রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মিনহাজুর রহমান নয়ন

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৮, ২০২৫, ০৪:১৮ পিএম

জহিরনামা

ভাগ্যকুল জমিদার বাড়িতে

মিনহাজুর রহমান নয়ন

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৮, ২০২৫, ০৪:১৮ পিএম

ভাগ্যকুল জমিদার বাড়িতে

ভাগ্যকুল জমিদার বাড়ি

একজন ভবঘুরে। বড়লোক বাবার ছেলে। নাম জহির ফকির, পুরা নাম জহুরুল ইসলাম ফকির। ফকির তাদের বংশগত উপাধি, এই ফকির ভিক্ষা করে না অবশ্য। জহির ফকিরের দাদা মফিজ ফকির একটু ধার্মিক ছিলেন।

অনেকে দোয়া চাইতে আসত। তিনি দোয়া করে দিতেন। কাকতালীয়ভাবে তার দোয়া কবুল হয়ে যেত। ধার্মিক পরিবারের ছেলে হলেও জহির ফকির পুরো উল্টা। খামখেয়ালিপনায় ভরা, উড়নচন্ডি। চারুকলার ছাত্র। সবাই যেখানে সামনে এগোয়। সে শুধু পেছনে ফিরে যেতে চায়। সে ঘুরে বেড়ায় পুরান ঢাকা, মিরপুরের অলি-গলি।

কী খোঁজে; সে নিজেও জানে না। খুব উৎসুক স্বভাবের জহির, তার চোখে আপনাদের দেখাবো আমাদের শহরের জীবন, ইতিহাস, গল্প; অনেক না দেখা সাম্রাজ্য। যেখানে ধরা দেবে পুরোনো বাড়ি, রাস্তা, সাঁকো, আরও অনেক কিছুই। যা আমরা দেখেও দেখি না।

হঠাৎ গাড়ি চেপে চলে আসলাম মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে। এখানে রয়েছে ভাগ্যকুল জমিদার বাড়ি। উদ্দেশ্য ছিল ভাগ্যকুল বাজারে গিয়ে মিষ্টি খাওয়ার কিন্তু এখানে এসে জানতে পারি এখানে একটা জমিদার বাড়িও রয়েছে, তো লোভ ধরে না রেখে চলে আসলাম ভাগ্যকুল জমিদার বাড়ি দেখতে। সম্পূর্ণ অন্যরকম একটা জমিদার বাড়ি, গ্রীক স্থাপত্যশৈলী। 

ইতিহাসবিদদের মতে এখানকার রাজা সীতানাথ রায়ের দুই পুত্র যদুনাথ রায় এবং প্রিয়নাথ রায়। জমিদার সীতানাথ রায়ের পুত্র যদুনাথ রায় এই ভবনটি নির্মাণ করেন। সীতানাথ রায়ের মূল জমিদারি যদিও পদ্মার বুকে বিলীন হয়ে যায়,  তখন পদ্মার ভাওন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আড়িয়াল বিলের কিনারে মনোরম ডুয়েল প্রাসাদ গড়ে তুলেছিলেন।

বাড়ির সামনে  দাঁড়িয়ে বিল দেখতে ভালোয় লাগে, যদুনাথ রায়ের বর্তমানের রাঢ়িখাল ইউনিয়নের উত্তর বালাশুরে (সে সময় ভাগ্যকুল নামে পরিচিত ছিল) হুবহু একই ধরনের দুটি ত্রিতল ভবন নির্মাণ করেন। সেই সাম্রাজ্যের মধ্যে টিকে আছে শুধু এই আড়িয়াল বিলের ধারের প্রাসাদ দুইটি। সম্ভবত নদীভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। 

এখানে এসে আরও জানতে পারি তিনি বিশালাকৃতির দীঘি খনন করেন, দুর্গামন্দির ও নাটমন্দির (থিয়েটার; নাট্যশালা) স্থাপন করেন, সম্ভবত তিনি  নাচ গান পছন্দ করতেন। স্থানীয় মানুষের কাছে এই বাড়িটি ‘বাবু বাড়ি’ নামেও পরিচিত। ভাগ্যকুলের এই জমিদার তারা তাদের কর্মযজ্ঞের ফলে ব্রিটিশদের কাছ থেকে রাজা উপাধি লাভ করেন। 

তখনকার সময় এই জমিদার বংশধররা সকলেই ছিলেন উচ্চ শিক্ষিত। ভাগ্যকুল জমিদারদের ঞযব ঊধংঃ ইবহমধষ জরাবৎ ঝঃবধসবৎ নামে একটি স্টিমার কোম্পানি ছিল যা ১৯০৭ সালে নৌ ব্যবসায় যুক্ত হয়। সমভবত কলকাতার সঙ্গে বা বাংলা বিহার উড়িষ্যার নৌ-যোগাযোগ ছিল এই কোম্পানির মাধ্যমে।

এই বাড়ির বংশধরদের বর্তমানে কলকাতায় বসবাস। এই জমিদার বাড়ি দেখে মনে হয় খুব বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয় নাই হয়তো তারা ইংরেজদের আস্থাভাজন ছিলেন। 

এই বাড়িতে তারা বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছিলেন, ছিল সোয়ারেজ ব্যবস্থা, বিশালাকৃতির তিনটি দীঘি ছিল, বাড়িজুড়ে ছিল বহুরকমের ফুল ও ফলের গাছ। খাপড়াওয়ার্ড খ্যাত জেলবন্দি লেখক আব্দুস শহীদ তার ‘কারাস্মৃতি’ গ্রন্থে ফুল বাগানের বর্ণনা দিয়েছেন। 

এখনো বাহারি নাগলিঙ্গম, বিশালাকৃতির কাঠবাদাম, বোম্বে লিচু, সুমিষ্ট আম গাছ রয়েছে। অশোক গাছটিতে এখনো ফুল ফুটলে মনে হয় ভোরে সূর্য উঁকি দিয়েছে। 

পুকুর ছিল মাছে পরিপূর্ণ, আলাদাভাবে কূপে ছিল রঙিন মাছ। ড. হুমায়ুন আজাদ এই বাড়িটিকে নিয়ে তার ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না গ্রন্থে লিখেছেন- ‘বিলের ধারে প্যারিস শহর’।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!