এই কপ-২৯-এর নাম হয়েছিল Cop of climate finance. খসড়া অনুযায়ী আমাদের যে ১০০ বিলিয়ন ডলার ২০২৫ এর মধ্যে পাওয়ার কথা; সেটিকে ফ্লোর হিসেবে রেখে এবারের সম্মেলনে নতুন একটা কালেক্টিভ কোয়ান্টিফাইড গোল ফিক্সড হওয়ার কথা। ২০২২ সালে উন্নত দেশগুলো দেখিয়েছে যে, তারা ১১৬ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে। কিন্তু এই হিসাবটা আমরা তেমন স্বীকার করি না। কারণ এই হিসাবের মধ্যে অনেক গরমিল আছে। ডাবল ট্রিপল কাউন্টিং আছে। এখন নিউ কালেক্টিভ কোয়ান্টিফাইড গোল যেটা হওয়ার কথা, সেখানে আমাদের দাবি ছিল ডেভেলপিং কান্ট্রিগুলোতে ২০২৫ সাল থেকে মিনিমাম ১ ট্রিলিয়ন ডলার থেকে শুরু হতে হবে। এই নিয়ে ইতোমধ্যে আলোচনা হয়েছে; তবে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। রাজনৈতিকভাবে আলোচনার পর হয়তো একটি কিছু ফিক্সড করবে। গতবছর জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার কমিয়ে আনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কত সালের মধ্যে বাস্তবায়ন হবে, তা স্থির করা হয়নি। এ বছরও এর ওপর খুব বেশি একটা আলোচনা হচ্ছে না। এখানে আলোচনা হচ্ছে শুধু ট্রানজিশনের ওপরে; কীভাবে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার কমিয়ে আনা যায় এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে কীভাবে প্রচার করা যায়। তবে এবারের সম্মেলনে প্রধান আলোচনার বিষয় হচ্ছে জলবায়ু অর্থায়ন। ২০২৫ সাল থেকে কত টাকা বছরে উন্নত দেশগুলো দিবে, সেটা নিয়েই আলোচনা চলছে।
আরেকটা কথা উল্লেখ করছি, অনেকেই মনে করছে কপে বিশ্ব নেতাদের উপস্থিতি নেই; কিন্তু বিশ্বনেতাদের উপস্থিতি এখানে আছে। প্রায় ৮৮জন বিশ্ব প্রধানমন্ত্রী, প্রেসিডেন্টরা এসেছে কপ ২৯ এ। এ ছাড়া বিশ্ব নেতাদের উপস্থিতি যে খুব বেশি ম্যাটার করে, তাও কিন্তু না। জি টুয়েন্টি গ্রুপ অব কান্ট্রিসের বিশটি দেশ কিংবা উন্নত দেশ এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে প্রধান প্রধান দেশগুলো যেমন- সাউথ আফ্রিকা, ভারত, চীন, ব্রাজিল, ম্যাক্সিকো, সৌদি আরব ইত্যাদি দেশগুলোই কিন্তু কার্বন নিঃসরণ করে প্রায় ৮০ ভাগের ওপরে। তাই এরা যদি একটা সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে সমাধান হওয়ার পথে আমরা এগুতে পারি। কিন্তু তাদের মধ্যে এখনো সে-রকম ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত হচ্ছে না। তবে আশা করি, খুব দ্রুত একটি সিদ্ধান্ত আসবে। আর জলবায়ু নিয়ে বাংলাদেশে যে বিক্ষোভ হচ্ছে এই নিয়ে এখানে কোনো আলোচনা হচ্ছে না। কারণ কপে শুধু একটি দেশ নয়, গোটা বিশ্বকে প্রাধান্য দেয়া হয়। তবে জলবায়ু অর্থায়ন নিশ্চিত হলে বাংলাদেশও একটা শেয়ার পাবে। স্বল্পোন্নত দেশগুলো থেকে আমরা সবসময়ই বলছি, আমাদের অনুদান দিতে হবে। ঋণ দেয়ার যৌক্তিকতা নেই। স্বল্পোন্নতে দেশগুলোতে পঞ্চাশ শতাংশ ঋণ হিসেবে দিয়েছে তারা। যা আমদের ঋণের বোঝা বাড়িয়ে দিচ্ছে। তবে এবার আমরা শক্ত করে বলেছি যে, স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে আমরা কোনো ঋণ নিব না। তবে সেটা খুব বেশি সফলতা পাবে বলে আমি মনে করি না।
অধ্যাপক ড. মিজান আর খান
টেকনিক্যাল লিড, এলডিসি ইউনিভার্সিটিস কনসোর্টিয়াম অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (এলইউসিসিসি)
আপনার মতামত লিখুন :