‘কম দামে প্রোডাক্ট দেখলে পাখা গজায়ে যায়। খুশিতে লাফ দিতে মন চায়। কিন্তু এইটা ভাবি না যে, প্রোডাক্টটা কম দামে এত কীভাবে দেওয়া যায়? তাই না? প্রতিটা জিনিস যখন বাহিরে থেকে আপনি আনাবেন, তখন অবশ্যই এটা শিপিং চার্জটা অনেক বেশি থাকে। আপনার বায়িং প্রাইসটা থাকে। এগুলো মাথায় রাখবেন। আগেই লাফালাফি করবেন না। এ কারণেই বিপদে পড়েন আপনারা। কম দামে বস্তা পচা গন্ধ জিনিস ছাড়া কিছুই নাই। ঘটনা সত্য।’ নিজের ফেসবুক পেজে পণ্য সম্পর্কে এমনটাই লিখেছেন মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশি মেয়ে ডা. সানা বিনতে রহমান। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন মালয়েশিয়াতে। ভেষজ উপাদান দিয়ে নিজের তৈরি স্কিনকেয়ার সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছেন সবার মাঝে। হয়েছেন উদ্যোক্তা। ত্বকের যত্নের জন্য নিজের তৈরি ভেষজ গুণসমৃদ্ধ প্রসাধন পেয়েছে জনপ্রিয়তা।
পুরান ঢাকার মেয়ে সানা বিনতে রহমান বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। পরিবারের সঙ্গে ঢাকাতেই শৈশব-কৈশোর কেটেছে তার। বিক্রমপুরের মালয়েশিয়া প্রবাসী এস এম মোয়াজ্জেম হোসেন নিপুর সঙ্গে ২০০৫ সালে সানার বিয়ে হয়। এরপর তিনি প্রবাসী ব্যবসায়ী স্বামীর সঙ্গে চলে আসেন মালয়েশিয়ায়। তারপর তিনি ইউনিভার্সিটি টেকনোলজি অব মালয়েশিয়া (ইউটিএম) থেকে ২০১১ সালে ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ের ওপর তিন বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা শেষ করেন। এরপর ২০১৪ সালে বোটানিক্যাল অর্গানিক স্কিন কেয়ার কনসালটেন্সির উপর দুবছর মেয়াদি আরও একটি ডিপ্লোমা করেন। ২০২২ সালে মালয়েশিয়ার কোরিয়ান ইউনিভারসিটি থেকে এস্থেটিক সার্জারির ওপর গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেছেন। প্লাস্টিক সার্জন হিসেবে কাজ করছেন। বোটানিক্যাল অর্গানিক স্কিন কেয়ার কনসালটেন্সির ওপর করা ডিপ্লোমা কাজে লাগিয়ে কাজ করছেন ভেষজ উপাদানে তৈরি স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট নিয়ে। সানা বিউটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্লাস্টিক সার্জন ডা. সানা বিনতে রহমানের ভেষজ পণ্যের চাহিদা দ্রুতই বাড়তে থাকে। তার তৈরিকৃত পণ্যগুলো হলো হারবাল উপটান, বডি স্ক্রাব, বডি মাস্ক, হেয়ার ওয়েল এবং ফেস প্যাক মাস্ক। যেগুলো তিনি মালয়েশিয়াতে তার ফেসবুক পেজ ‘সানা বিউটি’তে অনলাইন মাধ্যমে বিক্রি করেন। শখের বসে তিনি প্রথমে এই ব্যবসাটা শুরু করেন। ভেবেছেন, প্রবাসে ঘরে বসে সময়টা যাচ্ছে না। এই কাজটি জানেন বলেই করোনাকালীন ‘সানা বিউটি’ নামে একটি ফেসবুক পেজ খুলেন। প্রোডাক্টগুলোর গুণাগুণ নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিতে থাকেন। অনেক প্রবাসী তার তৈরি পণ্যগুলো ব্যবহার করে উপকৃত হয়েছেন। রূপালী বাংলাদেশকে ডা. সানা বলেন, ‘আমার তৈরি পণ্য বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়াতে ব্যাপকভাবে মানুষ ব্যবহার করছে। প্রায় ৫ বছর ধরে অনেক দেশেই আমার পণ্য যাচ্ছে। এছাড়া মরক্কো ইন্দোনেশিয়াতেও আমার পণ্য নিয়মিত রপ্তানি হচ্ছে। হালালভাবে কোনো কিছু করতে চাইলে আল্লাহ পাক আপনার সঙ্গে থাকবে। আমার এখানে আরও কিছু ব্যবসা আছে। এখানে ক্লিনিক খোলার ইচ্ছা আছে।’
স্বামী এবং তিন সন্তান নিয়ে পরিবারের পাশাপাশি সানা নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে। পণ্য বিক্রির পাশাপাশি ফেসবুক পেজে তিনি নানা ধরনের পরামর্শও দিয়ে থাকেন। বর্তমানে সানা তার পণ্যের গুণগত মান উন্নয়ন নিয়ে কাজ করছেন। বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তের মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। তিনি বিশ্বদরবারে দেশকে তুলে ধরতে চান।
আপনার মতামত লিখুন :