আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে নারী স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তন অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়। কারণ অনেক ক্ষেত্রে নারী ও শিশু স্বাস্থ্য নিয়ে আমরা অতোটা সচেতন থাকি না। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল বিশেষ করে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট জেলাগুলো যে নারী ও শিশুরা সরাসরি জলবায়ু পরিবর্তনের খারাপ দিকটির মুখোমুখি হয়। কারণ হিসেবে দেখা গেছে সমুদ্রের কাছাকাছি হওয়ায় পানি ও মাটির লবণাক্ততা বেড়ে যাচ্ছে। এবং নারীর স্বাস্থ্য, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থাকে প্রভাবিত করছে। নারী বা বয়ঃসন্ধিকালীন মেয়েদের মাসিক প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটছে। তাদের স্যানিটেশনেও সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তারা পানিস্বল্পতা ও লবণাক্ততার কারণে ওষুধ খেয়ে স্বাভাবিক মাসিক বন্ধ করছে।
তাদের প্রডাক্টিভিটি বা ফার্টিলিটি কমে যাচ্ছে। মেয়েদের বন্ধ্যাত্ব বাড়ছে। বিশুদ্ধ পানির উৎস যেখানে, সেখান থেকে আনতে গিয়ে নারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। পানি ও খাদ্য নিরাপত্তা ব্যাহত হচ্ছে। আবহাওয়াজনিত কারণে এমন কিছু অসুখ হচ্ছে, যার চিকিৎসা তারা সঠিকভাবে পাচ্ছে না। এতে করে তারা মাইগ্রেটেড হচ্ছে। নিজের জন্মস্থান থেকে নতুন কোনো জায়গায় যেতে হচ্ছে। সেখানে নতুন পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতেও সমস্যা হচ্ছে। বাড়ছে ঝুঁকিও। জলবায়ু পরিবর্তনের কু-প্রভাব থেকে বাঁচতে বাড়ছে বাল্যবিবাহ। সাধারণত নারীরা সমাজের অনেক জায়গায় অসহায়। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মাটি, পানি, বাতাস ও যার প্রাণ আছে; অর্থাৎ মানুষ, পশুপাখি, গাছপালা- সবকিছু প্রভাবিত হয়। নারীর ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তন অসহায়ত্ব ও সীমাবদ্ধতার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। সমাধানের কথা বলতে গেলে প্রথমেই যে টার্মটি বলব, তা হলো মানিয়ে নেওয়া। যে পরিবর্তন হচ্ছে, তার সঙ্গে দ্রুত মানিয়ে নিতে হবে। যেসব এলাকায় মেয়েরা পিল খেয়ে পিরিয়ড বা মাসিক বন্ধ করে রাখছে বা বন্ধ্যাত্বের দিকে এগুচ্ছে, সেখানে সমাধান হিসেবে উন্নয়ন সংস্থাগুলো ওয়াটার ট্যাংকে বৃষ্টির পানি ধরে রাখছে। এতে মেয়েরা নির্দিষ্ট সময়ে গিয়ে স্যানিটারি ন্যাপকিন ধুয়ে আনছে, সংস্থাগুলো স্বল্পমূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন দিচ্ছে। উন্নয়ন সংস্থাগুলো দক্ষিণাঞ্চলে শুরু করেছে। আমার মতে তহবিল বাড়ানো গেলে এ ধরনের সহযোগিতা সর্বত্র দেওয়া যেতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যেসব এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ সেখানে নজর বাড়াতে উচিত।
বয়ঃসন্ধিকালে শিশুর যত্ন, যুবতী হয়ে যারা গর্ভবতী হওয়ার জন্য প্রস্তুত; তখন তার ফার্টিলিটির হার বাড়াতে কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে, সে বিষয়ে সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতে হবে। প্রয়োজন মানসিক সহযোগিতা। অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে চিহ্নিত করতে হবে। তাদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। দক্ষিণাঞ্চলে যেমন লবণাক্ততা রয়েছে, তেমনি উত্তরাঞ্চলে রয়েছে খরা। সবার জন্য সুপেয় বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করতে হবে। আরেকটি বড় বিষয় জলবায়ু বিষয়ক শিক্ষা। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় আমরা কীভাবে মানিয়ে নিতে পারবো, সে সম্পর্কে সঠিক শিক্ষা দিতে হবে যেন আমরা বাসযোগ্য পরিস্থিতি তৈরি করতে পারি। এজন্য সরকার যেমন কাজ করছে, তেমনি এনজিওগুলো ভালো কাজ করছে।
অধ্যাপক ড. উম্মে সাইকা
ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ ,জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
আপনার মতামত লিখুন :