ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৪
মানসিক স্বাস্থ্য

মনের প্রশান্তিতে ছবি আঁকা

তাহমিনা বৃষ্টি

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৪, ২০২৪, ০৪:২২ পিএম

মনের প্রশান্তিতে ছবি আঁকা

ছবি: সংগৃহীত

আমার মন ভালো নেই, কষ্ট লাগছে খুব, হতাশ হয়ে পড়েছি, কিছুই ভালো লাগছে না, কাউকে কিছু বলতে পারছি না, মানুষ এতো প্রশ্ন করে কেন, আমার জীবনে এমন হলো কেন, অস্থিরতা যাচ্ছেই না- এ রকম নানা মানসিক জটিলতায় ভুগছে কেউ না কেউ। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় ছবি আঁকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ প্রসঙ্গে রূপালী বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলেছেন চিত্রশিল্পী ও উন্নয়নকর্মী তাহেরা তুলি। পাঠকদের জন্য তুলে ধরেছেন তাহমিনা বৃষ্টি
মনের প্রশান্তির জন্য ছবি আঁকা কী ধরনের ভূমিকা রাখে, এ প্রসঙ্গে তাহেরা তুলি বলেন, ছবি আঁকা মনের প্রশান্তির একটা খোরাক। কিছু সৃষ্টিশীল কাজের মধ্যে থাকা বা সৃজনশীল কিছু করা বেশ পরিতৃপ্তির একটা বিষয়। যারা ছবি আঁকে তারা সবাই এই পরিতৃপ্তির আশ্বাস পেয়েছে বলে ছবি আঁকার মাঝে এক ধরনের আনন্দ খুঁজে পায় তাই ফাঁক পেলেই একটু ছবি এঁকে সেই আনন্দটা খুঁজে।  মূলত একটু ভালো থাকার জন্য এই ছবি আঁকাকে একটা মাধ্যম হিসেবে খুঁজে নেয় মানুষ। এই ভালো থাকা বা নিজেকে ভালো রাখার জন্য যে চেষ্টা, সেটা মানসিক স্বাস্থের সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে ছবি আঁকা বা কোনো সৃজনশীল কাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। ছবি আঁকা শুধুমাত্র মানুষের সৃজনশীলতার বহির্প্রকাশ করে না। এটা মানসিক শান্তি, আবেগ প্রকাশের একটা মাধ্যম ও আত্ম-উপলব্ধির জন্য সহায়তা করে। 
তিনি আরও বলেন, ছবি আঁকার সময় যে মনোযোগ দিতে হয় বা দেয়, তা আমাদের মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমাতে কাজ করে। আবার একটা ছবি অঙ্কন আমাদের আবেগ প্রকাশেও সহায়তা করে। যেমন ছবিতে রঙ এর ব্যবহার দেখে আমরা ছবিটার ভাব বুঝতে পারি আবার চিত্রকরের মানসিক অবস্থাও বোঝা যায় সেই অংকিত চিত্র দেখে। আবার যখন একজন শিল্পী একটা ছবি আঁকা শেষ করে তখন একটা আত্মতৃপ্তি অনুভব করে, সেটা যেকোনো বয়সেরই মানুষ হোক না কেন। এই আত্মতৃপ্তি একজন ব্যক্তির আত্মবিশ্বাস বৃদ্বিতেও বিশেষ সহায়তা করে। এর ফলে অন্য কোন কাজে অধিক সময় মনোনিবেশে ভূমিকা রাখে যা মানসিক চাপ কমাতে কাজ করে। বিভিন্ন মেডিকেল কেসে দেখা যায় ছবি আঁকাকে আর্ট থ্যারাপি হিসেবেও ব্যবহার করে এবং এটি প্রমাণিত যে ছবি আঁকা মানসিক স্বাস্থ্য উন্নতিতে সহায়তা করে। শিশুদের মেধা বিকাশে, মানসিক চাপ বা অস্থিরতা কমাতে, উদ্বেগ দূর করতে যে কোনো বয়সের মানুষ ছবি আঁকা একটা মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করতে পারেন। এই ছবি আঁকার মাধ্যমে শুধু মানসিক স্বাস্থ্য উন্নতিতে কার্যকর নয়, এর মাধ্যমে মানুষ নিজের ভেতরের প্রতিভা ও চিন্তার গভীরতা প্রকাশ করতে পারে। 
কী ধরনের ছবি আঁকতে পছন্দ বেশি, এমন প্রশ্নের জবাবে তাহেরা তুলি বলেন, আমি সাধারণত নিরিক্ষামূলক এবং বিমূর্ত ছবি আঁকতে পছন্দ করি। কোনো ঘটনা বা কোনো দৃশ্য আমার মনে যে বিমূর্ত আকারে ধরা দেয়, তাই চিত্রপটে ফুটিয়ে তুলতে আমার ভালো লাগে। ছবি আঁকার ক্ষেত্রে আমি যে কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকি বা যে পরিবেশে অবস্থান করি তাই আমার চিত্রপটে তুলে ধরার চেষ্টা করি। মূলত কাজের সুবাদে একজন চিত্রশিল্পী হিসেবে আমার কাজ করার সুযোগ হয়েছে বিভিন্ন ক্ষুদ্র সম্প্রদায় বা আদিবাসীদের সঙ্গে। এ ছাড়াও আমি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। তাই ছবি আঁকার বিষয়বস্তুও কখনো তারা হয়ে গিয়েছে। অথবা যে প্রকৃতির মাঝে অবস্থান করছি তা দেখেই যা মনের মাঝে এসেছে সেটাই চিত্রপটে তুলে ধরি। 
মন খারাপের সময় তাহেরা তুলি কী ধরনের ছবি আঁকেন, এ বিষয়ে এই চিত্রশিল্পী বলেন, মন খারাপের সময় আমি সব সময় প্রকৃতির ছবি আঁকতে পছন্দ করি নীরিক্ষাধর্মী বা বিমূর্ত ধারায়। প্রকৃতি নিজেই নানান রঙে রঙিন। তাই যখন প্রকৃতি নিয়ে আঁকা হয় তখন অনেক রঙের ব্যবহার আমার মন ভালো করে দেয়। রঙ নিয়ে খেলতে পারার যে সুন্দর মুহূর্ত তৈরি হয়; প্রকৃতির ছবি আঁকতে সে মুহূর্তটি আমার কাছে খুব বিশেষ হিসেবে রয়ে যায়।  

আরবি/ এম এইচ এম

Link copied!