কেউ যদি দ্বিতীয়বার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়, তা আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। হেমোরেজিক জ্বরের পাশাপাশি ব্যাপক অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ এবং লিভারের ক্ষতি হতে পারে। ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করলে সেই ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিজ দেহের সঙ্গেই খারাপ আচরণ শুরু করে। বারবার ভাইরাসের সঙ্গে লড়তে গিয়ে শরীরে অভ্যন্তরে রক্তক্ষরণসহ লিভার, কিডনি, ফুসফুস ও হার্ট বিকল হতে পারে। একে বলা হয় মাল্টি অর্গান ফেইলর।
দ্বিতীয়বার ডেঙ্গুর লক্ষণ
তীব্র জ্বর, শরীরে ব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, মাথা ব্যথা, বমিভাব, ডায়রিয়া, র্যাশ ইত্যাদি। তবে ডেঙ্গু মারাত্মক পর্যায়ে চলে গেলে যে লক্ষণগুলো দেখা দেয় তা হল, পেটে তীব্র ব্যথা, বারবার বমি হওয়া, মাড়ি থেকে রক্তপাত, দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস, মলের সঙ্গে রক্ত যাওয়া, ত্বক ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া, চরম ক্লান্তি। অনেক সময় এই ভাইরাসে রোগীর মস্তিষ্ক পর্যন্ত আক্রান্ত হয় ফলে রোগী অজ্ঞান হয়ে যাওয়া বা রোগীর খিঁচুনি শুরু হতে পারে। তবে প্রাথমিক জ্বর কমে যাওয়ার পরে অনেক সময় ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বর তৈরি হয় যা অসুস্থতার আরও গুরুতর রূপ। এক্ষেত্রে ব্যাপক রক্তপাত, ডিহাইড্রেশন, যেকোন অঙ্গ বিকল হওয়ার মত গুরুতর সমস্যা দেখা দেয় যার ফলে মৃত্যুও হতে পারে।
প্রতিরোধ ও সতর্কতা
সাধারণত ডেঙ্গুর নির্ধারিত কোনো চিকিৎসা নেই। তাই মশা থেকে দূরে থাকাই বর্তমানে সবচেয়ে নিরাপদ প্রতিরোধ। সুতরাং বাসাবাড়িতে যেন মশা ঢুকতে না পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে এবং সেই সঙ্গে বাড়িতে বা আশপাশে মশার বংশবৃদ্ধি যেন না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এ ছাড়া মশা নির্মূল করতে যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার পাশাপাশি সচেতন থাকা আবশ্যক। জ্বর হলেই দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হতে হবে যে ডেঙ্গু কিনা এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এ ছাড়া সুষম খাদ্যাভ্যাস তৈরির পাশাপাশি ভিটামিস-সি যুক্ত ফল, ডালিম, ডাব, পর্যাপ্ত পানি বা তরল খাবার ও শাক-সবজি খেতে হবে।
দ্বিতীয়বার ডেঙ্গু হলে ডা. মনি চৌধুরীর মতে,
প্রথমে বাসায় থাকতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শমতো চিকিৎসা নিতে হবে। পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। এ সময় শরীরে অনেক ব্যথা থাকে। রোগীরা ব্যথার ওষুধ খায়। কিন্তু জানা জরুরি যে, ডেঙ্গুতে কোনো ধরনের ব্যথার ওষুধ খেতে হবে। এই সময় রোগীকে বারবার সিবিসি পরিক্ষা করে ডাক্তার দেখাতে হবে এবং পরবর্তী নির্দেশনা মোতাবেক চলতে হবে। প্লাটিলেট নিয়ে অনেক রোগী চিন্তায় থাকেন। তবে প্লাটিলেট ১০ হাজারের নিচে না নামা পর্যন্ত কোন ভয়ের কারণ নেই। বা প্লাটিলেট দেওয়ার দরকার নেই।
ডা. মনি চৌধুরী
সহকারী অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ
ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, টঙ্গী, গাজীপুর
আপনার মতামত লিখুন :