উদ্যোক্তা এবং শিল্পপতি ওয়ারেন বাফেট বলেছিলেন, ‘যেকোনো একটি সহজ সিদ্ধান্ত নিন এবং সেই সিদ্ধান্তকে সঠিক করার লক্ষ্যে কাজ করে যান’। আমরা অনেকেই হয়তো অনেক কিছুই জানি কিন্তু তার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে গিয়ে বেশ বেগ পোহাতে হয়। কিন্তু ব্যতিক্রম হলেন গ্রাম থেকে উঠে আসা এই উদ্যোক্তা। রূপালী বাংলাদেশের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের স্বনামধন্য মধু ক্রয়-বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান তাকওয়া শপের মালিক আরিফ গাজীর কথা।
বাংলাদেশের যে কয়েকটি বিশুদ্ধ মধুর অনলাইন বিক্রেতা রয়েছে, তার মধ্যে তিনি উল্লেখযোগ্য একটি অবস্থান ধরে রেখেছেন। বিস্তারিত তার গল্প না শুনলে বোঝার উপায় নেই। আরিফ গাজী বলেছেন, তার এ ব্যবসার আদ্যোপান্ত! মূলত তিনি গ্রাম থেকে খুলনা শহরে আসেন পড়াশোনার কারণে। খুলনা বিএল কলেজে ভর্তি হন পড়াশোনার উদ্দেশে। তার বাড়ি সুন্দরবনের পাশে হওয়ায় অনেকেই তার থেকে মধু ক্রয় করার জন্য বলত। কিন্তু তিনি বিষয়গুলোকে সিরিয়াসলি নিতেন না। করোনা মহামারি-পরবর্তী সময়ে তিনি সিদ্ধান্ত নেন, এবার একটা কিছু করতেই হবে। তারপর তিনি ফেসবুকের মাধ্যমে মধু বিক্রি করা শুরু করেন। প্রথম মাসে তিনি পাঁচ কেজি মধু বিক্রি করেন তার ফেসবুক প্রোফাইলের মাধ্যমে। মজার বিষয় হলো- তিনি জানতেনই না ফেসবুকে বুস্ট করা যায়। মানুষ হিসেবে অত্যন্ত সহজ-সরল হওয়ায় অনেকে ফেসবুকে তার থেকে মধু নিত কিন্তু টাকা দিত না।
আরিফ গাজী আবারও হতাশ হয়ে যান। মানসিক দিক থেকে ভেঙে পড়েন। কিন্তু তার পণ্যের মান এবং পরিশ্রম তাকে ধোঁকা দেয়নি। ধীরে ধীরে তিনি ফেসবুকে বিক্রয় সম্পর্কে জানতে থাকেন। একটি পেজ খোলেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার বিক্রি বাড়তে থাকে। হঠাৎ এক মাসে ৪০ লাখ টাকার মধু বিক্রি করে বসেন। তিনি নিজেই অবাক হয়ে যান। কারণ, এতটা কখনো স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি। রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমি আল্লাহকে ভয় করি এবং মধুর মতো একটি নির্ভেজাল পণ্যে কখনোই আমি ভেজাল দেইনি। আমার থেকে মধু নিয়ে অনেকে অনেক বেশি দামে বিক্রি করে থাকে কিন্তু তাতে আমি মোটেই কোনোভাবে বিচলিত নই। আমি ভোক্তার চাহিদা এবং নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে কাজ করে যেতে চাই’।
২০২৩ সালে তিনি দক্ষিণবঙ্গে সব থেকে বেশি মধু বিক্রি করে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক সংগঠন থেকে পেয়েছেন বিভিন্ন পুরস্কার। ওই বছরে তার মধু বিক্রির পরিমাণ ছিল ৩০০ টন। এ প্রসঙ্গে আরিফ গাজী বলেন, ‘আমি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ব্যবসা করে যাচ্ছি। আমার ব্যবসার সময়কাল যে খুব বেশি, বিষয়টা এমনও নয়। মাত্র আড়াই বছরে আমি এ পর্যায়ে এসেছি’।
আরিফ গাজী বারবার আলোচনা এসেছেন, তার নির্ভেজাল এবং মানসম্মত সুন্দরবনের মধু নিয়ে। মধু বিক্রয়ের পাশাপাশি তিনি মানুষকে শেখান কীভাবে নির্ভেজাল মধু চেনা যায়। পাশাপাশি মধুর উপকারিতা সম্পর্কেও মানুষকে অবহিত করেন। প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে যুব সমাজ যখন ধ্বংসের মুখে চলে যায় ঠিক তখনই ফেসবুককে কাজে লাগিয়ে একজন তরুণ আজ স্বাবলম্বী এবং সফল উদ্যোক্তা।
আপনার মতামত লিখুন :