আজারবাইজানের বাকুতে জাতিসংঘের কপ-২৯ সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আশা করা হলেও বিশ্ব নেতাদের অনুপস্থিতি এই সম্মেলনের সফলতার ওপর বড় প্রভাব ফেলছে। উন্নত দেশগুলোর প্রতিনিধি না থাকায় জলবায়ু তহবিল বৃদ্ধি ও বৈশ্বিক অংশীদারিত্বে ঘাটতির আশঙ্কা রয়েছে, যা বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য উদ্বেগজনক। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর তালিকায় সপ্তম অবস্থানে থাকা বাংলাদেশ সরাসরি এই সংকটের শিকার। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রতি বছর দেশের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় তিন বিলিয়ন ডলার, আর অভিযোজন কার্যক্রমের জন্য প্রতি বছরের প্রয়োজনীয় অর্থ বেড়ে ৮ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। এই অনুযায়ী হিসাব করলে ২০২৩ থেকে ২০৫০ সাল পর্যন্ত মোট অর্থ প্রয়োজন ২৩০ বিলিয়ন ডলার। উন্নত দেশগুলো প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, ২০০৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত তারা ১০০ বিলিয়ন ডলার জলবায়ু তহবিলে জোগান দেবে। বাস্তবে এই প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি। এ পর্যন্ত বাংলাদেশ ঋণ হিসেবে ১৩ বিলিয়ন ডলার পেলেও অনুদান হিসেবে পেয়েছে মাত্র ২৬৮ মিলিয়ন ডলার। ঋণের অর্থ ফেরত দেওয়ার চাপ বাংলাদেশকে ‘ক্লাইমেট ডেবট ট্র্যাপ’-এ ফেলেছে।
২০০৯ সালে যেখানে মাথাপিছু জলবায়ু ঋণ ছিল ২ ডলার, তা ২০২২ সালে বেড়ে হয়েছে ৮০ ডলার। ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপে অর্থনৈতিক চাপ আরও বেড়ে চলেছে। তবে বাংলাদেশ অবশ্য সম্পূর্ণভাবে বাইরের সাহায্যের ওপর নির্ভর না করে নিজস্ব উদ্যোগেও মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। দেশের জাতীয় বাজেটের ৬-৭ শতাংশ জলবায়ু অভিযোজন কার্যক্রমে বরাদ্দ থাকে, যা প্রয়োজনীয় অর্থের প্রায় ৭৫ শতাংশ পূরণে সাহায্য করে। তবুও আন্তর্জাতিক সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত অনুদান হিসেবে সাহায্য পেলে অভিযোজন কার্যক্রম অনেক বেশি কার্যকর হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা অনুদান পেয়েছে, তারা লোন গ্রহণকারীদের তুলনায় অনেক বেশি অভিযোজন সক্ষমতা দেখিয়েছে।
কপ-২৯ এ ভুক্তভোগী দেশগুলো উন্নত দেশগুলোর কাছে প্রতিবছরের জন্য একশ বিলিয়নের পরিবর্তে এক ট্রিলিয়ন ডলারের নতুন দাবি তুলেছে, যা অভিযোজন ও ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলার জন্য অপরিহার্য। তবে, বাংলাদেশের অবস্থান হলো নিজেদের শক্তি দিয়ে যতটা সম্ভব ব্যবস্থা নেওয়া এবং একই সঙ্গে বৈশ্বিক সমর্থনের জন্য চাপ অব্যাহত রাখা। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে দুইটি বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, উন্নত দেশগুলোর কাছ থেকে সহায়তা চাওয়ার ক্ষেত্রে ঋণ নয়, বরং অনুদানের জন্য কূটনৈতিক চাপ বাড়াতে হবে। দ্বিতীয়ত, অভ্যন্তরীণ উদ্যোগ আরও শক্তিশালী করতে হবে। যেন অর্থনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার মাধ্যমে জলবায়ু সংকট মোকাবিলা করা যায়। সম্মেলনে বিশ্বের ঐক্য ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া গেলে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর ভবিষ্যৎ অনেকটাই নিরাপদ হবে।
অধ্যাপক ড. সারোয়ার উদ্দিন আহমেদ
ডিন, স্কুল অব বিজনেস ,ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস
আপনার মতামত লিখুন :