ঢাকা রবিবার, ০৫ জানুয়ারি, ২০২৫

শীতে গৃহিণীদের জীবনযাত্রা

মির্জা হাসান মাহমুদ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২, ২০২৫, ১২:৪৪ পিএম

শীতে গৃহিণীদের জীবনযাত্রা

ছবি: সংগৃহীত

শীতকাল মানেই অনেকের কাছে আরামের সময়। শীতের হিমেল হাওয়া, কুয়াশায় ঢাকা ভোর, এবং রোদের নরম স্পর্শ শীতকালকে মায়াবী করে তোলে। শহর থেকে গ্রাম; শীতকালে অনেক বেলা পর্যন্ত কম্বল মুরিয়ে ঘুমানো একটি কমন বিষয়। তবে শীতের এই সময়টা গৃহিণীদের জন্য একেবারেই ভিন্ন রকম হয়ে থাকে। ঘরের কাজে আরও বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েন তারা। শীতের সকালে যখন অন্যরা কম্বলের উষ্ণতায় ঘুমিয়ে থাকেন, তখন গৃহিণীদের দিন শুরু হয় বেশ ভোরেই। পরিবারের দেখভাল, শীতের বিশেষ আয়োজনসহ নানা দায়িত্বের ভার তাদের আরও বেড়ে যায়। শীতকালে গৃহিণীদের জীবনযাত্রা নিয়ে কথা বলেছেন শহুরে গৃহিণী মিসেস শায়লা করিম।

প্রতিদিনের সংগ্রাম

গৃহিণীদের শীতের দিন শুরু হয় চা বা কফির কাপ দিয়ে পরিবারের সদস্যদের ঘুম ভাঙানোর দায়িত্ব নিয়ে। সকালের নাস্তার জন্য শীতকাল মানেই বিশেষ আয়োজন। পিঠাপুলি, খেজুর গুড়, ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা; এসবের চাহিদা শীতকালে বেড়ে যায়। মিসেস শায়লা করিম বলেন, ‘শীতকাল মানেই পরিবারের সবাই পিঠাপুলি খেতে চায়। পিঠা বানানো অনেক পরিশ্রমের কাজ। কিন্তু পরিবারের হাসিমুখ দেখে সব ক্লান্তি ভুলে যাই।’
গৃহিণীরা এ সময় বাজারে যেতে হলে বিশেষভাবে প্রস্তুত হন। শীতে সবজির দোকানে যেমন ভিড় থাকে, তেমনি দামে দরকষাকষি করার প্রয়োজনও বেড়ে যায়।

শীতের জামা-কাপড় এবং বাড়তি যত্ন

শীতকালে শুধু খাবার নয়, পরিবারের সবার জামা-কাপড়ের বাড়তি যত্ন নিতে হয়। সোয়েটার, শাল, কম্বল ইত্যাদি ধোয়া, শুকানোয় গৃহিণীদের বাড়তি সময় দিতে হয়। মিসেস করিম বলেন, ‘শীত এলেই গরম জামা-কাপড় বের করতে হয়; প্রায় প্রতিদিনই কাপড় ধুয়ে দিতে হয়। বিশেষ করে বাচ্চাদের শীতের কাপড় পরিষ্কার রাখার জন্য অনেক সময় ব্যয় করতে হয়। এগুলো যদি না করি, বাচ্চারা সহজেই ঠান্ডা লেগে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে।’

শীতকালীন বিশেষ খাবার

শীতকাল মানেই পুষ্টিকর খাবারের আয়োজন। পিঠাপুলির পাশাপাশি শাক-সবজি দিয়ে তৈরি বিশেষ পদ, খেজুর গুড়ের পায়েস, এবং নানা ধরনের শীতের রেসিপি বাড়ির খাবারের টেবিলকে রঙিন করে তোলে। তবে এসবের আয়োজন এবং রান্না করার সময়টুকু কেবল একজন গৃহিণীর ধৈর্য ও সৃষ্টিশীলতার প্রমাণ।

পরিবারের জন্য শীতের স্বাস্থ্য সচেতনতা

গৃহিণীরা শীতকালে পরিবারের সবার স্বাস্থ্য নিয়ে বেশি সতর্ক থাকেন। ঠান্ডা লাগা, জ্বর বা কাশির মতো সমস্যা থেকে বাঁচতে তারা বিশেষ যত্ন নেন। ঘর গরম রাখার চেষ্টা, পর্যাপ্ত কম্বল দেওয়া, এবং গরম পানির বন্দোবস্ত করা তাদের রোজকার কাজের অংশ হয়ে দাঁড়ায়।

নিজের জন্য সময়ের অভাব

অন্য সবার যত্ন নিতে গিয়ে গৃহিণীরা অনেক সময় নিজেদের জন্য তেমন সময় বের করতে পারেন না। এ বিষয়ে মিসেস শায়লা করিম বলেন, ‘পরিবারের সবার কথা ভাবতে গিয়ে নিজের যত্ন নেওয়ার কথা ভুলেই যাই। মাঝে মাঝে মনে হয়, একটু বসে চায়ের কাপে চুমুক দেব। কিন্তু সেই সময়ও পাই না।’

পরিবারের ভালোবাসাই গৃহিণীদের পুরস্কার

গৃহিণীদের এই নিরলস পরিশ্রম এবং শীতকালীন বিশেষ যত্নে পরিবারের অন্য সদস্যরা উষ্ণতা পায়। যদিও এটি একটি ক্লান্তিকর কাজ, কিন্তু পরিবারের মায়াভরা হাসি তাদের পরিশ্রমকে সার্থক করে তোলে। মিসেস করিমের মতে, ‘যখন দেখি আমার সন্তানরা সুস্থ, সবাই খুশি, তখন নিজের সব কষ্ট ভুলে যাই। আসলে পরিবারের ভালোবাসাই আমার সবচেয়ে বড় পুরস্কার।’

শীতকালীন আবহাওয়া যতই আরামদায়ক হোক না কেন, গৃহিণীদের জন্য এটি চ্যালেঞ্জের সময়। তাদের নিরলস পরিশ্রম এবং দায়িত্ববোধ পরিবারের জন্য এক অমূল্য অবদান। শীতকালীন প্রস্তুতি এবং বিশেষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে তারা পরিবারের সবার জন্য একটি উষ্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করেন।

আরবি/ আরএফ

Link copied!