দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় মাছ সংরক্ষণের ‘নারে-জুশি’ পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়। এতে লবণে জারিত মাছ এমনকী কয়েক মাস পর্যন্ত ফারমেন্টেড ভাতের মধ্যে সংরক্ষিত করা হতো। ভাতের ল্যাক্টো-ফারমেন্টেশন মাছকে নষ্ট হওয়ার থেকে রক্ষা করত। কিন্তু মাছটি খাবার আগে ওই ভাত ফেলে দিতে হতো। এর এক হাজার বছর পর থেকে ভাতসহ মাছটি খাওয়ার প্রচলন শুরু হয়। খাবারটি আজ নারে-জুশি নামে পরিচিত, এবং ইয়াওয়ী যুগে জাপানে এর পরিচয় ঘটে। মুরোমাচি যুগে মাছের পাশাপাশি ভাত খাওয়া শুরু হয়। এদো যুগে ভেজানো ভাতের পরিবর্তে ভিনেগারের ব্যবহার শুরু হয়। প্রাক-আধুনিক যুগে এবং আধুনিক যুগে এই খাবারটি জাপানি সংস্কৃতির সঙ্গে ভালোভাবে যুক্ত হয়েছে। আজকের নিগিরিজুশি এর ধরন, যা এক মুষ্ঠি ভাত এবং তার ওপরে ছড়ানো মাছের টুকরোর সমন্বয়ে তৈরি। এটি ১৮২০ বা ১৮৩০ এর দশকে এদোতে (তৎকালীন টোকিও) জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। নিগিরিজুশি উদ্ভবের একটি প্রচলিত গল্প হল শেফ হানায়া জোহেইর (১৭৯৯-১৮৫৮), যিনি রাইওগোকুতে তার দোকানে ১৮২৪ সালে কৌশলটি আবিষ্কার করেছিলেন। ১৯২৩ সালের গ্রেট ক্যান্টো ভূমিকম্পের পরে নিগিরিজুশি শেফরা এদো ত্যাগ করে জাপানজুড়ে ছড়িয়ে পড়েন এবং সারা দেশে খাবারটি জনপ্রিয় করে তোলেন। ধারণা করা হয়, ৭১৮ সালে ইয়োরো-কোডে জাপানি সুশির আবির্ভাব হয়। প্রায় পরবর্তী ৮০০ বছরে, ১৯ শতকের আগ পর্যন্ত সুশি ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয় এবং জাপানি রন্ধনপ্রণালীও বদলে যায়। জাপানিরা দিনে তিন বেলা খাবার খাওয়া শুরু করে, ভাপে রান্না করার পরিবর্তে চাল সিদ্ধ করা হতো এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল চালের ভিনেগারের বিকাশ। ভাত দিয়ে মাছের গাঁজানোর মাধ্যমে সুশি উৎপাদন করা অব্যাহত থাকলেও, চালের ভিনেগার যোগ করায় গাঁজানোর সময় অনেকটাই হ্রাস পায়। জাপানি সুশি অর্থ টক টক বা তিতা ভাত। বিভিন্ন ধরনের সুশির মধ্যে সামুদ্রিক কাঁচা মাছ, আঠালো ভাত আর সয়াসসের যে সুশিটি বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা পেয়েছে, এর নাম ওশি-জুশি। সারা বিশ্বের মতো আমাদের দেশেও ক্রমশ বাড়ছে সুশির কদর। এখন ঢাকায় অনেক রেস্টুরেন্ট বা ফুড শপে পাওয়া যায় এই খাবার। আপনি চাইলে ঘরে বসেই মুখরোচক ও ভিন্নধর্মী এই খাবারটি তৈরি করতে পারেন।
উপকরণ
২ টেবিল চামচ ভিনেগার
১ টেবিল চামচ সয়াসস
১ টেবিল চামচ লবণ
২ টেবিল চামচ চিনি
লবণবিহীন শুকনো সামুদ্রিক শৈবালের লেয়ার (বাজারে কিনতে পাওয়া যায়)
গাজর
শসা
সুশি রাইস তৈরির জন্য ছোট দানার আতপ চাল
সামুদ্রিক মাছ, চিংড়ি, মাংস বা অন্য কোনো টপিং
প্রস্তুত প্রণালী
প্রথমে চাল ধোয়া পানি সম্পূর্ণ পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত আতপ চাল ঠান্ডা পানি দিয়ে বার বার ধুয়ে নিন। তারপর চাল সিদ্ধ করে নিন। প্রথমেই ঢাকনা না দিয়ে ২ কাপ চালের সঙ্গে ২ কাপ পানি দিয়ে উচ্চ তাপে চুলায় চড়িয়ে দিন। চাল সিদ্ধ হতে শুরু করলে চুলার আঁচ একেবারে কমিয়ে দিয়ে ঢেকে দিন। ১৫ মিনিট এভাবে সিদ্ধ করার পর চুলা থেকে নামিয়ে ১০ মিনিট সাধারণ তাপমাত্রায় রেখে দিন। মনে রাখবেন, সুশি রাইস বেশ আঠালো ধরনের হয়। এবার ছোট্ট একটি বাটিতে ২ টেবিল চামচ ভিনেগার, ২ টেবিল চামচ চিনি, ১ টেবিল চামচ সয়াসস ও ১ টেবিল চামচ লবণ মিশিয়ে হালকা গরম করে নিন। এবার একটি কাঠের বা কাঁচের পাত্রে এই মিশ্রণটি ভালোভাবে রাইসের সঙ্গে মিশিয়ে নিন যাতে প্রতিটি দানায় মিশ্রণটি লেগে যায়। তৈরি হয়ে গেল আপনার সুশি রাইস। একে রুম তাপমাত্রায় রেখে বাকি কাজ করুন। তারপর শসা আর গাজরগুলো চপিং বোর্ডে নিয়ে চিকন ও লম্বা করে কেটে নিন। চিংড়ি ব্যবহার করতে চাইলে একে সিদ্ধ করে খোলস ছাড়িয়ে নিন। সামুদ্রিক মাছ বা মাংস ব্যবহার করতে চাইলে তাদের পাতলা স্লাইস করে কেটে সিদ্ধ করুন বা আপনার পছন্দমতো মসলা মাখিয়ে ভেজে নিন। জাপানিরা অবশ্য কাঁচা ও সিদ্ধ, উভয় প্রকারেই মাছ খেয়ে থাকে। এরপর একটি বাঁশের ছোটো ম্যাটের (অনেক বড় বাজারে বা বড় সুপারস্টোরে ইদানীং সুশির জন্য বাঁশের ম্যাট পাওয়া যায়) ওপর শুকনো শৈবালের লেয়ারটি রেখে এর উপর সুশি রাইস বেশ পুরু করে ছড়িয়ে দিন। খেয়াল রাখবেন যেন কোনো ফাঁকা জায়গা না থাকে। এবার ভাতের ওপর কয়েকটি গাজর বা শসার টুকরা দিন ও মাঝখানে মাছ, চিংড়ি বা মাংসের টপিং দিয়ে দিন। এবার বাঁশের ম্যাটটি সাবধানে রোলের মতো মুড়িয়ে নিন। মনে রাখবেন, মোড়ানোর সময় চেপে চেপে মোড়াতে হবে, যেন এর ভেতরে ভাতটা টিউবের মতো মুড়ে গিয়ে সবজি ও টপিংগুলো ঠিক মাঝে থাকে। এবার একটি ধারালো ছুরি ব্যবহার করে সুশি রোলটিকে ছোট ছোট টুকরো করে কেটে নিন। কাটার সময় সাবধান থাকবেন ও রোল থেকে উপকরণগুলো যেন ভেঙে ছড়িয়ে না পড়ে পরিবেশনের সময় এর উপরে একটু সস/জাপানি মেয়নেজ দিতে পারেন। অথবা খেতে পারেন পিকেলড জিঞ্জার বা ওয়াসাবি দিয়ে; এগুলো এখন অনেক বড় বাজারেই কিনতে পাওয়া যায়।
আপনার মতামত লিখুন :