ঢাকা শহরের ব্যাচেলর জীবন কখনোই একরঙা নয়; এ জীবন কখনো রঙিন, কখনো সাদাকালো। এটি একটি নাটকীয় যাত্রা; যা কেবল জীবনকে বুঝতেই শেখায় না, পাশাপাশি সম্পর্ক, ভালোবাসা এবং সহিষ্ণুতার শিক্ষা দেয়। মিরপুর কলেজের অধ্যয়নরত তিন বন্ধু- ফয়সাল আহমেদ, রিপ্পি দাস, এবং শাহরিয়ার রিফাত; তাদের প্রতিদিনের জীবনের খণ্ডিত অধ্যায়ের মাধ্যমে ঢাকার ব্যাচেলর জীবনের এক নতুন অর্থ খুঁজে পেয়েছেন। তারা এই শহরে এসেছিলেন স্বপ্ন নিয়ে, কিন্তু এ শহরে এসে তারা জীবন শিখেছেন। তারা মনে করেন, এই শহর তাদের অনেক কিছু দিয়েছে, যা কোনো বইয়ে লেখা থাকে না। তাদের ভাষায়, ‘ঢাকা শহর আমাদের সবচেয়ে বড় যে শিক্ষা দিয়েছে, সেটা হলো জীবনের পাঠ। এখানে প্রতিটি মুহূর্ত শেখার, বেড়ে ওঠার এবং সম্পর্কের মূল্য উপলব্ধি করার সুযোগ দেয়।’
তাদের জন্য ব্যাচেলর জীবন একা থাকার নয়, বরং একে অপরকে পাশে পাওয়া, সহযোগিতা এবং নতুন সম্পর্ক তৈরি করার একটি জায়গা। তারা তিনজন আলাদা ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থী হলেও অনেকদিন যাবত একসঙ্গে থাকছেন। অনেকগুলো বাসা পরিবর্তনের পর এখন তারা যে বাসায় থাকেন, তাদের মতে এই বাসার মানুষজন তাদের দ্বিতীয় পরিবার হয়ে উঠেছে। বিশেষভাবে এ বাড়ির বড় ছেলে নাভিদ খান তাদের শুধু বড় ভাই হিসেবে নয়, একজন অভিভাবক হিসেবে দেখেন এবং তার পরিবারও তাদের নিজেদের পরিবারে পরিণত হয়েছে। ফয়সাল বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য এক অমূল্য উপহার। এই স্বার্থপর শহরেও সবাই মিলে পরিবারের মতো থাকছি’। এভাবে তাদের জীবনে পরিবার এবং বন্ধুত্বের সংজ্ঞা বদলে গেছে। তারা তিনজন একে অপরকে শুধু বন্ধু নয়, ভাইয়ের মতো মনে করেন। তাদের জীবনের এক বিশেষ দিক হলো, তাদের সম্পর্কের মাঝে ধর্মীয় কোনো ভেদাভেদ কখনোই ছিল না। ফয়সাল এবং শাহরিয়ার মুসলিম; রিপ্পি দাস একজন হিন্দু। তারা একসঙ্গে এমন এক বন্ধুত্ব গড়েছেন যেখানে ধর্ম কখনোই বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। এ বিষয়ে রিপ্পি বলেন ‘আমরা জানি, ধর্ম আমাদের ব্যক্তিগত বিষয়, কিন্তু আমাদের বন্ধুত্ব তাতে কখনো বাধাগ্রস্ত হয়নি। আমরা একে অপরের ধর্ম এবং বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।’
ঢাকার এই ব্যাচেলর জীবনে তারা শিখেছে একে অপরের ভিন্নতা এবং বৈচিত্র্যে সম্মান রাখতে, আর এই সম্মানই তাদের বন্ধনকে আরও দৃঢ় করেছে। তবে সবকিছু এত সহজ ছিল না। এই শহরে ব্যাচেলর জীবন এমন এক পথ যেখানে কষ্ট এবং সংগ্রাম অবধারিত। অর্থকষ্ট, সময়ের দুশ্চিন্তা, একাকিত্ব, বন্ধুদের সঙ্গে মনোমালিন্য; এই সব কিছুই তাদের জীবনে এসেছে। মেসে থাকতে থাকতে একে অপরের সহায়তায়, কখনো যখন এক প্লেট ভাতের অভাব ছিল, আবার কখনো পরীক্ষার চাপের মাঝে একে অপরকে উৎসাহিত করা; এসব ছোট ছোট মুহূর্তগুলো তাদের বন্ধুত্বকে আরও গভীর করেছে। তবে তাদের মতে, এ কষ্টই তাদের শিখিয়েছে কীভাবে জীবনের মূল্য বুঝতে হয়। এ বিষয়ে শাহরিয়ার যোগ করেন- ‘কষ্ট আমাদের একে অপরের পাশে থাকতে শিখিয়েছে। আর এই শেখাটা আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় শিক্ষা।’
এভাবেই ঢাকার ব্যাচেলর জীবন তাদের দিয়েছে এক অমূল্য পাঠ; শেখাচ্ছে সহিষ্ণুতা, ভালোবাসা, বন্ধুত্ব, এবং মানবিকতা। আগামী বছরগুলোতেও তারা এভাবেই সুখ, দুঃখ নিয়ে মিলেমিশে থাকতে চান। তারা জানেন, শহরের বড় বড় সমস্যা যেমন চ্যালেঞ্জিং, তেমনি এখানকার জীবনের শিক্ষাও সবচেয়ে বড় পুরস্কার।
আপনার মতামত লিখুন :