কৃষি প্রধান এই দেশের কথা লিখতে গেলে মনে পড়ে রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দের কথা। যিনি কৃষকদের নৈপূন্যে, বাংলার মাঠ ক্ষেত ভালোবেসে বার বার ফিরে আসতে চান এই বাংলায়। হয়তো শঙ্খচিল শালিকের বেশে কিংবা ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে।
বাংলার কৃষকদের কঠোর পরিশ্রম ও সুক্ষ্ম পরিকল্পনায় বাংলার কৃষি আজ ইতিহাসের অন্যতম অংশ।তবে ঋতু বৈচিত্রের এই দেশে হঠাৎ আবহাওয়া পরিবর্তন কৃষকদের ফেলে দেয় বেশ বিপাকে, কৃষক সম্প্রদায়ের দিকে ধেয়ে আসে এক অলীক ঝুঁকি। যা মোকাবিলা করতে হিমশিম খায় বাংলার কৃষি সমাজ।তাই ঝুঁকি রোধে সবচেয়ে কার্যকরী সমাধান হলো পূর্ব প্রস্তুতি।
আমরা জানি যে শীতের শুরুতে অর্থাৎ অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাসে শুরু হয় রবি শস্যের চাষ।তাই মৌসুমি বায়ুর প্রবর্তনের সাথে মিল রেখে যখন বাংলাদেশের আকাশে বৃষ্টির রাজ্য কায়েম থাকে, তখন কৃষকেদের ক্ষেতে মনোনিবেশ করা উচিত বলে মনে করেন কৃষিবিদরা।
রবি মৌসুমে ভালো ফলনের জন্য যে যে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারেন -
জমির পরিচর্যা: বৃষ্টিতে জমির উপরের স্তর সেচ দ্বারা জলমগ্ন হতে হয়।তাই এ সময়ে জমির পরিচর্চা অত্যন্ত জরুরি।অতিরিক্ত জল কিংবা আবর্জনা জাতীয় কিছু জমিতে আটকে থাকতে দেয়া যাবে না।অনেকসময় অতিরিক্ত জলের প্রভাবে পচন এবং বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি হয়।যা ফসলের জমিকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়।
সার প্রয়োগ: সার ফসলের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি প্রদান করে। তাই রবি শস্যের প্রস্তুতি গ্রহণে জমিতে সঠিকভাবে সার প্রয়োগ করতে হবে। পঁচা গোবর, অর্গানিক সার, কেঁচো কম্পোস্ট ইত্যাদি সার মাটির পুষ্টি বৃদ্ধি করে এবং গঠন উন্নত করতে সাহায্য করে।এছাড়াও রাসায়নিক সার,মাটির পিএইচ এবং পুষ্টি পরিমাপ করে, প্রয়োজনে নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশিয়াম সমৃদ্ধ সার প্রয়োগ করতে পারেন। তবে সারের পরিমাণ ও প্রকার নির্ধারণে কৃষি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেয়া উচিত।
বীজ বপনের প্রস্তুতি: ভালো বীজ ফসলের গুণগত মান বৃদ্ধি করে তাই ভালো বীজ বাছাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বীজ বপনের পূর্বে বীজ ভিজিয়ে রাখতে হবে।এপর এমন কোনো সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করা উচিত যাতে বীজ দ্রুত ও সমানভাবে গরম হয়। বীজ বপনের ক্ষেত্রে অবশ্যই স্থানীয় জলবায়ু ও মাটির ধরণের উপর নির্ভর করে সঠিক নিয়মে বীজ বপন করতে হবে।
বৃষ্টির জল ব্যবস্থাপনা: বৃষ্টিতে অতরিক্ত জল জমাটা স্বাভাবিক। কৃষকদের এসময়ে জল ব্যবস্থাপনার দিকে অত্যন্ত নজর রাখতে হবে।করতে হবে নিখুঁত জল নিষ্কাশনের ব্যবস্থা। জমির উপরে ক্যানেল বা খাল তৈরি করে অতিরিক্ত জল নিষ্কাশন নিশ্চিত করা যায়।
এছাড়াও ঝুঁকি রোধে অন্যান্য কিছু প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারেন, যেমন: কোন ফসল চাষ করা হবে তা আগাম ঠিক করা,কোন সময়ে সার প্রয়োগ ও পরিচর্যা করা হবে তা নির্ধারণ করা,কৃষি যন্ত্রপাতি প্রস্তুত করা ইত্যাদি।
আপনার মতামত লিখুন :