‘এই ইটের শহর পোড়ায় খালি জোড়াতালি জীবন আমার ভাল্লাগেনা রে’ কথাটা কেবল গায়ক সোহান আলীর গাওয়া একটি গান নয় বরং প্রতিটি মানুষের হৃদয়ের সুর। তাই তো অনেকেই দৈনন্দিন কোলাহল থেকে বেরিয়ে ঘুরে বেড়ায় জীবনানন্দের রূপসী বাংলায়। খুঁজে বেড়ায় তার কবিতার মতো অবিরল মধুকূপী সবুজ ডাঙা আর ভোরের মেঘে নাটার রঙের মতো সূর্য সারথি কিংবা প্রকৃতির বাসর; যেখানে তারা পেতে বসে জীবন জুয়ার আসর।
বলছি পাহাড় প্রেমিক মো. মাসুমের কথা। পাহাড়কে ভালোবেসে যিনি প্রায় এক যুগ ধরে বিচরণ করছেন দেশ-বিদেশের বিভিন্ন পাহাড় চূড়া। প্রকৃতির প্রতি অপার মুগ্ধতায় ইজারা নিয়েছেন মেঘচূড়া নামক একটি পাহাড়ও। দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘পাহাড় আমার অন্য এক বাড়ি; আমার আবেগের জায়গা। আমার মনে হয় আমি পাহাড়কে লালন করি, ধারণ করি। তবে শুরুটা হয়েছিল খুব বাজেভাবে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিরামহীন হাঁটা, জরুরত সারানোর কোনো ব্যবস্থা নেই, আবার নেই ঘুমের কোনো ঠিকঠিকানা! সবকিছু মিলে একটা বাজে অভিজ্ঞতা নিয়ে বাড়িতে ফিরেছিলাম। তারপর যখন নিজের ছবিগুলো পুনরায় দেখলাম। আমার মন আচমকা টনকনড়া দিল। মনে মনে ভাবলাম, আরে আমি এতসুন্দর জায়গায় গিয়েছিলাম! আমার আরও একবার যাওয়া উচিত। এরপর গিয়ে পড়ে গেলাম প্রকৃতির লোভে। লোভে পাপ আর পাপে বান্দরবান! শুরু হলো পাহাড়ি যাত্রা। এরপর ২০১৪ থেকে ২০২২ পর্যন্ত বিশেষ দিন ছাড়া পাহাড়ে রেগুলার ছিলাম। মাঝখানে কিছুদিন যাওয়া হয়নি তারপর থেকে আবার রেগুলার যাচ্ছি। শহরের যান্ত্রিক কোলাহল আমার ভালো লাগে না। শহরে ঢুকলে নিজেকে অসুস্থ লাগে। কিন্তু পাহাড় আমাকে শারীরিক এবং মানসিকভাবে সুস্থ রাখে। এমনও হয়েছে তীব্র অসুস্থতা নিয়ে পাহাড়ে গিয়েছি, যাওয়ার পরপরই সুস্থ হয়ে গেছি। আসলে প্রকৃতির এই নির্জনতাই আমার সঙ্গে যায়। কিন্তু অর্থনৈতিক একটা চাপ ছিল। তাই আর্থিক সাপোর্টের জন্য শখকে প্রফেশন হিসেবে বানাতে আমি ২০২১-এর দিকে সেন্টমার্টিনে একটা রিসোর্ট এবং টাঙ্গুর হাওরে একটা হাউসবোট বানিয়েছি।
কিন্তু আমার ভালোবাসা এবং আবেগের জায়গা পাহাড়; এই জায়গায় আমি কিছুই করিনি। তাই এবার আর সুযোগ হাত ছাড়া না করে আলীকদম আবাসিকে একটা মেঘচূড়া ইজারা নিয়েছি। নিজের জন্য পাহাড়ে একটা স্থায়ী ঘরের খুব প্রয়োজন ছিল! আলহামদুলিল্লাহ যেটা আমি পেয়ে গেছি। মেঘচূড়াতে রিসোর্টের কাজ চলমান। ইতোমধ্যে দুইটি জুমঘরের কাজ শেষ হয়েছে। যেখানে আট থেকে দশজন মানুষ থাকা যায়। মেঘচূড়াতে নিঃসঙ্গতা বলতে কিছু নেই। এখানে ঝিঁঝিঁ পোকা আর পাহাড়ি গাছের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব হয়ে গেছে। এছাড়া আমি পাহাড়ি মানুষ, পাহাড়ি গ্রাম এবং ঝর্ণার প্রেমে পড়ে গেছি। আমি জীবনের অর্ধেকেরও বেশি সময় পাহাড়ে কাটিয়ে দিতে চাই। আমার মনে হয় সবারই পাহাড় দেখা এবং থাকা উচিত। এইটুকু বলতে পারি যারা পাহাড় ট্রেকিং করবে তাদের ধৈর্য এবং মানসিক শক্তি বাড়বে। কারণ, এখানে সবকিছ মানিয়ে নিতে হয়। সবকিছুই হয় ইচ্ছের বিপরীতে।’
আপনার মতামত লিখুন :