প্রতিটি উঁচু পাহাড়কেই মনে হয় যেন সুনীলের পাহাড়। ‘মাথার খুব কাছে আকাশ, নিচে বিপুলা পৃথিবী, চরাচরে তীব্র নির্জনতা’ এমনই একটি পাহাড় কিনতে চেয়েছিলেন কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়; বিনিময়ে দিয়ে দিতে চেয়েছিলেন তার নিজস্ব নদী। যে নদীটি কেনা হয়েছিল তার একটা প্রিয় দ্বীপের বদলে। তবুও সবকিছুর মোহ কাটিয়ে তিনি একটা পাহাড় কিনতে চেয়েছিলেন। যেখানে মন খারাপে সঙ্গ দেয় গাঢ় নীল আকাশ। একটা আকাশ ছুঁতে কার না মনে চায়?একটু গল্প করতে মেঘের সাথে। তাও যদি সেটা হয় পাহাড়ে বসে; তবে সেটা হয়তো হবে জীবনের শ্রেষ্ঠ আয়োজন। যে আয়োজনে জীবনে একবার হলেও সময় কাটাতে চান প্রকৃতিপ্রেমীরা। তেমনি একটি পাহাড়ের সন্ধান দিতে গিয়ে দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলেছেন ‘অল্টিটিউড হান্টার’ ট্রাভেল গ্রুপের ট্র্যাকিং গাইড সালেহ আকরাম। তিনি বলেন, ‘পাহাড় বলতেই শুভ্র মেঘের হাতছানি। পৃথিবী জুড়ে এমন অজস্র পাহাড় রয়েছে। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এমন পাহাড়ের সন্ধান দিতে গেলে বলতে হয় বান্দরবানের কেওক্রাডং-এর কথা। আমার দেখা বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর পাহাড়গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। কেওক্রাডং বাংলাদেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ। এক সময় এটিকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ ধরা হতো। তবে আধুনিক গবেষণায় এখন সরকারি ভাবে সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ তাজিংডংকেই বলা হয়। কিন্তু তাজিংডং-এর ছোট্ট চূড়া এছাড়া মেঘের আনাগোনা খুব বেশি দেখা যায়না। এ ক্ষেত্রে কেওক্রাডং অনেকটা ব্যতিক্রম। সকালের কেওক্রাডং-এ সূর্যের উষ্ণ অভ্যর্থনা আর মেঘ পাহারায় সন্ধ্যা নামার দৃশ্য মনে রাখার মতো হয়। ইট-পাথরের শহর থেকে বেড়িয়ে এক বুক প্রশান্তি নিতে এই পাহাড় অতুলনীয়। কেওক্রাডং যাওয়ার পথে দেখা মিলবে চিংড়ি ঝর্ণা সহ ছোট বড় বেশ কিছু ঝর্ণা এবং বগালেক পাড়া,দার্জিলিং পাড়ার মতো সুন্দর সব পাহাড়ি পাড়ার। যেখানে পাহাড়ি বম জনগোষ্ঠীরা বসবাস করে থাকে। এছাড়া এর চূড়ায় বসেই যোগী হাফং, জোতলাং, দুমলং-এর মতো পাহাড়গুলোর সৌন্দর্য একসাথে উপভোগ করা যায়। তাই আমি বলবো কংক্রিটের ব্যস্ততা থেকে বেরিয়ে কেউ পাহাড় বেড়াতে চাইলে এই পাহাড়টিকে রাখতে পারে পছন্দের শীর্ষে।’
যেভাবে যাবেন: কেওক্রাডং যেতে হলে প্রথমে ঢাকার ফকিরাপুল বা সায়দাবাদ থেকে যেকোনো বাসে করে ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকায় নন এসি আর এসি বাসে এক থেকে দেড় হাজার টাকা ভাড়ায় বান্দরবান যেতে হবে। সেখান থেকে লোকাল বাসে অথবা চান্দের গাড়িতে করে রুমা বাজার। তারপর পারমিশন নিয়ে প্রথম দিন বগালেকে কাটিয়ে পরদিন ভোরে উঠেই কেওক্রাডংয়ের উদেশ্য রওনা হওয়া যাবে।
থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা: বগালেক থাকা যায় সবার পরিচিত সিয়াম দিদির কটেজ বা ঘরে আরকেওক্রাডং থাকা যায় লালা বমের কটেজে।জন প্রতি থাকা খরচ ২০০/৩০০ টাকা। খাবার ক্ষেত্রে মুরগি দিয়ে ২০০ টাকা খরচ পড়বে।
আপনার মতামত লিখুন :