‘ধর্মীয় নয়, দুর্গাপূজা সামাজিক উৎসব’ শুধু কথায় নয় কাজে বিশ্বাস করেন তিনি। যা বলেছেন, তা করে দেখিয়েছেন। পড়ালেখা বা কাজ করলে এমনভাবেই করতে হবে; যেন বিশ্ব তাকিয়ে থাকে। ২০২১ সালে ডিসেম্বর মাস। ইউনেস্কোর ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ অব হিউম্যানিটি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় দুর্গাপূজাকে। তাও আবার একজন গবেষকের কল্যাণে। তিনি একজন বাঙালী নারী। নাম তার তপতী গুহ ঠাকুরতা। তিনি কলকাতার সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোশ্যাল সায়েন্সের ইতিহাসের অধ্যাপক ও পরিচালক।
তপতী গুহ ঠাকুরতার জন্ম ১৯৫৭ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর কলকাতায়। পড়াশোনাও এই শহরে। ১৯৮০ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এম.এ পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হন। কলকাতার সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোশ্যাল সায়েন্সেসে ডিপ্লোমা লাভ করেন ১৯৮২ সালে। ১৯৮৮ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করে ডি.ফিল ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৮৫০-১৯২০ সালে সময়ের বাংলার শিল্প, শিল্পী ও নন্দনতত্ত্ব ছিল তার গবেষণার বিষয়। ১৯৯৫ সালে তিনি কেমব্রিজের উলফসন কলেজে চার্লস ওয়ালেস ভিজিটিং ফেলোশিপ লাভ করেন। ২০১১ সালে তিনি ইয়েল সেন্টার ফর ব্রিটিশ আর্টের ভিজিটিং ফেলো ছিলেন। ২০১৮ সালে তিনি ব্রাউন ইউনিভার্সিটির ভিজিটিং প্রফেসর ছিলেন। তার নিরলস গবেষণা বিশ্ব আঙিনায় দুর্গাপূজাকে হেরিটেজ হিসাবে তুলে ধরেছে। ২০০৩ সাল থেকে শুরু হয় তার কর্মযজ্ঞ। কেন্দ্রীয় তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ২০১৯ সালে তাকে দুর্গাপুজো নিয়ে বিস্তারিত গবেষণার দায়িত্ব দেয়। তারপর সেই গবেষণাপত্র তিনি পাঠান ইউনেস্কোতে। ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে স্বীকৃতি পায় তার গবেষণা পত্র। ২০০৩ সাল থেকে শুরু হয় তার কর্মযজ্ঞ। কেন্দ্রীয় তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ২০১৯ সালে তাকে দুর্গাপুজো নিয়ে বিস্তারিত গবেষণার দায়িত্ব দেয়। তারপর সেই গবেষণাপত্র তিনি পাঠান ইউনেস্কোতে। ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যর স্বীকৃতি লাভ করে বাংলার দুর্গাপূজা। ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করার সুবাদে তার দুর্গাপূজার নিয়ে ছিল এক বিশেষ আগ্রহ। তিনি অতীতের দুর্গাপুজোর সাথে বর্তমান দুর্গাপূজা সংস্কৃতির বিশ্লেষণ করে একটি বইও লেখেন। তার লেখা ‘নেম অফ দ্য গডেস: দুর্গাপুজাস অফ কনটেম্পোরারি কলকাতা—বইটি প্রকাশিত হয় ২০১৫ সালে। এই বইটিতে তিনি আলোচনা করেছেন কিভাবে অতীতের সাথে বর্তমানে দুর্গাপুজোর ধারা ও সংস্কৃতি পরিবর্তিত হয়েছে। জানা যায়, দুর্গাপুজাকে ইউনেস্কোর স্বীকৃতির জন্য ২০১২ সালে আবেদন জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তা গ্রাহ্য হয়নি। দুর্গাপুজো নিয়ে তার লেখা বই প্রকাশিত হয়। তা পড়ে ২০১৮ সালে তার সঙ্গে যোগাযোগ করে দিল্লির সংস্কৃতি মন্ত্রক। ইউনেস্কোর কাছে জমা দেওয়ার জন্য তাকে একটি ‘ডসিয়ের’ বা তথ্য সম্বলিত গবেষণা পত্র তৈরি করতে বলা হয়। তপতী প্রথমে এই কাজে রাজি হননি। কিন্তু তার দুই ছাত্রছাত্রী সন্দীপন মিত্র ও দেবী চক্রবর্তী তাকে সাহায্যের আশ্বাস দিলে অধ্যাপিকা গুহঠাকুরতা এই কাজে হাত দেন। মাত্র ৭ মাসের মধ্যে ডসিয়ের তৈরি করেন। ভারত সরকার সেই পুস্তিকা পাঠিয়ে দুর্গাপুজোকে ‘ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ অফ হিউম্যানিটি’-এর স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য ইউনেস্কোর কাছে আবেদন করে। ৬৫ বছর বয়সী তপতী গুহ ঠাকুরতা বলেছেন, দুর্গাপূজার স্বীকৃতির কৃতিত্ব কারও একার নয়। তাজমহলের গৌরবের কৃতিত্ব কি কারও একার হতে পারে? আমার ইউনেস্কোর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ছিল না। ভারত সরকারের মিনিস্ট্রি অব কালচার আমাকে বলেছিল এটা করতে। তাদের হয়ে আমরা কাজটা করেছিলাম। বাংলার হয়েও কাজটা করেছিলাম। কাজটা ছিল কলকাতার দুর্গাপুজোকে ইউনেস্কোর ইনট্যানজিবল কালচারাল লিস্টে স্থান দেওয়া। সার্ভে আমি বহু বছর ধরে করেছি, আমার নিজের কাজের জন্য। তবে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৯ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত আমাদের সময় নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল। ইউনেস্কোর নজরে মূল যে বিষয়টি ছিল, তা এই দুর্গাপুজো সর্বজনীন। এটা বিভিন্ন সম্প্রদায়কে ধরে হয়। নানা শিল্প, নানা রকমের শিল্পকর্মীদের নিয়ে হয়। বিভিন্ন মানুষের সমাগমে হয়। এটা ধর্মীয় উৎসবের জায়গা থেকে উঠে এসে সামাজিক সাংস্কৃতিক উৎসব, তার উপরে জোর দেওয়া হয়।
আপনার মতামত লিখুন :