অনাবিল জলের ভিতর সন্ধ্যার বিকালের এক টুকরো হলুদ দৃশ্য; যেন দিগন্তের ওপাড়ে সবুজ গালিচার পাহাড়ে মেঘের দুয়ার ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে জলজ্যান্ত হিমু। আর চোখের সামনে দিয়ে ভেসে যাচ্ছে কাল্পনিক নদী ময়ূরাক্ষীর জল।
বলছি, বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সুনামগঞ্জ জেলায় অবস্থিত যাদুকাটা নদীর কথা। ভারতের উত্তর-পূর্ব সীমান্তে মেঘালয়ের পাদদেশে আন্তঃসীমান্ত এই নদীটির প্রাচীন নাম রেনুকা যা বর্তমানে যাদুকাটা কিংবা রক্তি নদী নামেই পরিচিত।
যাদুকাটা নামক এই অদ্ভুত নামটির কথা বলতে গেলে উঠে আসে লোকমুখে এক প্রচলিত গল্পের কথা- ‘একবার এক গাঁয়ের বধু তার শিশুপুত্র যাদুকে কোলে নিয়ে ওই নদীতে মাছ কাটছিলেন। হঠাৎ এক পর্যায়ে অন্যমনষ্ক হয়ে ভুলবশত মাছের জায়গায় তার কোলের শিশুটিকেই কেটে ফেলে’। এরপর থেকে যাদুকাটা নামেই প্রচলিত এই নদী। এর গভীরতা ৮ মিটার এবং আয়তন ১২৫ বর্গ কিলোমিটার। এই নদীতে সারা বছরই পানিপ্রবাহ থাকে। তবে সাধারণত স্বল্প বন্যায় নদীর দু’কুল প্লাবিত হয়।
প্রবাহমান স্বচ্ছ পানির এই নদীটিতে ঘিরে রয়েছে ভারতের সারি সারি উঁচু-নিচু মেঘালয় রাজ্যের খাসিয়া পাহাড় ও বারেক টিলার বুকে ঘন সবুজের সমারোহ, বর্ষায় নদীর ভরা যৌবন আর হেমন্তের বালুচর; যে সৌন্দর্য পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়িয়ে দেয়। এ নদীর হিম শীতল জলে পা ডুবিয়ে কিছুক্ষন বসে থাকলে মাঝে মাঝে মনে হবে এ যেন স্বপ্নে দেখা হিমুর ময়ূরাক্ষী; যাকে একবার দেখলেই মনের ভেতর পুরোপুরি গাঁথা হয়ে যায়।
ময়ূরাক্ষীকে একবার দেখার পরই হিমু যেমন একটু চেষ্টা করলেই আবার দেখতে পেত। তেমন যাদুকাটা নদীকে মন খারাপ কিংবা সময়ে অসময়ে কোথাও বসে একটু চেষ্টা করলেই দেখতে পাওয়া যায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা নদীর তীরে হাঁটা যায়। তাই যাদুকাটা নদীর নৈসর্গিক সৌন্দর্য মুগ্ধ করে যেকোনো ভ্রমণ প্রেমিকদের।
যেভাবে যাবেন :
ঢাকা থেকে সিলেটের সুনামগঞ্জগামী যেকোনো বাসে করে সুনামগঞ্জ পৌঁছতে হবে। তারপর সুনামগঞ্জ বাস স্ট্যান্ড থেকে মোটরসাইকেল অথবা সিএনজিচালিত অটো রিকশা দিয়ে যাওয়া যাবে তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা নদীতে। ঢাকা থেকে এসি - নন এসি বাসে ৮০০- ১২০০ টাকা ভাড়া লাগতে পারে। সুনামগঞ্জ পর্যন্ত পৌঁছতে সময় লাগতে পারে প্রায় ৮ ঘণ্টা।
পাশাপাশি দেখে আসতে পারেন সুনামগঞ্জের আরও কিছু দর্শনীয় স্থান। যেমন: টাঙ্গুয়ার হাওড়, নীলাদ্রী লেক, শিমুল বাগান ইত্যাদি। এসব জায়গায় কি দেখবেন, কিভাবে যাবেন; তার গল্প বলবো অন্য একদিন।
আপনার মতামত লিখুন :