ঢাকা রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

দুর্গম পথে শান্তির ফোয়ারা

আরফান হোসাইন রাফি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৪, ০১:২৯ পিএম

দুর্গম পথে শান্তির ফোয়ারা

ছবি: ইন্টারনেট

জীবনানন্দের রূপসী বাংলার শেষ কোথায়? এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে প্রকৃতি তার মাথা ঝেঁকে বেরিয়ে আসে দ্বিগুণ রূপে; কখনো নদী আবার কখনো বা পাহাড়ের বুক বেয়ে। তাইতো কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়রা মন খারাপের সময়টুকু কাটাতে চান ঝর্ণার পাশে। যেখানে সঙ্গতি দেয় জলের চঞ্চল শব্দ আর চোখের সামনে হু-হু করে পিছিয়ে যেতে থাকে মন খারাপের সময়।

এমনই একটি ঝর্ণার সন্ধান দিতে গেলে বলতে হয়, ঝর্ণা রাণী খ্যাত খৈয়াছড়ার কথা। জনপ্রিয় এই ঝর্ণাটি চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার খৈয়াছড়া ইউনিয়নের বড়তাকিয়া বাজারের উত্তর পার্শ্বে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ৪.২ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত। প্রকৃতির নান্দনিক তুলিতে আঁকা এই ফোয়ারার প্রবেশ পথ থেকে মূল ধারার দেখা পেতে  হাঁটতে হয় প্রায় মিনিট চল্লিশের পথ, যেখানে সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে পদে পদে বিপদ। আঁকা-বাঁকা রাস্তা, বাঁশের সাঁকো, ক্ষেতের আইল এবং ঝিরিপথ পেরিয়ে যখন ঝিমিয়ে পড়ে ক্লান্ত শরীর তখনই কানের কাছে ভেসে আসে জলধারার কল কল শব্দ। সেই শব্দের জের ধরে সামনে আগালেই পাওয়া যায় ঝর্ণার দেখা। সেখানে কিছুটা জিড়িয়ে পর্যটকরা আবার শুরু করে পথচলা। কারণ, এই ঝর্ণাটির সৌন্দর্য এখানেই শেষ নয়; এখানে রয়েছে ৯টি ধাপ, যার প্রতিটি ধাপেই রয়েছে আলাদা আলাদা সৌন্দর্য। কিন্তু সেই সৌন্দর্যকে উপভোগ করতে হলে নিতে হয় প্রাণ ঝুঁকি। কখনো রশি  আবার কখনো গাছের শিকড়কে আঁকড়ে  ধরে পারি দিতে হয় এক চ্যালেঞ্জিং ট্রেইল। তাই কিছু পর্যটকরা প্রথম ধাপ থেকেই পিছু হাঁটেন। আবার কিছু পর্যটক স্থির সংহতি বজায় রেখে এগিয়ে যান পাহাড়ের গভীরতায় এবং উপভোগ করেন ঝর্ণার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।চ্যালেঞ্জিং ট্রেইল
যেভাবে যাবেন—
ঢাকা থেকে বাস অথবা ট্রেনে করে খৈয়াছড়া যাওয়া যায়। ঢাকা চট্টগ্রামগামী যে কোনো বাসে উঠে মিরসরাইয়ের বড়তাকিয়া বাজারের কাছে এসে নামতে হবে। এসি-নন এসি ভেদে ৪০০-১০০০ টাকা ভাড়া গুনতে হতে পারে।এ ছাড়াও ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী যে কোনো আন্তঃনগর ট্রেনে ফেনী স্টেশনে বা সীতাকুণ্ডে নেমে লোকাল বাস ধরে বড়তাকিয়া বাজারে পৌঁছানো যায়। ঢাকা থেকে ট্রেনে আসতে শ্রেণিভেদে ভাড়া পড়বে ২০০ থেকে ৮০০ আর মিরসরাই পৌঁছাতে লোকাল বাসে ভাড়া পড়বে ৩০-৪০ টাকা। সেখান থেকে ঝরনা সংলগ্ন গ্রাম পর্যন্ত যেতে জনপ্রতি ১০০ টাকা ভাড়ায়  সিএনজি কিংবা অটোরিকশা নিতে হবে।  তারপর বাকি পথ আপনাকে হেঁটেই পারি দিতে হবে।

থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা 
খৈয়াছড়া ঝর্ণা সংলগ্ন গ্রামে অনেকগুলো খাবার হোটেল রয়েছে। সেখানে ১০০ টাকায় আনলিমিটেড ভাত ও ভালো মানের তরকারি পাওয়া যায়। তবে ঝর্ণার পাদদেশে মূল গেটের পাশে তাবুর ব্যবস্থা থাকলেও এর আসে পাশে কোনো থাকার হোটেল নেই। তাই সেখান থেকে বেরিয়ে সীতাকুণ্ড বাজারে আসলে ৫০০-১০০০ টাকায় ভালো মানের হোটেল পেয়ে যাবেন।

টিপস
ট্রেকিংয়ের সময় হাঁটার সুবিধার্থে বাঁশের লাঠি এবং পায়ে এংলেট ব্যবহার করুন। ঘন ঝোপ-ঝাড়, গাছ-গাছালির মধ্যে দিয়ে জলপ্রপাত পর্যন্ত হেঁটে যেতে প্রায়  ঘণ্টাখানেক এর রাস্তায় এরা হবে আপনার নিরাপদ সঙ্গী।
 

 

আরবি/ আরএফ

Link copied!