বড়দিন বা ক্রিসমাস একটি বৈশ্বিক উৎসব, যা মূলত খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তবে এখন বিশ্বের অন্যান্য ধর্ম ও সংস্কৃতির মানুষদের মধ্যেও বড়দিন উদযাপিত হয়। বাংলাদেশের মতো একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশেও বড়দিন একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব হিসেবে পালিত হয়। বাংলাদেশে এটি খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসবের পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক সুন্দর উদাহরণ হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশের খ্রিষ্টান সম্প্রদায় বড়দিন উপলক্ষে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করে। ঢাকাসহ সারা দেশের গির্জাগুলোতে এই দিনটি অত্যন্ত জাঁকজমকের সঙ্গে উদযাপিত হয়। মধ্যরাতের প্রার্থনা বা ‘মিডনাইট মাস’ বড়দিনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অনুসারীরা বিশ্বাস করেন, যিশু খ্রিষ্টের জন্ম উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত এই প্রার্থনা মানুষকে ভালোবাসা, শান্তি এবং মানবতার প্রতি উৎসর্গ করার শিক্ষা দেয়। গির্জাগুলোর ভেতরে এবং বাইরে সাজসজ্জার মাধ্যমে উদযাপনের মহিমা তুলে ধরা হয়। বড়দিনের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হলো এর সাজসজ্জা। খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের গির্জা, ঘরবাড়ি, এবং পাড়াগুলো ক্রিসমাস ট্রি, রঙিন লাইট এবং ঝলমলে মালা দিয়ে সজ্জিত করা হয়। এ ছাড়া দেশের বড় বড় শপিং মল, যেমন যমুনা ফিউচার পার্ক এবং বসুন্ধরা সিটি মল, বড়দিন উপলক্ষে বিশেষ সজ্জা করে। সেখানে সান্তা ক্লজের বড় মূর্তি এবং স্নোম্যানের প্রতিকৃতি শিশুদের মধ্যে আনন্দের উৎস হিসেবে দেখা যায়। এ ছাড়া পাড়ায়-পাড়ায় আলোকসজ্জা এবং সামাজিক উদযাপন বড়দিনের পরিবেশকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে।
উপহার বিনিময় বড়দিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। এটি পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধনের প্রতীক। গির্জা এবং স্কুলগুলোতে শিশুদের জন্য উপহার এবং মিষ্টি বিতরণ করা হয়। সান্তা ক্লজের চরিত্র শিশুদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ সৃষ্টি করে। পরিবার এবং বন্ধুরা একে অপরকে কেক, উপহার এবং শুভেচ্ছা জানিয়ে আনন্দ ভাগাভাগি করেন। বাংলাদেশের বড়দিনে ফলের কেকের চাহিদা অত্যন্ত বেশি। খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের পাশাপাশি অনেক মুসলিম পরিবারও কেক উপহার হিসেবে আদান-প্রদান করে। পোলাও, বিরিয়ানি, এবং ঐতিহ্যবাহী খাবারের আয়োজন উৎসবের আনন্দকে বাড়িয়ে তোলে।
বড়দিনে সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক মিলনমেলার আয়োজনও দেখা যায়। সংগীত, নাটক এবং বিশেষ অনুষ্ঠান বড়দিন উদযাপনকে আরও রঙিন করে তোলে। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বড়দিনের সন্ধ্যায় কনসার্ট এবং নাটকের আয়োজন হয়ে থাকে। এসব অনুষ্ঠানে শুধু খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষই নয়; অংশগ্রহণ করে সব ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষ। বড়দিনের একটি অনন্য দিক হলো, দরিদ্র এবং অসহায়দের প্রতি সহমর্মিতা। যিশু খ্রিষ্টের শিক্ষার প্রতিফলন হিসেবে দরিদ্রদের মধ্যে খাবার, পোশাক এবং অন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ করা হয়। এটি মানবতার প্রতি ভালোবাসার একটি উজ্জ্বল উদাহরণ।
আপনার মতামত লিখুন :