পরীক্ষা দেওয়ার কথা শুনলেই অনেক পরীক্ষার্থীর বুক ধরফর করে, মুখ শুকিয়ে যায়, মাথায় ভর করে একরাশ দুশ্চিন্তা। পরীক্ষার সঙ্গে এই অস্বস্তিকর আবেগীয় অবস্থার উপস্থিতিই হচ্ছে পরীক্ষা ভীতি। আবার অনেক পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় ভালো করতে চায়। কিন্তু তার সমস্যা হলো পরীক্ষার হলে গিয়ে সবকিছু ভুলে যায়। পরীক্ষার কথা মনে হলেই তার মধ্যে ভয় চলে আসে। পরীক্ষা মানেই তার কাছে আতঙ্ক। এই সমস্যা শুধু একজন ছাত্র-ছাত্রীর নয়। অনেক ছাত্র-ছাত্রীরই এ সমস্যা রয়েছে। পরীক্ষা ভীতি শিক্ষার্থীদের একটি প্রধান সমস্যা। এ সমস্যার কারণে অনেক পরীক্ষার্থীর ফলাফল বিপর্যয় ঘটে।
পরীক্ষা ভীতি কী
পরীক্ষা ভীতি এক ধরনের মানসিক অস্থিরতা, যা অনেকের মধ্যেই মাত্রাতিরিক্ত উদ্বেগের সৃষ্টি করে। শিক্ষার্থীরা পরীক্ষাকে অনেক কঠিন একটি প্রক্রিয়া মনে করে ভয় পায়, যার প্রভাব পড়ে পরীক্ষা চলার সময়। পরীক্ষাকে যারা ভয় পায়, পরীক্ষা শুরুর আগে থেকে সাধারণত তাদের মনের মধ্যে সৃষ্টি হয় ভীষণ চাপ। পরীক্ষার প্রধান ভার বইতে হয় মগজকে, ফলে আরও কিছু উপসর্গের সৃষ্টি হয়। কাজেই পরীক্ষাকে অহেতুক ভীতি না ভেবে স্বাভাবিক অবস্থা ভাবাই ভালো এবং সেভাবেই তার মোকাবিলা করতে হবে।
পরীক্ষা ভীতির লক্ষণ
পরীক্ষা ভীতি মানেই এক ধরনের উৎকণ্ঠা বা উদ্বেগ। এ সময়ে সাধারণত যেসব উপসর্গ দেখা দেয় তা হলো- অস্থিরতা, ক্লান্তি ও দুর্বলতা, অনিদ্রা, হাত-পা অতিরিক্ত ঘামা, বুক ধড়ফড় করা, মুখ ও গলা শুকিয়ে যাওয়া, মেজাজ খারাপ হওয়া, জানা পড়া ভুলে যাওয়া, শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হওয়া, বমি-বমি ভাব হয়। এ ছাড়া হজম হয় না, হাত-পা ঘামে, জ্বর এসে যায়, বারবার বাথরুমে যায়, ঘন ঘন তৃষ্ণা ও ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া, ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা ইত্যাদি।
যা করণীয়
আমাদের দেশে বিভিন্ন পরীক্ষার সিলেবাস থাকে দীর্ঘমেয়াদি। পরীক্ষার আগে সিলেবাস শেষ না হওয়ার ফলে শুরু হয় পরীক্ষা ভীতি। অনেক ছাত্রছাত্রী বিষয় নির্বাচনে ভুল করে। বিষয় কঠিন মনে হয়। এর ফলে চাপ সহ্য করতে না পেরে পরীক্ষাকে ভয় পেতে শুরু করে। পরীক্ষার আগে ভালো প্রস্তুতি না নিতে পারলেও পরীক্ষা ভীতি জন্ম নেয়। কাজেই পরীক্ষা বিষয়টাকে সহজ-স্বাভাবিক হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। নিজের আশা কমাতে হবে। মূলত অতিরিক্ত আশা করার কারণে মানসিক চাপের সৃষ্টি হয়। আশা কমলে চাপও কমবে, এতে পরীক্ষা ভীতিও কমে যাবে। পরীক্ষা ভীতি কাটানোর ভালো উপায় হলো আগে থেকে নিয়মমাফিক পড়া। যদি বছরের শুরু থেকেই একটি নির্দিষ্ট নিয়ম করে রুটিনমাফিক পড়ালেখা করা যায় তাহলে পরবর্তী সময়ে পরীক্ষা ভীতি থাকে না। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কিংবা সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত পড়ালেখার প্রয়োজন নেই। পড়ালেখার জন্য দৈনিক ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা সময় যথেষ্ট। এ সময়টুকু একটানা পড়তে হবে এমন কথা নেই। সময় ভাগ করে রুটিনমাফিক পড়লে ভালো হবে।
আপনার মতামত লিখুন :