বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার ফুলজোড় নদীর ওপর অবস্থিত ঘাটিনা রেলব্রিজ একটি ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। শুধু একটি ব্রিজ নয়, এটি মুক্তিযুদ্ধের এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়ের সাক্ষীও বটে। এই ব্রিজটি নির্মিত হয়েছিল সিরাজগঞ্জ ও আশপাশের এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য। রেলপথের মাধ্যমে মানুষ ও পণ্য পরিবহন সহজতর করাই ছিল ব্রিজটির মূল উদ্দেশ্য।
১৯৭১ সালে পাকিস্তাানি বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধ এই সেতুতেই সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে ঘাটিনা ব্রিজ বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি বিশেষ স্থান অধিকার করেছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঘাটিনা ব্রিজ সিরাজগঞ্জের প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা এই ব্রিজ রক্ষার জন্য পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে প্রচণ্ড যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এই যুদ্ধের কারণে ঘাটিনা ব্রিজ বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি বিশেষ স্থান অধিকার করেছে। স্থাপনাটি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে আজও কালের সাক্ষী হিসেবে। ঘাটিনা সেতুর স্থাপত্যশৈলী এবং নির্মাণ কৌশল তৎকালীন সময়ের প্রকৌশলীদের দক্ষতার প্রমাণ দেয়। বর্তমানে এই ব্রিজটি একটি ব্যস্ত রেলপথের অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
সেতুটির সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজ নিয়মিতভাবে চলছে। মুক্তিযুদ্ধের স্মরণে সেতুর পাশে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে। সেতুর চারপাশে সবুজ প্রকৃতি এবং নদীর সৌন্দর্য এই স্থানটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। ব্রিটিশ শাসনামলে উপমহাদেশে রেলপথ নির্মাণের সময় ১৯০৯-১৯১৪ সালের মধ্যে ইস্পাত ও ইট দিয়ে এই ব্রিজটি নির্মিত হয়। ব্রিটিশ প্রকৌশলী স্যার রবার্ট উইলিয়াম গেইলস এর নকশায় নির্মিত এই ঐতিহাসিক ব্রিজটি ১৯১৪ সালে উদ্বোধন করা হয়। ১১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই ব্রিজটি অক্ষত রয়েছে, যা এর নির্মাণের গুণগতমানের পরিচয় দেয়। আজকাল ঘাটিনা ব্রিজ শুধু একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা নয়, এটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন স্থানও। ফুলজোড় নদীর সৌন্দর্য ও ব্রিজের ঐতিহাসিক গুরুত্বের কারণে প্রকৃতিপ্রেমী ও ইতিহাসপ্রেমীরা এই স্থানে ঘুরতে আসেন। ব্রিজের কাছেই ফুলজোড় রিসোর্ট অবস্থিত, যেখানে পর্যটকরা বিশ্রাম ও বিনোদন করতে পারেন। ঘাটিনা ব্রিজ বাংলাদেশের একটি গর্বিত ঐতিহ্য। এটি শুধু একটি প্রকৌশল নিদর্শন নয়, বরং মুক্তিযুদ্ধের এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়ের সাক্ষী।
এই ব্রিজটি বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে; দেশপ্রেমিকদের ত্যাগের গল্প শুনতে; প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে; নদীর পাশে প্রশান্ত পরিবেশে সময় কাটাতে; ঐতিহাসিক সেতু এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ছবি তুলে স্মৃতি সংগ্রহ করতে এবং সিরাজগঞ্জ ভ্রমণে যদি আপনি ইতিহাস ও প্রকৃতির সংমিশ্রণ উপভোগ করতে চান, তাহলে ঘাটিনা ব্রিজ আপনার জন্য একটি আদর্শ গন্তব্য হতে পারে।
যেভাবে যাবেন: সিরাজগঞ্জ থেকে বাসে বা ট্রেনে উল্লাপাড়া যাওয়া যায়। উল্লাপাড়া থেকে স্থানীয় পরিবহনে ঘাটিনা ব্রিজে যাওয়া যাবে। ঘাটিনা ব্রিজ যাওয়ার জন্য আপনি ঢাকা-রংপুর হাইওয়ে ব্যবহার করতে পারেন। এই রাস্তাটি দিয়ে যেতে আপনার ৫০ মিনিট সময় লাগবে এবং ২১.৯ মাইল দূরত্ব অতিক্রম করতে হবে।
আপনার মতামত লিখুন :