।

আরবি/ এম এইচ এম

Link copied!