ঢাকা শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

বস্ত্রশিল্পে সাড়া ফেলেছে যে রঙ

আরফান হোসাইন রাফি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৪, ০৪:৫৬ পিএম

বস্ত্রশিল্পে সাড়া ফেলেছে যে রঙ

ছবি: সংগৃহীত

বিজ্ঞান বলে, রঙ মানুষের মস্তিষ্ক আকর্ষণ করে। মানুষের আচরণের নির্ধারক হিসেবে রঙের এবং বর্ণের অধ্যয়ন । এতে এমন গুণাবলী রয়েছে যা মানুষের মধ্যে নির্দিষ্ট আবেগ সৃষ্টি করতে সক্ষম। বয়স, লিঙ্গ এবং সংস্কৃতির উপর নির্ভর করে রঙের ব্যক্তিক প্রভাব আলাদা হতে পারে তবে সকল ক্ষেত্রেই রয়েছে এর ব্যবহার।  দৃশ্যশিল্প অনুযায়ী, বিভিন্ন রঙকে মিশ্রনের মাধ্যমে এক বা একাধিক নির্দিষ্ট রঙ তৈরি করা হয়। যার অন্যতম নিদর্শন ভেজিটেবল ডাই কিংবা প্রাকৃতিক ডাই। কাপড়ে ফ্যাশনে টাইডাই পুরনো হলেও, কাপড়ের গুনগত মান ধরে রেখে এই প্রক্রিয়া নিত্য নতুন রূপ নিয়ে হাজির হয়েছে বারবার। সুতি, খাদি, সিল্ক, হাফ সিল্ক, লিনেন, তসর, মসলিন, এন্ডি কটনসহ নানা ধরনের কাপড়েই করা হয় টাই ডাই। এমন কি নিজের হাতেও পছন্দের নকশা অনুযায়ী টাইডাইয়ের কাজ করতে পারেন। জামা, শাড়ি, কামিজ, ওড়না ছাড়াও বিছানার চাদর আর পর্দার জন্য এটি একটি ন্যচারাল আকর্ষণীয় পদ্ধতি। টাইডাই আসলে প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম ডাই দুই মাধ্যম ব্যবহার করেই করা হয়। তবে প্রাকৃতিক রঙে টাইডাইয়ের নকশা বেশি সুন্দর লাগে। কাপড় শক্ত করে বেঁধে আর রঙে ডুবিয়ে করা হয় বলেই একে বলা হয় টাইডাই। রুবি গজনবীরের হাত ধরে পুনর্জাগরণের পর বর্তমানে ভেজিটেবল ডাই ব্যাপক ভাবে সাড়া ফেলেছে বস্ত্র শিল্পে।  

চলুন জেনে নেয়া যাক ভেজিটেবল ডাইয়ের মাধ্যমে কাপড় রাঙানোর প্রক্রিয়া এবং উপকার—  

উপাদান নির্বাচন: ভেজিটেবল ডাই প্রস্তুতির জন্য বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করা যায়, যেমন পালং শাক, হলুদ, গাজর, বিট, ইত্যাদি। প্রতিটি উপাদান নির্দিষ্ট রঙের জন্য পরিচিত এবং প্রাকৃতিক রঙের কারণে কাপড়ের উপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব পড়ে। তাই ভেজিটেবল ডাই রঙের ক্ষেত্রে উপাদান নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 
প্রস্তুতির প্রক্রিয়া : প্রথমে নির্বাচিত উপাদানগুলো কেটে বা পিষে নেয়া হয়। তারপর পানি দিয়ে সেদ্ধ করা হয়, যাতে রঙের পদার্থ পানি থেকে বের হয়ে আসে।  রঙের গভীরতা বাড়ানোর জন্য ব্যবহার করা হয় লেবু বা ভিনেগার। 
কাপড়ের প্রস্তুতি: নির্বাচিত উপাদান পিষে নেয়া হলে কাপড়ের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয় । এক্ষেত্রে রঙের ভালো গ্রহণ যোগ্যতা নিশ্চিত করতে কাপড় ভালোভাবে ধোয়া হয়,যাতে কাপড়ে কোন প্রকার ময়লা বা তেল না থাকে। 
ডাই অ্যাপ্লিকেশন রঙের ব্যবহার: সকল প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর কাপড়কে প্রাপ্ত রঙের মধ্যে ডুবিয়ে রাখা হয় অথবা স্প্রে করা হয়। কখনো কখনো সৌন্দর্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কাপড়ের বিভিন্ন অংশ আলাদা আলাদা রঙে ডাই করা হয়।
ফিক্সিং: কাপড়টি রঙে ডুবানোর পর কিছু সময় অপেক্ষা করতে হয় যাতে রঙটি ভালোমতো শোষিত হয়। এরপর কাপড়টিকে ঠাণ্ডা পানিতে ধোয়া হয় এবং শুকাতে রাখা হয়।

এইভাবেই তৈরি হয় ভেজিটেবল ডাই কিংবা প্রাকৃতিক রঙে রাঙানো একটি নান্দনিক কাপড়। যা সাধারণত প্রাকৃতিক, নরম এবং এক্সক্লুসিভ রঙের বৈচিত্র্য প্রদান করে। এ কাপড়ে টেকসই নির্ভরতা ছাড়াও রয়েছে নানা উপকারি দিক।এতে কোনো রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার না করায় ত্বকের জন্য বেশ নিরাপদ; পাশাপাশি কমায় অ্যালার্জি বা চর্মরোগের সম্ভাবনা। তবে ডাই কাপড়ে টেকসই বাড়াতে দরকার সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ। কিভাবে ভেজিটেবল ডাই কাপড়ের রক্ষণাবেক্ষণ করা যায় সে গল্প করবো আরেকদিন।
 

আরবি/ আরএফ

Link copied!