প্রথম দেখায় মনে হবে একটি পাথরের বিছানার মতো বিল বা মাঠ। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের খাসিয়া পাহাড়গুলো ধাপে ধাপে এসে মিলিত হয়েছে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার রুস্তমপুর ইউনিয়নের বিছনাকান্দিতে। সেই সঙ্গে মেঘালয় পাহাড়ের খাঁজে থাকা সুউচ্চ ঝর্ণা বিছনাকান্দির প্রকৃতিকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। মনে হবে যেন পাহাড় আর সমুদ্রের গভীর প্রেমের মিলন। যা যুগ যুগ ধরে একে অপরকে আলিঙ্গন করে ধরে আছে। পর্যটকদের কাছে বিছানাকান্দির মূল আকর্ষণ হচ্ছে, পাথরের ওপর দিয়ে বয়ে চলা স্বচ্ছ জলধারা আর পাহাড়ে পাহাড়ে শুভ্র মেঘের ওড়াউড়ি। মনে হবে, পাহাড়ের সঙ্গে মেঘের গভীর ভাব। শীতকালে আরও ভালো বুঝা যায় বিষয়টি। অনেকক্ষণ আকাশে আর পাহাড়ে তাকিয়ে থাকলে বাড়ি ফিরতে মন চাইবে না নিশ্চিত। স্বচ্ছ পানিতে গা এলিয়ে দিতেই যে মানসিক প্রশান্তি পাবেন। এই প্রশান্তি আপনাকে বিছানাকান্দি টেনে নিয়ে যাবে বারবার। এ যেন পাহাড়, নদী, ঝর্ণা আর পাথর মিলিয়ে প্রাকৃতিক মায়াজাল বিছিয়ে রেখেছে বিছানাকান্দি। বিছানাকান্দির পানি অনেক কম আর স্বচ্ছ খালি পায়ে যদি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন পর পর মেঘালয়ের খাসিয়া পাহাড় থেকে আসা দমকা হাওয়া হিমশীতল শরীর আপনাকে কিছুতেই শহরে আসতে দেবে না।
কখন যাবেন
আপনি যে কোনো সময়েই বিছনাকান্দিতে গিয়ে ঘুরে আসতে পারেন। তবে বর্ষাকালে গেলে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগবে। চারদিকে প্রচুর পানি থাকায় এ সময় বিছনাকান্দির প্রকৃত সৌন্দর্য দেখতে পারবেন। আবার শীতকালে দেখবেন অন্যরকম সৌন্দর্য। তবে মাঝে মধ্যে পাথর উত্তোলনের কারণে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সাময়িক অসুবিধা হয়।
কীভাবে যাবেন
প্রথমেই যেতে হবে সিলেট শহরে। সেখান থেকে যেতে হবে বিছনাকান্দি। সিলেটের আম্বরখানার সিএনজি স্টেশন থেকে লোকাল সিএনজিতে চড়ে হাদারপাড় যেতে হবে। সেখানে ঘাট থেকে নৌকা ঠিক করে বিছনাকান্দির মেইন পয়েন্টে যেতে পারবেন। বর্ষাকালে বিছনাকান্দি ভ্রমণে গেলে বিছানাকান্দি ও পান্থুমাইয়ের জন্য একত্রে নৌকা ভাড়া করতে পারবেন। তবে অবশ্যই নৌকার মাঝির সঙ্গে কথা বলে নেবেন। শীতকালে ও বর্ষার আগে নদীতে পানি কম থাকে। সে সময় আপনি চাইলে হাদারপাড় থেকে হেঁটে বা বাইকে চড়ে বিছনাকান্দি যেতে পারবেন। বিছনাকান্দিতে গোসল করলে পোশাক পরিবর্তনের প্রয়োজনে অর্থের বিনিময়ে ওয়াশরুম ব্যবহার করা যায়।
কোথায় থাকবেন
বিছানাকান্দি যেতে-আসতে সময় লাগে কম। তাই সিলেট শহরেই থাকতে পারেন। হোটেল হিল টাউন, গুলশান, দরগা গেট, সুরমা, কায়কোবাদ প্রভৃতি হোটেলে আপনার প্রয়োজন ও সামর্থ্য অনুযায়ী থাকতে পারবেন। এ ছাড়া লালাবাজার এলাকায় ও দরগা রোডে কম ভাড়ায় অনেক মানসম্মত রেস্ট হাউস আছে।
কী খাবেন
বিছনাকান্দিতে কিছু অস্থায়ী খাবারের হোটেল রয়েছে। এসব হোটেলে বিভিন্ন প্যাকেজে আনলিমিটেড ভাত ডাল খেতে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা খরচ হবে। প্রয়োজনে সঙ্গে কিছু শুকনো খাবার, পানি ইত্যাদি কিনে নিয়ে যেতে পারেন। হাদারপাড় বাজারে গনি মিয়ার ভুনা খিচুড়ি খেতে পারেন। এ ছাড়া সিলেট শহরে বিভিন্ন মানের রেস্টুরেন্ট আছে, আপনার চাহিদামতো সবকিছুই পাবেন। সিলেটের জিন্দাবাজার এলাকার পানসি, পাঁচ ভাই কিংবা পালকি রেস্টুরেন্টের সুলভমূল্যে পছন্দমতো দেশি খাবার খেতে পারেন, এই রেস্টুরেন্টগুলোতে অনেক রকম ভর্তা ভাজি, খিচুড়ি ও মাংসের পদের জন্য খুবই জনপ্রিয়।
আপনার মতামত লিখুন :