শেষ হয়েছে এইচএসসি পরীক্ষা। এই পরিক্ষা শেষ হলে শিক্ষার্থীরা তাদের উচ্চশিক্ষা নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেন। অনেক শিক্ষার্থীই উচ্চশিক্ষা নিতে বিদেশ পাড়ি জমাতে আগ্রহী হন। যারা বিদেশে পড়তে যেতে চান তাদের সামনে থাকে অনেক দেশে যাওয়ার অপশন, এ নিয়ে অনেকেই পরে যান দ্বিধাদন্দে। যারা বিদেশে পড়াশোনা করতে চান, তারা তাদের পছন্দের তালিকায় যোগ করতে পারেন জার্মানিকে। উচ্চমানের শিক্ষা, বৈশ্বিক স্বীকৃতি, এবং নানা সুযোগ-সুবিধার জন্য জার্মানি শিক্ষার্থীদের জন্য এক আকর্ষণীয় দেশ। তবে জার্মানিতে পড়াশোনার স্বপ্ন পূরণ করতে গেলে কিছু বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। সে বিষয়গুলো নিয়েই আজকের আলোচনা।
কেন জার্মানি?
জার্মানির বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিশ্বব্যাপী পরিচিত তাদের উচ্চমানের শিক্ষা এবং গবেষণার জন্য। এখানে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশন ফি নেই বা খুবই কম, যা শিক্ষার্থীদের জন্য বড় একটি সুবিধা। জার্মান ভাষায় দক্ষতা থাকলে বা ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করতে চাইলে, জার্মানিতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ অনেক বেশি।
প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ও প্রস্তুতি: জার্মানিতে স্নাতক কোর্সে ভর্তির জন্য কিছু নির্দিষ্ট যোগ্যতা থাকা জরুরি। এটির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আবিতুর নামক যোগ্যতা, যা জার্মান শিক্ষার্থীরা স্কুল শেষে অর্জন করে। কিন্তু, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে, এইচএসসি শেষে সরাসরি জার্মানিতে স্নাতক কোর্সে ভর্তির সুযোগ পাওয়া যায় না। তবে এইচএসসি পাশ করার পর একটি বাংলাদেশি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুই বছর (ডিপ্লোমা পাশকৃতদের ক্ষেত্রে এক বছর) পড়ার পর সরাসরি ব্যাচেলরে ভর্তি হওয়া যায়। আরও নির্দিষ্ট করে বললে জার্মানিতে স্নাতক পড়তে চাইলে বাংলাদেশিদের দেশীয় কোন ইউনিভার্সিটিতে ব্যাচেলর কোর্সের ৫০% ক্রেডিট শেষ করতে হয়। অথবা জার্মানির Studienkolleg এ এক বছরের প্রিপারেটরি কোর্স করতে হয়।
ভাষাগত দক্ষতা : যদিও কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ইংরেজি মাধ্যমে কোর্স অফার করে, তবুও জার্মান ভাষার ওপর একটি ভালো ধারণা থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই জার্মান ভাষায় কোর্স চালানো হয়, এবং সেখানে ভর্তি হতে হলে B2 বা C1 স্তরের জার্মান ভাষার দক্ষতা প্রয়োজন হতে পারে। এজন্য, ভর্তির আগে জার্মান ভাষা শেখা খুবই উপযোগী হতে পারে।
প্রয়োজনীয় নথিপত্রের তালিকা:
- এইচএসসি এবং এসএসসি সার্টিফিকেট ও মার্কশিট
- ভাষাগত যোগ্যতার প্রমাণপত্র
- মোটিভেশন লেটার এবং সিভি
- পাসপোর্ট এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় আইডি
- অ্যাপ্লিকেশন ফি (যদি থাকে)
বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের জন্য সকল একাডেমিক ডকুমেন্টস শিক্ষা বোর্ড/বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রনালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় এবং জার্মান এমব্যাসি,ঢাকা থেকে সত্যায়ন করএ নিতে হবে। অথবা নোটারি করলেও হয়।
ফিনান্স এবং স্কলারশিপ: জার্মানিতে পড়তে হলে এক বছরের খরচ বাবদ ১০ হাজার ইউরো ব্লক একাউন্টে রাখতে হয়। যেখান থেকে পুরো টাকা একবারে তুলতে না পারলেও, জার্মানিতে গিয়ে প্রতিমাসে ৭২০ ইউরো করে এক বছরে সম্পূর্ণ টাকা তোলা যায়।(স্টেট/সিটি অনুসারে পরিবর্তিত হতে পারে) যদিও জার্মানির অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশন ফি নেই, তবুও জীবনযাত্রার খরচের জন্য প্রতি মাসে ৮৬০ ইউরো (প্রায়) খরচ হতে পারে। আবার শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু স্কলারশিপের সুযোগ রয়েছে, যেমন: DAAD স্কলারশিপ। এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্যও নানা ধরণের বৃত্তির ব্যবস্থা রয়েছে।
ভিসা এবং আবাসন: জার্মানিতে পড়তে যেতে হলে, প্রথমেই একটি স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। ভিসা পাওয়ার পর, সেখানে আবাসনের জন্য ব্যবস্থা করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস, প্রাইভেট রুম বা শেয়ারড অ্যাপার্টমেন্ট; যেকোনো একটি বেছে নেওয়া যেতে পারে।
শেষ কথা: জার্মানিতে স্নাতক পর্যায়ে পড়াশোনা করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক পরিকল্পনা এবং প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির মাধ্যমে, জার্মানিতে শিক্ষাজীবন শুরু করা যেতে পারে। উচ্চশিক্ষার জন্য জার্মানিকে বেছে নেওয়া মানে শুধু একটি ভালো শিক্ষাজীবন নয়, বরং একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের পথও খুলে দেওয়া।
আপনার মতামত লিখুন :