ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারি, ২০২৫

কৃষকের স্বপ্নে কুয়াশার হাতছানি

মাহফুজার রহমান মাহফুজ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৮, ২০২৫, ০৩:৩৪ পিএম

কৃষকের স্বপ্নে কুয়াশার হাতছানি

ফাইল ছবি

দেশের উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষা উপজেলা ফুলবাড়ী। এই উপজেলায় নেই কোনো কলকারখানা। এখানকার বেশিরভাগ মানুষের জীবন-জীবিকা কৃষিনির্ভর। উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে উপজেলায় প্রায় ৪৩ হাজার কৃষক পরিবার রয়েছে। এসব পরিবার সারা বছরই জমিতে চাষাবাদ করে সচল রাখেন, জীবন-জীবিকার চাকা। জমিতে চাষাবাদ করতে গিয়ে খরা বন্যাসহ নানা প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করতে হয় এখানকার কৃষকদের। এ বছরও রবি মৌসুমের চাষাবাদ ও শীতকালীন সবজি চাষ করতে গিয়ে নানা প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই চলছে কৃষকদের। ঘন কুয়াশা আর কনকনে ঠান্ডায় ব্যাহত হচ্ছে চাষাবাদ। পাশাপাশি বাজারে কৃষকের উৎপাদিত ফসলের আকস্মিক দরপতনে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে কৃষকের কপালে। তবুও অদম্য মনোবল নিয়ে কৃষকেরা নানা প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করছেন। এ লড়াই সৃষ্টির, এ লড়াই তাদের জীবন-জীবিকায় টিকে থাকার লড়াই। কৃষকদের আশা, অচিরেই সদয় হবে প্রকৃতি। বাজারে মিলবে ফসলের ন্যায্যমূল্য। টিকে থাকার লড়াইয়ে জয় হবে তাদেরই।
উপজেলার ঘোগারকুটি গ্রামের কৃষক আজগার আলী বকসী। ৮০ বছর বয়সী এ কৃষক জমিতে চাষাবাদ করেই সচল রেখেছেন তার জীবন-জীবিকার চাকা। এ বছর তিনি জমিতে ভুট্টা, লাউ এবং বেগুনের আবাদ করেছেন। তিনি বলেন, ‘৫ বিঘা জমিতে ভুট্টা আবাদ করেছি। গত কয়েকদিন ধরে ঘন কুয়াশার কারণে খেতের উন্নতি দেখছি না। খেতে নানা রোগবালাই দেখা দিয়েছে। ফসল বাঁচাতে বিভিন্ন বালাইনাশক দিতে হচ্ছে। এতে আবাদে খরচ বাড়ছে হু হু করে। ঘন কুয়াশার কারণে লাউ ও বেগুন খেতে পচন রোগ দেখা দিয়েছে। ফলে ফলন কমে গেছে। কুয়াশার প্রকোপ এ রকম থাকলে আবাদে লোকসানের শঙ্কা দেখছেন তিনি। তবে তার আশা, অচিরেই ঝলমলে রোদ উঠবে। আর তাতে দূর হবে লোকসানের ভয়।
শাহবাজার এলাকার কৃষক শাহজাহান আলী জানান, ‘তিনি এ বছর প্রায় ৭ একর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যে বীজতলায় ধানবীজ বপন করেছেন। ঘন কুয়াশার কারণে তিনি বীজতলা নিয়ে শঙ্কায় আছেন। কুয়াশা ও কনকনে ঠান্ডায় বীজতলার ধানের চারা সাদা হয়ে যাচ্ছে। বেশ কয়েকবার ওষুধও দিয়েছেন। তবুও ধানের চারা সুস্থ-সবল হচ্ছে না।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের চন্দ্রখানা গ্রামের কৃষক বাদশা সরকার। এবারে ফুলকপির চাষ করে মন ভালো নেই তার। কারণ একদিকে শীতের প্রকোপ অন্যদিকে বাজারে কমে গেছে ফুলকপির দাম। অনেকটা  আক্ষেপের সুরে তিনি বলেন, বাজারে সার, বীজ, কীটনাশক সবকিছুর দাম বেড়েছে। কিন্তু আমাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য দাম নাই। বাজারে পানির দরে ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে। এত কষ্ট করে আবাদ করি। আমাদের লাভ কি? এবারে আবাদ করে লোকসান হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াসমিন জানান, ‘উপজেলার এবারে রবি মৌসুমে ২ হাজার ১৭৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টা, ৩ হাজার ৫ হেক্টর জমিতে সরিষা ও ১৯৫ হেক্টর জমিতে গম আবাদ হচ্ছে। ৯৫ হেক্টর জমিতে বেগুন, ৪৫ হেক্টর জমিতে মিষ্টি আলু, ৫৫ হেক্টর জমিতে রসুন, ১ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে আলু এবং ১ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন শাক-সবজির চাষ হচ্ছে। তাছাড়া বোরো মৌসুমে চাষাবাদের জন্য ৫৫৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে উপজেলাজুড়ে ঘন কুয়াশা এবং ঠান্ডার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে চাষাবাদের জন্য কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। খুব শিগগিরই আমরা ভালো কিছু একটা করতে পারব ইনশাআল্লাহ।’

 

ফুলবাড়ী, (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি

আরবি/ এম এইচ এম

Link copied!