সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা। বাংলায় এমন কোনো জনপদ নেই, যেখানে এই পূজার উপস্থিতি নেই। কিন্তু এ পূজার শুরুটা কোথায়? নিশ্চয়ই ৬শ’ বছরের পুরোনো মেঘালয়ের নার্তিয়া দুর্গামন্দির অথবা কলকাতার কোনো প্রাচীন মন্দিরে? কিন্তু যদি বলি বাংলাদেশের চট্টগ্রামের কোনো পাহাড়ে! অবাক হবেন? তা হলে ঘুরে আসতে পারেন প্রকৃতিতে মোহনীয় সাদা মেঘ আর শেফালির শুভ্রতা মাখা চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায় করলডেঙ্গা পাহাড়ের চূড়ায়। শ্রীশ্রী চণ্ডী গ্রন্থ অনুযায়ী মেধস মুনির কাছে যেখানে প্রথম দেবীমাহাত্ম্যম্-এর পাঠ নেওয়া হয় এবং করা হয় প্রথম দুর্গাপূজা। মার্কন্ডেয় পুরাণ অনুযায়ী রাজ্য থেকে মনোকষ্ট নিয়ে বনবাসে চলে আসা রাজা সুরথ এবং নিজের দুঃখ থেকে মুক্তি পেতে সমাধী বৈশ্য ঋষি মেধস মুনির শরণাপন্ন হন। ওনার পরামর্শেই আশ্রমের মাটি দিয়ে প্রতিমা নির্মাণ করার মাধ্যমে শুরু হয় প্রথম দুর্গাপূজার সূচনা। তবে দীর্ঘদিন পাওয়া যায়নি এই স্থানের কোনো হদিস। এরপর বরিশালের একজন সাধক যিনি বেদানন্দ স্বামী হিসেবে পরিচিত; তিনিই সর্বপ্রথম এই আশ্রম খুঁজে বের করেন এবং স্থানীয়দের সহায়তায় নির্মাণ করেন মন্দির। তবে দুঃখের বিষয় হচ্ছে, বর্তমানে যথাযোগ্য নজরদারির ব্যবস্থা না থাকায় মন্দিরের আশপাশের অনেক প্রাচীন আর্টিফ্যাক্ট নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়াও পাহাড়ঘেঁষা হওয়ায় বিভিন্ন দুষ্কর্মও সংঘটিত হচ্ছে যা আটকানোর জন্য এগিয়ে আসছে না কোনো উপরমহল।
আশ্রমের ঠিক মাঝখানে মূল চণ্ডীমন্দির এবং তার চারপাশে বিভিন্ন পাহাড় চূড়ায় আরও দশটি মন্দির রয়েছে। এ ছাড়াও রয়েছে সীতার পুকুর। কথিত আছে, দেবী সীতা, রাম আর লক্ষ্মণ বনবাসকালে এখানে ছিলেন কিছুদিন। সনাতনীদের অন্যতম তীর্থস্থান এই মেধস মুনির আশ্রমে মহালয়ার দিন থেকে দুর্গাপূজা পর্যন্ত ব্যাপক জনসমাগম হয়। সনাতন ধর্মাবলম্বী ছাড়াও এখানে আসতে দেখা যায় দেশ বিদেশ থেকে হাজারো প্রকৃতিপ্রেমীদের। চোখ, কান এবং মনের শান্তি একসঙ্গে খুঁজে পেতে দুর্গাপূজার সময়টাতে প্রকৃতির শব্দ শুনতে আপনিও চাইলে চলে যেতে পারেন এই নৈসর্গিক স্থানে।
যেভাবে যাবেন: মেধসমুনির আশ্রমে যেতে হলে প্রথমে চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট বাসস্ট্যান্ডে নেমে সেখান থেকে সিএনজি বা ট্যাম্পোযোগে জনপ্রতি ৩০ টাকা ভাড়ায় কানুনগোপাড়া যেতে হবে। কানুনগোপাড়া থেকে ২০ টাকা ভাড়ায় যেতে পারেন করলডেঙ্গা পাহাড়ের দুর্গাপূজার শুরুর দিকের ইতিহাসে, মেধস মুনির আশ্রমে।
আপনার মতামত লিখুন :