ঢাকা বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

অবতারের পাহাড় প্যান্ডোরা

আরফান হোসাইন রাফি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৪, ১১:৩৭ এএম

অবতারের পাহাড় প্যান্ডোরা

ফাইল ছবি

আমেরিকান মহাকাব্যিক কল্পবিজ্ঞান চলচ্চিত্র ‘অ্যাভাটার’-এর কথা মনে আছে? জেমস ক্যামেরন-এর পরিচালিত সর্বকালের সব থেকে ব্যবসায়িকভাবে সফল ছবির রেকর্ড নিয়ে যে সিনেমাটি দাপিয়ে বেড়িয়েছে গোটা বিশ্ব। সিনেমাটির কথা মনে থাকলে নিশ্চয়ই মনে আছে সেই সিনেমায় দেখানো ভাসমান হেলেলুজা বা প্যান্ডোরা পাহাড়ের কথা। যে পাহাড়ের ছিল আশ্চর্য চৌম্বকীয় ক্ষমতা! কি ভাবছেন সবকিছুই কল্পনা? মোটেও না; সিনেমাটি কল্পবিজ্ঞান চলচ্চিত্র হলেও সেখানে দেখানো ভাসমান পাহাড়গুলো বানানো হয়েছিল একটি বাস্তবিক জায়গা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে।

দক্ষিণ-মধ্য চীনের হুনান প্রদেশের উলিংয়ুয়ান জেলার একটি প্রাকৃতিক এবং ঐতিহাসিক স্থান, ঝাং ঝিয়া ঝি জাতীয় উদ্যান।  হুনান প্রদেশের রাজধানী চাংশা থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে প্রায় ২৭০ কিলোমিটার ভেতরে এই উদ্যানটি  চীনের প্রথম জাতীয় অরণ্য উদ্যান হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করে।

প্রায় ১৩০ বর্গ কিলোমিটারজুড়ে এই উদ্যানটির অবস্থান। এই উদ্যানের সর্বাধিক নজরকারা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে স্তম্ভ বা খাম্বার মতো বিন্যাসপ্রণালি, যা পার্কজুড়ে সর্বত্র দেখা যায়। দেখে মনে হতে পারে মেঘের দেশের কোনো ভাসামান স্তম্ভ। তবে সেগুলো কোনো স্তম্ভ নয়! মেঘের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা স্তম্ভগুলো আসলে পাহাড়; যা পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ। এই পাহাড়গুলো তৈরি করা হয়েছে কোয়ার্টজ স্যান্ডস্টোন বা পাললিক শিলা দিয়ে। যার সর্বোচ্চ উচ্চতা ১২১২ মিটার ও সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪১৪০ মিটার।

এ ছাড়াও এখানে রয়েছে সর্বোচ্চ রোমাঞ্চকর কাচের সেতু। ঝুলন্ত এ সেতুর নাম ঝাংজিয়াজি গ্যান্ড ক্যানিয়ান কাচসেতু। এ সেতুটি উদ্যানের দুটি পাহাড়কে যুক্ত করেছে। এটি তৈরি করা হয়েছে প্রায় ৯৮০ ফুট খাঁড়া খাদের ওপর যা প্রায় দেড় হাজার ফুট দীর্ঘ। প্রায় ২০ ফুট প্রস্থের এ সেতুতে একসঙ্গে ৮০০ থেকে ৮৫০ জন মানুষ ঘুরে বেড়াতে পারে। আশ্চর্যজনক এই পাহাড় ও কাচসেতু দেখতে প্রতিবছর বিভিন্ন দেশ থেকে ছুটে যায় লাখ লাখ ভ্রমণ প্রেমিকরা।

এই উদ্যানটি পূর্বে মূলত একটি রাষ্ট্র-চালিত গাছের খামার ছিল। যেটি ১৯৫৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ১৯৮২ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয়-স্তরের বন উদ্যান হিসাবে অনুমোদন পায়। তারপর অদ্ভুত বেলে পাথরের চূড়ার বিশাল বনের বৈশিষ্ট্যযুক্ত, উদ্যানটি বিশ্ব প্রাকৃতিক পরিবেশে যুক্ত করা হয়, ১৯৯২ সালের ডিসেম্বরে ঐতিহ্য তালিকা এবং ২০০৪ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক প্রবর্তিত প্রথম বিশ্ব জিওপার্কের সদস্য হয়ে ওঠে। এবং বর্তমানে পার্কটি ভ্রমণকারীদের জন্য হয়ে উঠেছে একটি আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র। যেখানে ৪৬৮টি দর্শনীয় স্থানসহ ছয়টি ভ্রমণ রুট তৈরি করা হয়েছে এবং পর্যটকদের সুবিধার্থে রয়েছে দুই থেকে চার-তারকা হোটেল।

এ ছাড়াও রয়েছে শপিংমল এবং বিনোদন কেন্দ্র। সাধারণত এপ্রিল থেকে অক্টোবর ঝাংজিয়াজি পর্বত দেখার সেরা সময়। বর্ষাকালের এই সময়টাতে কুয়াশা ঢাকা মেঘাচ্ছন্ন পরিবেশ উদ্যানে এনে দেয় মনোমুগ্ধকর ছোঁয়া।

যেভাবে যাবেন- চীনের অন্যতম প্রধান শহর বেইজিং, সাংহাই থেকে ঝাংজিয়াজি যাওয়ার জন্য সরাসরি ট্রেন এবং ফ্লাইট রয়েছে। তবে বাংলাদেশ থেকে সরাসরি ফ্লাইট নেই। কানেকটিং ফ্লাইটে চায়না ইস্টার্নে করে কুনমিং হয়ে, বাংলাদেশের ইউএস বাংলা বা এয়ারলাইন্সে চায়না সাউদার্নে গুয়াংজু হয়ে, সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সে সিঙ্গাপুর হয়ে, মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সে কুয়ালালামপুর হয়ে কিংবা শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইন্সে কলম্বো হয়ে বেইজিং যাওয়া যায়, সেখান থেকে ঝাংজিয়াজি। অগ্রিম টিকেটে খরচ পড়বে আনুমানিক ২৫ হাজার টাকা থেকে ৪৫ হাজার টাকা। ঝাংজিয়াজি হেহুয়া বিমানবন্দর  নেমে একটি ট্যাক্সি নিয়ে সোজা চলে যেতে হবে মূল বাসস্টেশনে। সেখান থেকে ছোট বাস আপনাকে নিয়ে যাবে মূল পার্কের প্রবেশদ্বারের কাছাকাছি ওলিংয়ুয়ান শহরে। সকাল থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত প্রতি ঘণ্টায় এসব বাস ছেড়ে যায়, যার টিকিট মূল্য প্রায় ১২০ ইউয়ান।

তবে আপনি যদি সন্ধ্যা ৭টার পর পৌঁছান তবে বাসগুলো আর সেখানে যায় না, তখন একমাত্র বিকল্প হল ট্যাক্সি। বাসে ১০ ইউয়ান (বাংলাদেশের ১২১ টাকা) দিয়ে আর শহর থেকে ট্যাক্সিতে সর্বোচ্চ ২০০ ইউয়ান (বাংলাদেশের ২,৪০০ টাকা) দিয়ে আপনি পৌঁছে যেতে পারেন অবতারের পাহাড় প্যান্ডোরা।

টিকিট মূল্য

উইলিংইউয়ান পর্যটন কেন্দ্রের ঝাংজিয়াজি পর্বত পরিদর্শন করতে আপনাকে টিকিট কাটতে হবে। টিকিট মূল্য পর্যটন মৌসুমে থাকে ২৪৫ ইউয়ান (বাংলাদেশের ১,৭০০ টাকা) আর অফ সিজনে এটি হয় ১৪০ ইউয়ান।

যেখানে থাকবেন

ঝাংজিয়াজি জাতীয় উদ্যানে ভ্রমণে গেলে থাকার সবচেয়ে ভালো জায়গাটি হলো মূল পার্কের প্রবেশদ্বারের পাশের উলিংইউয়ান শহর। বিমানবন্দর থেকে শহরটি প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। পুরো উলিংইউয়ান শহরেই বেশ কয়েকটি কম দামে রাত কাটানোর হোটেলও পেয়ে যাবেন। ভাড়া পড়বে ২৫ ইউয়ান থেকে ২০০ ইউয়ান পর্যন্ত।
 

আরবি/জেআই

Link copied!