ঢাকা রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

ঘুরে আসুন স্বর্ণে মোড়ানো মাজার

নদীকান্ত

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৪, ০৫:৫২ পিএম

ঘুরে আসুন স্বর্ণে মোড়ানো মাজার

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

মধ্যপ্রাচ্যের প্রোথিত পূর্ব-ইসলামিক প্রথাগুলোর নিয়মানুসারে মুসলিম সম্প্রদায়ে এখনো প্রচলন রয়েছে সাধু পূজার। যার সূত্র ধরে দেশ-বিদেশে গড়ে উঠেছে ছোট বড় অসংখ্য মাজার। তবে আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে, সেই মাজারগুলো শুধুই সাধু পূজাতে সীমাবদ্ধ নেই, ভ্রমণপিপাসুদের তৃষ্ণার্ত সন্ধানে ধীরে ধীরে হয়ে উঠেছে পর্যটনকেন্দ্র। দিল্লির নিজাম উদ্দিন আউলিয়া থেকে সিলেট বাংলাদেশের শাহজালাল-শাহ পরানের মাজার তারই একটি বহির্প্রকাশ। তবে আমরা আজ সেদিকে যাচ্ছি না। যাচ্ছি বৌদ্ধ যুগের সমতট রাজ্যর্ভুক্ত এলাকা কিংবা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার প্রাচীন একটি জনপদ নবীনগর। ৩৫০.৩৩ বর্গ কিলোমিটারের এই উপজেলাটিকে ঘিরে রেখেছে দক্ষিণমুখী প্রবাহিত বুড়িনদী বা তিতাস নদীর শাখা। পূর্ব অংশে নুরনগর পরগনাভুক্ত, পশ্চিম অংশে রবদাখাত পরগনার্ভুক্ত এবং উত্তরাংশে মেঘনা ও তিতাস। সেখানে রয়েছে প্রাকৃতিক রংতুলিতে আঁকা একটা গ্রাম, যার নাম বীরগাঁও। দেখলে মনে হয় যেন নদীমাতৃক দেশের প্রতীক হয়ে বেঁচে আছে এই গ্রামটি। তবে নদীর নৈসর্গিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি এখানে রয়েছে একটি দর্শনীয় স্থানও। যার নাম মালিক ভরসা। লোকমুখে মালিক ভরসা দরবার শরীফ হিসেবেই পরিচিত। মাজার প্রসঙ্গে দৈনিক রূপালী বাংলাদেশকে এর ইতিহাস সম্পর্কে জানান স্থানীয় বাসিন্দা আবেদ আলী। তিনি বলেন, ‘মাজারে নিদ্রাগত ব্যক্তিটির নাম নুরুল হোসাইন। ভক্তদের কাছে হযরত খাজা শাহ্ হাছান সাঈয়্যিদ নুরুল হোসাইন আহম্মদ চিশতী নামেও পরিচিত। প্রত্যেক কাজের শুরুতে তিনি মালিক ভরসা বলায় কারও কারও কাছে তিনি মালিক ভরসা নামেও পরিচিত ছিলেন। তিনি নবীনগর উপজেলার বড়াইল গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে শিক্ষক হলেও তার পাশাপাশি ছিলেন হোমিও ডাক্তার। গ্রামের মানুষদের দিতেন বিনামূল্যে চিকিৎসা। যার ফলে জন্মায় কিছু ভক্তবৃন্দ। তিনি রবিউল আওয়াল ১৪২৫ হিজরিতে পরলোকগমনের পর তার জন্য ভক্তরা মাঝে মাঝে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেন, একপর্যায়ে তা নিয়মিত কাঠামোতে দাঁড়ায়। এভাবে এক সময় রূপ নেয় মাজারে।’ মালিক ভরসা মাজারটিতে রয়েছে ছোট ছোট কিছু বাগান এবং হাঁটার জায়গা। এছাড়া সপ্তাহিক কিংবা বাৎসরিক মাহফিলকে ঘিরে আয়োজন হয় জাঁকজমক মেলার। যে মেলায় দেখা মিলে দূর-দূরন্ত থেকে আসা অনেক পর্যটকদের। ভেতরের অংশে রয়েছে নুরুল হোসাইন আহম্মদ চিশতীর ব্যবহৃত হারিকেন, আলমারি ও বিভিন্ন তৈজসপত্র। মাজারটির পুরো দেয়ালজুড়ে করা হয়েছে সোনালি রঙে আঁকা নানারকমের কারুকাজ। দেখলে মনে হয় যেন, স্বর্ণে মোড়ানো এক রাজকীয় মাজার। যে মাজারটি পরিদর্শনে প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থীর দেখা মিলে।

যেভাবে যাবেন : মালিক ভরসা মাজারটিতে বিভিন্ন ভাবেই যাওয়া যায়, তবে সহজ রাস্তা ঢাকা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়াগামী যে কোনো বাস অথবা ট্রেনে করে আশুগঞ্জ নেমে ৪০-৫০ টাকা ভাড়ায় নদীর ওপার বীরগাঁও গাছতলা লঞ্চঘাটে যেতে হবে। এরপর ১০ টাকা অটোভাড়ায় পৌঁছানো যাবে মালিক ভরসা মাজারে। তবে দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে ট্রলার ভাড়া করে নদীপথে এখানে পৌঁছাতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন পর্যটকরা।

আরবি/ আরএফ

Link copied!