ঈশ্বর থাকেন ওই ভদ্রপল্লীতে। এখানে তাহাকে খুঁজে পাওয়া যাইবে না।- কথাশিল্পী মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাসের এই সংলাপ যেন তাদের মনের ভেতরে বেজে উঠে। করুণ স্বরে কেঁদে চলেন তারা। দীর্ঘদিন ক্র্যাচ, লাঠি কিংবা বাঁশের সাহায্যে চলেন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ পা হারিয়েছেন বিভিন্নভাবে। তাদের মনে আশার আলো জাগাতে এদেশে অনেক আগে থেকেই চলছে কৃত্রিম পা সংযোজন। এর মাধ্যমে তারা অনেকেই ফিরে আসতে পারে স্বাভাবিক জীবনে। কৃত্রিম পা সংযোজন নিয়ে কাজ করছে দেশের অনেক প্রতিষ্ঠান। রাজধানীর ডাইন্যামিক লিম্ব সেন্টারের পরিচালক (বিক্রয় ও বিপণন) আব্দুস সালাম বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে যাদের পায়ের যে কোনো অংশ কেটে ফেলা হয়। আমরা তাদের জন্য কৃত্রিম পা সংযোজন করে থাকি। বিভিন্ন ধরনের কৃত্রিম পা রয়েছে- কোমর বরাবর, হাঁটুর উপরে, হাঁটু বরাবর, হাঁটুর নিচে, গোড়ালি বরাবর এবং পায়ের পাতা কাটা। এই কৃত্রিম পাগুলো হালকা এবং টেকসই, খালি পায়ে অথবা জুতাসহ ব্যবহার করা যায়, এটি পানিতে সহজে নষ্ট হয় না, সহজে পরা, খোলা এবং পরিষ্কার করা যায়, সহজে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করা যায়, দেখতে প্রায় স্বাভাবিক পায়ের মতো। এই কৃত্রিম পা ব্যবহার করে দৈনন্দিন প্রায় সকল কাজকর্ম করা সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, ২০০১ সালে যাত্রা শুরু করে ডাইনামিক লিম্ব সেন্টার। আমাদের প্রধান কাজ হলো কৃত্তিম হাত-পা সংযোজন করা; যাদের বিভিন্ন দুর্ঘটনায় হাত-পা হানি ঘটে বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাদের কৃত্রিম হাত-পা স্থাপনের মাধ্যমে আগের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আনা। বিভিন্ন কারনে হাত-পা হারানো বা অঙ্গহানি হতে পারে। সড়ক দুর্ঘটনায় হাত পা হারাতে পারে, ডায়াবেটিকসের কারণে হাত-পা অবশ হতে পারে, ক্যান্সারের কারণে পা কেটে ফেলে দেওয়া লাগতে পারে। একটা পা কাটার পর কেউ চাইলে আড়াই থেকে তিন মাসের মধ্যে কৃত্রিম পা লাগাতে পারেন। একটা পা ছাড়া অনেক মানুষই ঠিকভাবে চলাফেরা করতে পারে না। কৃত্রিম পা সংযোজনের ফলে তারা অনেকটা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে।
আব্দুস সালাম বলেন, আমাদের সেন্টারে যখন কেউ আসে, তাদের মন খারাপ থাকে। অনেকে আবার দ্বিধায় থাকে আমাদের সেন্টার থেকে ঠিকভাবে সেবা পাবেন কিনা। আবার যাওয়ার সময় খুব হাসিখুশি থাকে। এ জন্য আমরা চেষ্টা করি, খুব স্বল্প খরচে যেন একজন কৃত্রিম পা সংযোজন করতে পারে। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে এবং দীর্ঘ মেয়াদি হয়। আমরা ২০০৬ সাল থেকে জার্মানির আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় সেবা দেওয়া শুরু করি। সেন্সর, ইলেকট্রিক, মেকানিক, বায়োনিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ব্যবস্থা আমরা এনেছি। একজন রোগির যদি দুই পা নাও থাকে, তাও তারা সুন্দরভাবে চলাফেরা করতে পারবে। একজন রোগী আমাদের এখানে আসার পর কীভাবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাবে, তিনি পুরোপুরি ঠিক না হওয়া পর্যন্ত সম্পূর্ণ দায়-দায়িত্ব আমাদের।
আপনার মতামত লিখুন :