ঢাকা সোমবার, ২১ অক্টোবর, ২০২৪

স্বাস্থ্য রক্ষায় পানি দূষণ রোধ

মিনহাজুর রহমান নয়ন

প্রকাশিত: অক্টোবর ৯, ২০২৪, ১২:০৭ পিএম

স্বাস্থ্য রক্ষায় পানি দূষণ রোধ

ছবি: সংগৃহীত

চিকিৎসকরা বলেন, স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পরিমানমতো পানি পান করা প্রয়োজন। সেই পানিই যদি দূষিত হয়ে যায়, তাহলে স্বাস্থ্য ভালো থাকবে কি করে? আমরা জানি, পানির অপর নাম জীবন। পানি জীবজগতের জন্য প্রাণরক্ষাকারী একটি অমূল্য সম্পদ। সাগর, নদীনালা, হ্রদ ইত্যাদি পানির অন্যতম উৎস। পানি বিভিন্ন প্রয়োজনে মানুষের নিকট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মানবসমাজের উৎকর্ষ সাধনের সাথে সাথে শিল্পের প্রসার ও অন্যান্য প্রয়োজনে পানির প্রয়োজনীয়তা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু এ পানি নানাবিধ কারণে দূষিত হচ্ছে বলে স্বাস্থ্য তথা জীবজগতের ওপর তা বিভিন্নভাবে প্রভাব বিস্তার করে। পানি দূষণের পিছনে অনেক কারণ বিদ্যমান, আর এ দূষিত পানির প্রভাব মারাত্মক। তাই এ দূষিত পানি রোধ করার জন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে।

পানি দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব
১. শহর ও বন্দরের পয়ঃপ্রণালির আবর্জনা ও বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ নদী ও সাগরে পতিত হলে পানি দূষিত হয়ে জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীর মৃত্যু ঘটে।
২. পানিতে মিশ্রিত পারদ, সীসা, আর্সেনিক প্রভৃতি প্রাণিদেহে সঞ্জিত হয়ে প্রাণীর স্বাস্থ্যহানিসহ মৃত্যু ঘটে। পারস মানবদেহে প্রবিষ্ট হয়ে মস্তিষ্কের ক্ষতিসাধন করে।
৩. পুকুর ও নদীতে এছাড়াও নালা নর্দমার পঁচা পানিতে গোসল, বাসনপত্র মাজা ও কাপড়চোপড় ধোয়ার ফলে মানুষের কলেরা, টাইফয়েড, আমাশয় প্রভৃতি মহামারি রোগ হয়ে থাকে।
৪. শিল্পকারখানা থেকে নির্গত দূষিত বর্জা পদার্থ নদীতে বা সমুদ্রে পতিত হলে সেখানকার পানিতে অক্সিজেনের ভাগ কমিয়ে দেয় । এতে জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীর মৃত্যু ঘটে।
৫. বিভিন্ন তেজস্ক্রিয় বর্জ্য পদার্থ মানবদেহের দৈহিক বিকৃতিসহ ক্যান্সার সৃষ্টি করে।

পানি দূষণ নিয়ন্ত্রণে করণীয়
পৃথিবীতে পানি দূষণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে পৃথিবীর সব পানির প্রায় ৬০ ভাগ দুষিত অবস্থায় আছে; যা গত ৬ দশকে পানি দূষণের মাত্রা প্রায় ৪ ভাগ বৃদ্ধি করেছে। পানির এ দূষণ রোধ করা একান্ত অপরিহার্য। বিশেষ করে প্রযুক্তি উপায়ে, আইনসম্মত উপায়ে এবং মানুষের স্ব স্ব ব্যক্তিগত উদ্যোগে পানি দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। নিম্নোক্ত উপায়ে পানি দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

১. বিভিন্ন কীট, ছত্রাক নাশক ওষুধ ও রাসায়নিক সার ও অন্যান্য রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার না করে অথবা পরিকল্পনামাফিক এবং সঠিক ও সীমিত পরিমাণ ব্যবহার করার প্রতি গুরুত্বারোপ করলে পানি দূষণ রোধ করা সম্ভব।
২. কম্পোস্টিং টয়লেট স্থাপনের মাধ্যমে পানি দূষণ রোধ করা যায়।
৩. তেলবাহী জাহাজ ও ট্যাঙ্কার হতে তেল যাতে নদী বা সমুদ্রে পতিত না হয়, তার সুব্যবস্থা গ্রহণ করে পানি দূষণ রোধ করা যায়।
৪. প্লাস্টিক, পলিথিন, রাবার প্রভৃতি যেখানে সেখানে না ফেলে মাটিতে গর্ত করে পুঁতে মাটি চাপা দিয়ে পানি দূষণ রোধ করা যায়।
৫. নবনির্মিত হাইওয়ের নিকটবর্তী স্থানে ও অনাবৃত জমিতে মৃত্তিকা সংরক্ষণকারী উদ্ভিদ লাগিয়ে এবং অধঃক্ষেপণযুক্ত পানি স্রোত নদীতে পড়ার পূর্বেই যাতে পুকুরে সঞ্চয় করা যায়, তার ব্যবস্থা গ্রহণ করে পানি দূষণ রোধ করা সম্ভব।
৬. শহর ও পৌর এলাকার আবর্জনা ও নর্দমার জঞ্জাল নদী ও খালবিলে পতিত হওয়ার আগে শোধনের সুব্যবস্থা নিলে পানি দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
৭. মৃত জীবজন্তু পানিতে না ফেলে মাটিতে পুঁতে চাপা দিয়ে রাখলে পানি দূষণ রোধ করা সম্ভব।
৮. শিল্পকলকারখানায় ব্যবহৃত বর্জ্য পদার্থ পানিতে পতিত হওয়ার আগেই তা দূষণমুক্ত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করলে পানি দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
৯. পানীয় জল সরবরাহকারী সংস্থা দ্বারা সরবরাহকৃত পানির বিশুদ্ধতা ও দূষণের উপস্থিতি নির্ণয় করে পানি দূষণ রোধ করা যায়।
১০. ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় পরিবারের সদস্য সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রেখে অপ্রয়োজনীয় পদার্থের ব্যবহার কমিয়ে পানি দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

পানি আমাদের জন্য একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। কেননা সুস্থ দেহের পরিপূর্ণ জীবনের জন্য প্রয়োজন বিশুদ্ধ পানি।পানির সদ্ব্যবহার, সংরক্ষণ এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণ অতীব জরুরি। পানি দূষণের ভয়াবহতা সম্পর্কে সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং এর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। এজন্য বিশ্ববাসীর উচিত যথাযথ আইন প্রণয়নের মাধ্যমে পানি দূষণ নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ গ্রহণ করা।

আরবি/ আরএফ

Link copied!