গৃহিণী জীবনের এক অবহেলিত অধ্যায়ের নাম। দিনরাত এক করে পরিশ্রমের পর প্রাপ্তি হিসেবে যাদের নামের পাশে যুক্ত হয় শুধুই বদনাম। তবু তারা কাজ করে যায় গড়ে তুলতে সোনালি সংসার। কিন্তু তাদের পরিশ্রম প্রায়ই অবহেলিত থাকে। তাদের কাজের মূল্যায়ন সাধারণত বাড়ির সীমানার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। সমাজও তাদের দেয় না প্রাপ্ত সম্মান। অনেক ক্ষেত্রেই তাদের কাজকে শুধুমাত্র ঘরের কাজ হিসেবে দেখা হয়, অথচ এই কাজগুলোর সঙ্গে জড়িত শারীরিক, মানসিক, এবং সামাজিক দক্ষতা। এ বিষয়ে দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের সঙ্গে কথা হয়েছে গাইবান্ধা জেলার আসমা খাতুনের।
তিনি বলেন, ‘গৃহিণীদের তো আসলে কর্মঘণ্টার হিসাব হয় না। তবে সাধারণত সকল গৃহিণীদেরই প্রায় ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। আমার দৈনন্দিন জীবন থেকে বলতে গেলে যেমনটা আমি করি। তবে আমার মতে বেশিরভাগ গৃহিণীদের কর্মঘণ্টা এমনই; বরং এরচেয়ে বেশি হতে পারে কম নয়। আমার আশপাশের ভাবিদের তো তাই দেখি, যাদের ছোট বাচ্চা আছে ওনাদের তো আরও বেশি পরিশ্রম করতে হয়। বিশ্রামের সময় তো দূরের কথা রাতের ঘুমটাও ঠিকঠাক হয় না।
সংসার জীবনে মাঝে মাঝে মন মনমানসিকতা খুব খারাপ হয়। তবে সংসারের ব্যস্ততায় নিজের মানসিক অবস্থার কথা ভাবার সময় নেই। কোথাও ঘুরতে যেতে চাইলেও সহজে সময় করে উঠতে পারি না। সংসার সামলে সময় বের করা কঠিন হয়ে পড়ে। দূরে কোথাও যেতে চাইলে, বাবার বাড়ি বা আত্মীয়ের বাড়ি যেতে চাইলে আরও বেশি চিন্তা হয়। বাড়ি সামলাবে কে? রান্নাবান্না, বাড়ির পোষা প্রাণীগুলোকে কে দেখবে? টবের গাছগুলোতে নিয়মিত পানি দেবে কে? আরও কত চিন্তা! সংসার জীবনের এসব মায়ায় পড়ে গিয়ে মানসিক অবস্থা খারাপ হলেও কিছু করার থাকে না অনেক সময়। প্রতিটি গৃহিণীরাই নিঃস্বার্থভাবে সংসারে যতটা শ্রম দেন এটা অমূল্য। সবাইকে অবশ্যই গৃহিণীদের সম্মান ও শ্রদ্ধা জানানো উচিত।
তার পাশাপাশি পুরুষদের বলব যে, তারাও যেন সাধ্যমতো কিছুটা হলেও গৃহিণীদের কাজে সাহায্য করেন। অবসরে সময়ে বা ছুটির দিনে। এতে তাদের মা-বোনরা হয়তো একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার সময় পাবেন। আর গৃহিণীদের কাজকে ছোট মনে না করা উচিত। কারণ আমরাই সংসারের চাবিকাঠি। তাই ঘরের কাজগুলোকে শুধু মেয়েদের কাজ ভাবার মতো দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আনা উচিত বলে আমি মনে করি।’
আপনার মতামত লিখুন :