ঢাকা বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪

টেকসই কৃষি ব্যবস্থায় জৈব প্রযুক্তি

আরফান হোসাইন রাফি

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৭, ২০২৪, ০৪:১২ পিএম

টেকসই কৃষি ব্যবস্থায় জৈব প্রযুক্তি

ইন্টারনেট

ক্রমবর্ধমান হারে বেড়েই চলছে বিশ্বব্যপী জনসংখ্যার হার। যাদের খাদ্যের যোগান দিতে ফসলি জমিতে বাড়ছে অতিমাত্রায় রাসায়নিক সার এবং কীটনাশকের ব্যবহার। ফলে পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি সৃষ্টি হচ্ছে স্বাস্থ্যঝুঁকির। আক্রান্ত হচ্ছে মানুষের হার্ট, কিডনি, লিভার, স্নায়ু ও ত্বকের মতো গুরুত্ব অঙ্গ।  তাই বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তা এবং পরিবেশের সুরক্ষার জন্য টেকসই কৃষি ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে জৈব প্রযুক্তি কৃষির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সমাধান হিসেবে বিবেচনা করছেন কৃষিবিদরা। জৈব প্রযুক্তির মাধ্যমেই চাষাবাদে রাসায়নিক সার এবং কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে, প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে উৎপাদন বৃদ্ধি এবং পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব বলে মনে করছেন তারা। এ বিষয়ে দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলেছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডক্টর হাসানুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর জনসংখ্যা ক্রমবর্ধমান হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে যেভাবে জনসংখ্যা বাড়ছে, তাতে ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীর জনসংখ্যা ৯.৭ বিলিয়নে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে। এই জনসংখ্যাকে খাওয়ানোর জন্য আমাদের প্রচুর পরিমাণ খাদ্য উৎপাদন করতে হবে। এটি করা যাবে দুটি উপায়ে। প্রথমত ফসলি জমি বৃদ্ধি করে, দ্বিতীয়ত উৎপাদন বৃদ্ধি করে। তবে, কৃষি জমি বৃদ্ধি করা খুবই চ্যালেঞ্জিং। কারণ আমাদের দেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় কৃষি জমি ক্রমশ কমে যাচ্ছে। কৃষিজমির উপর স্থাপন করা হচ্ছে কলকারখানা। এছাড়া কিছু অন্যান্য চ্যালেঞ্জও রয়েছে যেগুলোর কারণে আমাদের কৃষি ফলন কমে যাচ্ছে। যেমন- জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, সমুদ্রতীরবর্তী অঞ্চলগুলোর লবণাক্ততা বৃদ্ধি, খরা, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, তাপমাত্রার বৃদ্ধি, এবং বৃষ্টিপাতের পরিবর্তিত ধরন। এতে কৃষি ফলনের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। তাছাড়া, পোকামাকড়, রোগবালাই, আগাছা ইত্যাদির কারণে আমাদের ফলন আরও কমে যাচ্ছে। তাই উৎপাদন বাড়াতে আমরা মনোকালচার  পদ্ধতিতে একক ফসল বার বার চাষ করছি এবং আধুনিক সেচ ব্যবস্থা ও রসায়নিক সার ব্যবহার করছি। এতে পরিবেশ দূষণ, পানি দূষণ, মাটি দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন ঘটছে! এখন প্রশ্ন করা যায়- তাহলে কীভাবে সমাধান করা সম্ভব? উপায় হলো, আমরা জৈব প্রযুক্তি  ব্যবহার করে সাসটেইনেবল কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারি। এর মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন প্রাকৃতিকভাবে সহনশীল ফসলের জাত তৈরি করতে পারি যা লবণাক্ততা, খরা, বন্যা এবং উচ্চ তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারি, পাশাপাশি কম পরিমাণে সার ও পেস্টিসাইড ব্যবহার করতে পারি। আবার বায়োটেকনোলজি ব্যবহার করে বিভিন্ন নতুন জাত উদ্ভাবন করতে পারি, যেমন, খরা সহনশীল, পোকামাকড় প্রতিরোধী, এবং রোগবালাই প্রতিরোধী জাত। এমনকি, অল্প পরিসরে বেশি ফলন পাওয়া যায় এমন জাতও আমরা তৈরি করতে পারি। এর পাশাপাশি, আমরা ফসলের পুষ্টিগুণ বৃদ্ধির জন্যও কাজ করতে পারি। যেমন, গোল্ডেন রাইস-এর মাধ্যমে ভিটামিন এ-এর চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া নতুন জিন এডিটিং প্রযুক্তি যেমন ‘ক্রিসপার’  ব্যবহার করে, আমরা আরও দ্রুত ফলনদায়ী ও সহনশীল ফসল উৎপাদন করতে পারি। এটি জিনের মাধ্যমে নতুন বৈশিষ্ট্য উদ্ভাবন করে, যেমন- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা পরিবেশের প্রতিকূল পরিস্থিতিতে টিকে থাকার ক্ষমতা বৃদ্ধি করা ইত্যাদি। এই সমস্ত পদক্ষেপগুলো একত্রিতভাবে আমাদের কৃষির ভবিষ্যত উন্নত করতে এবং আগামী প্রজন্মের জন্য খাদ্য সুরক্ষা, পুষ্টি নিরাপত্তা এবং খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা নিশ্চিত করে টেকসই কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।’

আরবি/এম এইচ এম

Link copied!