ঢাকা রবিবার, ০৫ জানুয়ারি, ২০২৫

শিক্ষকতা ছেড়ে নারী উদ্যোক্তা

আরফান হোসাইন রাফি

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২, ২০২৫, ১২:১০ পিএম

শিক্ষকতা ছেড়ে নারী উদ্যোক্তা

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

‘কোনকালে একা হয়নিকো জয়ী, পুরুষের তরবারি; প্রেরণা দিয়েছে, শক্তি দিয়াছে, বিজয়ালক্ষ্মী নারী।’ লিখেছিলেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, কিন্তু বিশ্বাস করেছিল ক’জন? তাই তো নারীরা এখন পরনির্ভরশীলতা বেরিয়ে এসেছে। আমিত্বের উপর সর্বোচ্চ জোর দিয়ে ঘরে বাইরে, ব্যবসা-বাণিজ্যে সমান তালে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। কেউ কেউ এখনো করে যাচ্ছে, প্রয়োজনে ছেড়ে আসছে সম্মানের নানা পেশা। তেমনই একজন নারী নরসিংদী জেলার মাধবদী শহরের বাসিন্দা সামসুর রহমান এবং সখিনা বেগমের মেয়ে মাসুমা শিপন। পেশায় ছিলেন সহকারী শিক্ষক। কিন্তু নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার তীব্র আকাঙ্ক্ষা তাকে বানিয়েছে উদ্যোক্তা। দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন,

‘আমার ছোটকাল থেকে স্বপ্ন ছিল নিজে কিছু একটা করব, চাকরি হোক বা অন্য কিছু। কিন্তু সব মিলিয়ে হয়ে উঠেনি। তারপর যখন কোভিড-এর সময় দেখলাম নারীরা ঘরে বসেই নানা ধরনের কাজ করছেন। নিজ উদ্যোগে হয়ে উঠছেন উদ্যোক্তা। তখন আমারও কৌতূহল জাগলো কিছু একটা করার। তারপর দেখলাম যে আমি কী পারি? মনে হলো নরসিংদীর ঐতিহ্যবাহী নকশিপিঠা খুব ভালো পারি। তারপর শুরু করলাম নতুন যাত্রা। ব্যবসাকে কিছুটা ঝুঁকিমুক্ত করার জন্য পোর্টফোলিও কাঠামোতে নকশিপিঠার পাশাপাশি শুরু করলাম ড্রেস এবং কেকের ব্যবসা। সবগুলোই আমি সোশ্যাল মিডিয়ায় অনলাইনে, ঘরেই বসে করি। আলহামদুলিল্লাহ, নরসিংদীতে আমার ভালো একটা জায়গা তৈরি হয়েছে। এখন স্বপ্ন দেখি, এটি সারা দেশে ছড়িয়ে যাক। এর জন্য যতটা পরিশ্রম করা দরকার, আমি করব ইনশাআল্লাহ।’

যোগ করে তিনি আরও বলেন, ‘আমি মূলত স্কুলে শিক্ষকতা করতাম। সাবিকুন্নাহার বিদ্যানিকেতনে প্রায় ৫-৬ বছর সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত ছিলাম। তারপর ২০১৬ সালে, স্বামী প্রবাসে চলে যাওয়ার পর, পরিবারের প্রয়োজনে শিক্ষকতা ছেড়েছি। তবে শিক্ষকতা ছাড়ার পেছনে আরেকটা বড় কারণ ছিল নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা। নারী অধিকার নিশ্চিত করার জন্য কাজ করা। আসলে আমাদের দেশে এখনো নারীদের দুর্বল ভাবা হয়। তা-ই ঘরে-বাইরে নারীরা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার তীব্র লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। অনেকে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে দেখিয়েছে। আমিও সেই পথে তাদের সহযোগী হওয়ার চেষ্টা করেছি। সম্মানের একটা কাজ শিক্ষকতা হলেও, এখন আমি যা করছি, এখানে স্বাধীনতা আছে, আনন্দ আছে, তৃপ্তি আছে। যেসব নারীরা সামান্য চাকরি না হওয়ার কারণে ভেঙে পড়ে, তাদের আমি ব্যক্তিগতভাবে সাজেস্ট করব, নিজ উদ্যোগে নিজেকে স্বাবলম্বী করুন। আপনিও পারবেন, যেমন- আমরা পেরেছি। কারণ এখন ঘরে বসেই সুযোগ আছে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার। তা-ও কাজের ফাঁকে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় দিলেই ভালো একটা উপার্জন করা সম্ভব। আমি প্রতিদিন দুই ঘণ্টা শ্রম দেই; কেউ যদি ভালো একটা সময় এখানে ব্যয় করে, তারা মিনিমাম ৫০ হাজার থেকে শুরু করে লাখ টাকা ইনকাম করতে পারবে ইনশাআল্লাহ। সবশেষে বলতে চাই, সব নারীরা প্রতিষ্ঠিত হোক; এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ সমাজ গড়ে উঠুক।’

আরবি/ আরএফ

Link copied!