ঢাকা শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

দূরত্বের যন্ত্রণা ও দায়িত্বের টানাপোড়েন

মির্জা হাসান মাহমুদ

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৪, ০৪:১২ পিএম

দূরত্বের যন্ত্রণা ও দায়িত্বের টানাপোড়েন

ছবি: সংগৃহীত

প্রবাস জীবনে পরিবারের থেকে দূরে থাকা একটি চিরন্তন বাস্তবতা। কাজের জন্য কিংবা আর্থিক স্বচ্ছলতার খোঁজে অনেকেই নিজের দেশ ছেড়ে প্রবাসে চলে যান। প্রথমদিকে এই সিদ্ধান্ত নতুন আশা ও উদ্দীপনা নিয়ে আসে, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবার ছেড়ে দূরে থাকার যন্ত্রণা বাড়তে থাকে। মানসিকভাবে এই দূরত্ব শুধুমাত্র ব্যক্তি নয়, পুরো পরিবারের উপর প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে প্রবাসী বাবা-মা, যারা নিজেদের সন্তানের শৈশব ও কৈশোরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত মিস করেন, তাদের জীবনে এই দূরত্ব এক গভীর শূন্যতার সৃষ্টি করে।
প্রবাসে থাকার কারণে প্রতিদিনকার পরিবারিক আনন্দ-দুঃখ থেকে দূরে থাকা যেমন কষ্টদায়ক, তেমনি এর সঙ্গে যোগ হয় দায়িত্বের টানাপোড়েন। অনেক প্রবাসী দীর্ঘদিন পরিবার থেকে দূরে থাকার কারণে অপরাধবোধেও ভোগেন। সন্তানের বড় হওয়ার প্রতিটি ধাপ, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা কিংবা বৃদ্ধ বাবা-মার সেবা করার মতো জরুরি কাজগুলো থেকে তারা বঞ্চিত হন। অন্যদিকে, প্রবাসীরা কাজের চাপে নিজেদের সময় দিতে পারেন না এবং অনেকেই দূরে থেকে পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় দায়িত্বগুলো পালন করতে ব্যর্থ হন।  
তবে প্রযুক্তির কল্যাণে এই দূরত্ব কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব হচ্ছে। ফোন কল, ভিডিও চ্যাটের মাধ্যমে পরিবারের সাথে যোগাযোগ রাখা আজকের যুগে তুলনামূলক সহজ। তবুও, শারীরিক উপস্থিতির অভাব পূরণ করা সম্ভব নয়। বিশেষ করে সন্তানদের লালন-পালনে এই দূরত্ব প্রভাব ফেলে। সন্তানরা অনেক সময় বাবার বা মায়ের সাথে মানসিকভাবে দূরত্ব অনুভব করে, যা সম্পর্কের বন্ধনকে কিছুটা নরম করে দেয়। তবে অনেক প্রবাসী বাবা-মা নিজেদের দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেন দূর থেকে; নিয়মিত ফোনের মাধ্যমে সন্তানের সাথে সংযোগ রাখা, পড়াশোনা ও দৈনন্দিন জীবনের খবর রাখা, এমনকি সন্তানদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে দূর থেকে সহযোগিতা করা তাদের অন্যতম প্রচেষ্টা।
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেও এই দূরত্ব বেশ বড় প্রভাব ফেলে। শারীরিক দূরত্বের কারণে মানসিক দূরত্ব তৈরি হতে পারে, যা সম্পর্কের স্থিতিশীলতাকে চ্যালেঞ্জ করে। সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখার জন্য অনেক দম্পতি নিরলস পরিশ্রম করেন, যেমন: নিয়মিত যোগাযোগ রাখা, বিশেষ উপলক্ষে ভিডিও কলের মাধ্যমে একসাথে সময় কাটানো, এবং নিজেদের মধ্যে বিশ্বাস ও সমঝোতার উন্নয়ন করা।
পরিবারের জন্য ত্যাগ স্বীকার করে প্রবাসে কাজ করলেও প্রবাসীরা সর্বদা চেষ্টা করেন পরিবারকে সুরক্ষিত ও সুখী রাখতে। যদিও দায়িত্ব ও সম্পর্কের এই টানাপোড়েন মাঝে মাঝে অসহনীয় হয়ে ওঠে। প্রবাসীরা আশা নিয়ে দিন পার করেন যে, একদিন তারা পরিবারের কাছে ফিরবেন এবং দূরত্বের যন্ত্রণা পেরিয়ে নতুনভাবে জীবনের স্বাদ উপভোগ করবেন।

আরবি/ আরএফ

Link copied!