ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০২ জানুয়ারি, ২০২৫
হারুনের ডায়েরি

ছলিম‍‍`স ভাতের হোটেলে

মির্জা হাসান মাহমুদ

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩০, ২০২৪, ০৭:৪১ পিএম

ছলিম‍‍`স ভাতের হোটেলে

ছবি: সংগৃহীত

শহরের ব্যস্ততম দিনে পথে হাঁটছিলাম। সকাল থেকে কিছু খাইনি ভাবতেই ক্ষুধা পেয়ে গেল। হাঁটতে হাঁটতে পুরনো এক ভাতের হোটেলে ঢুকে পড়লাম; নাম ‘ছলিম’স ভাতের হোটেল’। কাঠের বেঞ্চ, টিনের চাল, আর বাবুর্চির হাঁকডাক; সবই চেনা। তবু আজ জায়গাটা অন্যরকম মনে হচ্ছে। হোটেলের ভেতরে বেশ ভিড়। কেউ ঠাসাঠাসি করে খাচ্ছে, কেউ খাবার অপেক্ষায় বসে আছে। এক কোণে এক বৃদ্ধ চুপচাপ বসে আছেন। সামনে ভাত, ডাল আর অল্প কিছু শুটকি ভর্তা। লক্ষ্য করে দেখলাম তিনি খাচ্ছেন না। তার মন যেন অন্য কোথাও পড়ে আছে। চারপাশের শব্দ এড়িয়ে নিজের ভেতরেই ডুবে আছেন তিনি। আমি একটা খালি জায়গা পেয়ে বসলাম। সামনের টেবিলে এক মা তার ছোট ছেলেকে খাওয়াচ্ছেন। ছেলেটি ভাতের সঙ্গে সবজি খেতে চাচ্ছে না। মা ধমক দিচ্ছেন, তবে তার চোখে মমতা। ছোট্ট এই দৃশ্যেই কত ভালোবাসা, কত যত্ন মিশে আছে; আমি অবাক হয়ে ভাবতে লাগলাম। আমার সামনে বসা এক তরুণ খুব তাড়াহুড়ো করে খাচ্ছে। তার প্লেটে ভাত, গরুর মাংস, ডাল আর এক টুকরো লেবু। তার ক্লান্ত মুখ দেখে মনে হলো- শুধু খাওয়ায় নয়, তার পুরো জীবনটাই যেন তাড়াহুড়োর মধ্যে কাটছে।
আমি অর্ডার দিলাম; পকেটে খুব বেশি টাকা নেই। গরম ভাত, এক বাটি ডাল আর সামান্য সবজি। খাবার এলো। একটি মুখে তুলতেই মনে হলো, অমৃত। আসলে পেটে ক্ষুধা থাকলে সব খাবারই অমৃত মনে হয়। খেতে খেতে ভাবছি, এই খাবারের প্রতিটি উপাদানেরই আলাদা গল্প আছে। গ্রামের মাঠে জন্মানো ধান, মসুরডালের ক্ষেত; সব কিছু চোখের সামনে ভেসে উঠল। অথচ আমরা খাবার খেতে খেতে এসব ভাবতেই ভুলে যাই। পাশের টেবিলে দুইজন গল্প করছিল। একজন বলল, ‘জীবনটা কেমন জানি শূন্য হয়ে গেছে।’ আরেকজন সান্ত্বনা দিয়ে বলল, ‘জীবন তো নদীর মতো। ভাঙনের পরও চলতে হয়।’
ওদের কথাগুলো আমার মনে ধরল। এটাই তো জীবনের সত্য।
খাওয়ার পর হাত ধুতে গেলাম। দেখলাম, এক বাবা তার ছোট ছেলেকে পানির কাছে নিয়ে গেছেন হাত ধোয়াতে। ছেলেটি পানি নিয়ে খেলছে, বাবার মুখে হাসি। সেই হাসিতে দুশ্চিন্তার কোনো ছাপ নেই। মনে হলো, এই হাসিগুলোই জীবনের আসল সম্পদ।
বের হওয়ার সময় হোটেলের মালিক আকবর চাচাকে টাকা দিলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘ কি বাবা! আজকে খাবার কেমন লাগল?’ হেসে বললাম, ‘খুব ভালো। আপনার হোটেলের খাবার ভালো না যাবে কোথায়!’
হোটেল থেকে বের হয়ে শহরের ভিড়ে মিশে গেলাম। কিন্তু মনে রয়ে গেল হোটেলের সেই দৃশ্যগুলো। সাধারণ একটা জায়গায়ও এত ঘটনা থাকতে পারে; শুধু দেখতে জানতে হয়।

আরবি/ এম এইচ এম

Link copied!