শিক্ষা জীবন মানেই নানারকম সংগ্রামের গল্প। যেখানে সবচেয়ে বেশি প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয় ব্যাচেলর নারী শিক্ষার্থীদের। প্রতিকূলতা, সংগ্রাম এবং মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে শুরু হয় তাদের শিক্ষাগত যাত্রা। পরিবার ছেড়ে লম্বা সময়ের এই সংগ্রামে তাদের কেবল শিক্ষা অর্জন নয়, করতে হয় নানা সামাজিক প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা। অনেক সময় পরিবারের আস্থার অভাব বা সামাজিক মানসিকতা তাদের পথকে কঠিন করে তোলে। তবে সেই কঠিন পথেই তারা এগিয়ে যায় স্বপ্ন বোনার দৃঢ় প্রত্যয়ে। মানুষ স্বপ্নে বাঁচে, কিংবা স্বপ্নই মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। তেমনই শিক্ষাজীবনের একটি ভাঙাগড়া স্বপ্নের গল্প দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের সঙ্গে শেয়ার করেছেন তেজগাঁও বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আইরিন ইসলাম হ্যাপি। তিনি বলেন,
‘আমি পড়াশোনার পাশাপাশি ভালো একটা চাকরি করার জন্য মূলত ঢাকায় এসেছি প্রায় তিন বছর আগে। পরিবারের স্বপ্ন ছিল, আমি একটি সরকারি নার্সিং কলেজে পড়াশোনা করব। সে অনুযায়ী নিজের সবটা দিয়ে প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, সরকারি কলেজে সুযোগ হয়নি। বেসরকারিতে সুযোগ পেয়েছিলাম, তবে তখন আর্থিক সমস্যার কারণে ভর্তি হওয়ার সাহস পাইনি। স্বপ্ন ভেঙে যায়! কমে যায় পড়াশোনার প্রতি আকর্ষণ। হয়তো পরিবার কিংবা আত্মীয়-স্বজন ভেবেছিল যে আমি সবটা দিয়ে চেষ্টা করিনি। কিন্তু আমার জায়গা থেকে আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি, যা কেবল আমিই জানি। এমনও দিন গেছে, ২৪ ঘণ্টায় আমি কেবল দুই ঘণ্টা ঘুমিয়েছি, আবার কখনো ঘুমাইওনি! পরীক্ষার পর বেশ আশাবাদী ছিলাম, কিন্তু ভাগ্যে ছিল না, কী আর করার! তারপর স্বপ্নটা ভেঙে যাওয়ার পর আমি নিজেও ভেঙে যাই।
কিছুদিন পড়াশোনা থেকে অনেক দূরে সরে গিয়েছিলাম। জেদ করে ফুল টাইম চাকরি শুরু করি। কিছুদিন একটা স্কুলে গেস্ট টিচার হিসেবে শিক্ষকতা করেছি, আবার কিছুদিন বসুন্ধরাতে চাকরি করেছি। এভাবে দিন কাটছিল। কিন্তু কিছুদিন পর আবার আমার মনে হলো যে, জেদ করে নিজেই নিজের ক্ষতি করছি। তারপর নতুন করে স্বপ্ন পূরণের অন্য পথ খুঁজতে লাগলাম। তেজগাঁও কলেজে অনার্সে ভর্তি হয়েছিলাম আগেই, যেটা পরিবারের কেউ জানতো না, পরবর্তীতে তারা জানতে পারে। তারপর পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে এখন দেশের বাইরে পড়াশোনার জন্য যেতে চাচ্ছি। ইউরোপের কোনো দেশে পড়াশোনা শেষ করে, ভালো একটি চাকরি করে আমি আমার ভাঙা স্বপ্নকে দ্বিগুণ করে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিব ইনশাআল্লাহ।’
আপনার মতামত লিখুন :