পার্বত্য চট্টগ্রাম যদি হয় প্রকৃতির অপরূপ স্বর্গরাজ্য। তাহলে বাঁশখালী হবে তার অঙ্গরাজ্য। নান্দনিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এ উপজেলা যেন নৈসর্গিক সৌন্দর্যের স্বপ্নভূমি। পূর্বে পাহাড়, পশ্চিমে বিশাল জলরাশির বঙ্গোপসাগর। দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত যেন এই উপজেলার প্রাণ। দক্ষিণে মডেল উপজেলা পেকুয়া। বাঁশখালীর ভূ-ভাগ চিরে উত্তরে প্রবাহিত স্রোতধারা শঙ্খ নদী। উত্তর শঙ্খ নদী হতে দক্ষিণ অভিমুখে জলকদর খাল। কোথাও ফাঁড়িখাল কোথাও বা জলকদর খালের শাখা জলরাশি বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন কুতুবদিয়া প্রণালিতে গিয়ে মিশেছে। পুকুরিয়া চাঁদপুর-বেলগাঁও চা বাগান, ২৫ কি. মি দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত, বাঁশখালী ইকোপার্ক, সাগর উপকূলের কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র, লবণ মাঠ, ফসলি জমি, সোনালী ধানের কৃষি ভাণ্ডার, ঐতিহাসিক কাতেবী জামে মসজিদ, খালেদার টিলা, বখশী হামিদ মসজিদ, মলকা বানুর দীঘি ও মসজিদ, মনু মিয়াজী মসজিদ, কালীপুরের বিখ্যাত লিচু, বাঁশখালী উপকুল ঘেরা প্যারাবন যেন এই উপজেলাকে গড়ে তুলেছে নৈসর্গিক সৌন্দর্যের স্বপ্নভূমিতে।
বাঁশখালী সমুদ্র সৈকত
বাঁশখালী সমুদ্র সৈকত যেন বাংলাদেশের একটি অফুরন্ত অপার সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্পের নাম। বাঁশখালী উপকূলের ছনুয়া, গণ্ডামারা, কাথরিয়া, সরল, বাহারছড়া, খানখানাবাদ ইউনিয়নের সমন্বয়ে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা প্রায় ২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এক সমুদ্র সৈকত। কতই না সুন্দর এই সৈকত। সৈকতের পূর্ব পাশে সারি সারি ঝাউ গাছ। উপকূল জুড়ে ঘন ঝাউ বাগান, কেওড়া ও বাইন গাছের প্যারাবন যেন এক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। সৈকতে জোয়ার-ভাটার ঢেউয়ের শব্দ যেন পর্যটকদের মন কাড়া শব্দ। সাগরের উপকূল জুড়ে বেড়ে ওঠা কেওড়া ও ঝাউবনে ঘেরা সবুজ এক দৃষ্টিনন্দন সৈকত ঘিরে চলে দিবানিশি জোয়ার-ভাটার খেলা। নানা সৌন্দর্যে মুখরিত বাঁশখালী সমুদ্র সৈকত যেন দেশের পর্যটন শিল্পের নতুন এক সম্ভাবনাময় নাম। ২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সমুদ্র সৈকত যেন দেশের দ্বিতীয় কক্সবাজার। পর্যটনপ্রেমীদের কাছে ছনুয়া, খানখানাবাদ ও বাহারছড়া পয়েন্ট গুরুত্বপূর্ণ স্পট হিসেবে পরিচিত। ছুটির দিনে পর্যটকদের উপস্থিতিতে মুখরিত হয়ে ওঠে এসব স্পট। সমুদ্র উপকূলের সৌন্দর্য ও স্থানীয় মানুষের আতিথেয়তা যে কোন পর্যটনপ্রেমীদের মুগ্ধ করবে।
চাঁদপুর-বেলগাঁও চা বাগান
চাঁদপুর-বেলগাঁও চা বাগান বাঁশখালী উপজেলার পুকুরিয়া ইউনিয়নে অবস্থিত। পূর্ব পুকুরিয়ার চাঁদপুর-বেলগাঁও পাহাড়ি এলাকার ৩ হাজার ৪৭২.৫৩ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত চা বাগানটি বর্তমানে বাংলাদেশে মানসম্মত চা উৎপাদনে শীর্ষে পাঁচে অবস্থান করছে। পাতার ভাল কোয়ালিটি, গুণগতমান, পুষ্টিগুণসহ ভালো দামের জন্য বেশ সুনাম রয়েছে সিটি গ্রুপের মালিকানাধীন এ চা বাগান’টির। চা ছাড়াও পর্যটকের চাহিদার শীর্ষে এই চা বাগান। প্রতিদিন দূর দুরন্ত থেকে আগত পর্যটকে মুখরিত থাকে বাগানটি। চির সবুজের বিশাল বিচরণ ক্ষেত্র এই চা-বাগানটি দেশের অর্থনীতিতে যেমন ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। তেমনি পর্যটকের কাছে দর্শনীয় স্পটের জায়গা হিসেবে পরিচিত লাভ করেছে। ১৯১২ সালে চা বাগানটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বৃটিশ আমলে ভারতের কুণ্ডু কোম্পানি এই বাগানের কাজ শুরু করে। তবে রেকর্ড পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, লট চাঁদপুর ও লট হল নামে দুটি লটে বিভক্ত চাঁদপুর-বেলগাঁও চা বাগানটি ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর থেকে মালিকানা অব্যবস্থাপনার সম্মুখীন হয়ে পরিত্যক্ত ছিল। এরপর ১৯৮৫ সালে আবার চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্বকে) মাধ্যমে চা-বোর্ড প্রায় ৮ (আট) একর জমির উপর চা-চাষ শুরু করে। অতপর মাত্র ৮ (আট) একর চা-বাগানটি বাংলাদেশ চা-বোর্ড ১৯৯২ সালের মে মাসের ৫ তারিখে স্বাক্ষরিত চুক্তিপত্র অনুযায়ী চাঁদপুর বেলগাঁও চা-বাগানটি ব্যবস্থাপনার জন্য জনাব রাগীব আলীর স্বত্বাধিকারী ব্রাক কোম্পানীর নিকট হস্তান্তর করেন। বর্তমান এই চা-বাগান টি সিটি গ্রুপের মালিকাধীন। বর্তমান চাঁদপুর-বেঁলগাও চা বাগানে বনভোজন, শিক্ষা সফরসহ নানা অনুষ্ঠান আয়োজন ছুটে আসে পর্যটকরা। এই চা বাগানের চারদিকে উঁচু-নিচু ও ঢালু পাহাড় জুড়ে সারি সারি চা-গাছ যেন এক সৌন্দর্যের পাহাড়।
উপকূলীয় লবণ মাঠ
বাঁশখালী উপজেলা লবণ উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। গ্রীষ্মকালে বাঁশখালী উপকুলীয় এলাকার মানুষ ব্যস্ত হয়ে পড়ে লবণ উৎপাদনে। উপজেলার ছনুয়া, শেখেরখীল, পশ্চিম পুঁইছড়ি, পশ্চিম চাম্বলের ডেপুটিঘোনা, শীলকূপের মনকিচর, পশ্চিম সরল, গণ্ডামারা, বাহারছড়া, খানখানাবাদ উপকূলের ১৯ হাজার হেক্টর জায়গায়জুড়ে পুরোদমে চলে লবণ উৎপাদন। তিন থেকে চার মাস স্থায়ী হয় এই লবণ মাঠ। লবণ মাঠের শ্রমিকদের কারুকার্য ও লবণ উৎপাদন টেকনিক-ক্যাটাগরি যেন এক নান্দনিক সৌন্দর্য জলন্ত শিখা।
চলবে..
লেখক: রিয়াদুল ইসলাম রিয়াদ, গণমাধ্যমকর্মী ও শিক্ষার্থী
পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
আপনার মতামত লিখুন :