ঢাকা রবিবার, ০৬ অক্টোবর, ২০২৪

পূজার ক্যাম্পাস

অভিক শূর

প্রকাশিত: অক্টোবর ৬, ২০২৪, ০২:৫০ পিএম

পূজার ক্যাম্পাস

ছবি: সংগৃহীত

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মহা উৎসব দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে শুরু করে দেশের ছোটবড় সব জায়গায়ই হয় জাঁকজমক পূজার আয়োজন। যেই আয়োজনে পিছিয়ে নেই কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তেমনই একটি। প্রতি বছর  দুর্গাপূজা একটি উল্লেখযোগ্য উৎসব হিসেবে উদযাপান করা হয় এই বিশ্ববিদ্যালয়ে।

এই পূজার মূল কেন্দ্র জগন্নাথ হল, যেখানে ধর্মীয় গুরুত্ব ও উৎসবের আমেজে ব্যাপক আয়োজন করা হয়। দুর্গাপূজা শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। জগন্নাথ হলের দুর্গাপূজা সবার কাছে বিশেষভাবে পরিচিত। এখানে একটি বিশাল মণ্ডপ তৈরি করা হয়, যেখানে  স্থাপন করা হয় দুর্গা মায়ের প্রতিমা। বাদ যায় না পুষ্পাঞ্জলি, আরতি এবং ভোগ বিতরণসহ বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে পূজার কোনো কার্যক্রম। পুরো হলটিকে রঙিন আলো, ফুল এবং নান্দনিক অলঙ্করণে সাজানো হয়, যা উৎসবের পরিবেশকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে এ ছাড়াও হলের ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক এবং স্থানীয় লোকজন ভোজন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে, যা সামাজিক বন্ধনকে আরও দৃঢ় করে।

এই সময়টাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পায় এক নতুন রূপ। জগন্নাথ হল ও তার আশপাশের এলাকা রঙিন আলোকসজ্জা, ব্যানার এবং ফুলের সাজে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। পূজার সময় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং বাইরের ভক্তদের প্রচুর সমাগম ঘটে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নাচ, গান এবং ধর্মীয় আলোচনা ক্যাম্পাসের পরিবেশকে করে তোলে আরও উৎসবমুখর।  এছাড়া, বিভিন্ন বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীরা মিলিত হয়ে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে, যা তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে তোলে। এছড়া পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে পুনর্মিলনের সুযোগও সৃষ্টি হয়। ক্যাম্পাসে দুর্গাপূজার সময়টা শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বিশেষ মুহূর্ত, যেখানে তারা নিজেদের সাংস্কৃতিক পরিচিতি ও ঐতিহ্যকে উপলব্ধি করে। শিক্ষার্থীরা এই সময় নিজেদের সৃজনশীলতার পরিচয় দিতে নানা ধরনের শিল্পকর্ম তৈরি করে, যেমন পেন্টিং, নাটক এবং গান। ক্যাম্পাসে বিভিন্ন ধরনের খাবারের স্টলও বসে, যেখানে স্থানীয় খাবারের স্বাদ গ্রহণের সুযোগ থাকে। আবার পূজার দিনগুলোতে বিভিন্ন ধর্মীয় বক্তৃতা ও আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা ছড়িয়ে দেয়। এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই ও পুরনো শিক্ষার্থীরা ফিরে এসে নিজেদের স্মৃতি রোমন্থন করে, যা একটি নতুন প্রজন্মের সঙ্গে তাদের সম্পর্ককে আরও মজবুত করে। এই ধরনের কর্মকাণ্ডগুলি দুর্গাপূজাকে একটি বৃহত্তর সমাজের অংশ হিসাবে প্রতিষ্ঠা করে, যেখানে ধর্ম, সংস্কৃতি ও বন্ধুত্বের মেলবন্ধন ঘটে।

এভাবে, দুর্গাপূজা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সাংস্কৃতিক ঐক্যের সেতুবন্ধন হিসেবেও কাজ করে। দুর্গাপূজার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ধর্মীয় মূল্যবোধের পাশাপাশি সামাজিক দায়িত্ববোধ ও মানবিক সম্পর্কের গুরুত্ব উপলব্ধি করে।


লেখক :শিক্ষার্থী ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
 

আরবি/ আরএফ

Link copied!