দুই যমজ ভাই পাহাড় এবং ধূসরের মিরিঞ্জা ভ্রমণের অনেক চাঞ্চল্যকর ঘটনা প্রবাহের মধ্যে এগিয়ে যায় গল্প। সেখানে রুইপাও নামক এক সুন্দরী ম্রো যুবতীর প্রেমে পড়ে ধূসর। যা মেনে নিতে পারে না পাহাড়ের এক বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী সংগঠনের স্থানীয় নেতা মেইনক্লাম ম্রো। সে সূত্র ধরে পাহাড়ে চলতে থাকে একের পর এক হত্যাকাণ্ড। নানা নাটকীয়তার মধ্যে দিয়ে গল্প এগুতে থাকে। রুইপাও-কে কাছে পেতে তার সম্প্রদায় সম্পর্কে জানতে গিয়ে ধূসর উদঘাটন করে ম্রো আদিবাসীদের বিভিন্ন অমীমাংসিত রহস্যের! সে রহস্য উন্মোচন করতে অমর একুশে বইমেলা ২০২৫-এ আসছে কথাসাহিত্যিক অঞ্জন হাসান পবনের উপন্যাস ‘লিটল মাস্টার’। বইটি প্রকাশ করছে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান কিংবদন্তী পাবলিকেশন। প্রচ্ছদ করেছেন চিত্রশিল্পী আইয়ুব আল আমিন। বইটি নিয়ে লেখক দৈনিক রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘ এই উপন্যাসটি ম্রো আদিবাসীদের নিয়ে তথ্যনির্ভর একটি উপন্যাস। এটি মূলত বিরহ প্রেমের গল্প। যে উপন্যাসে উঠে এসেছে ম্রো জনগোষ্ঠীর জীবনধারা, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট, ধর্মীয় আচার, লোকশিল্প, লোকগল্পসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। সব বয়সি এবং শ্রেণির মানুষের পাঠযোগ্য বইটি। নির্দিষ্ট কোনো শ্রেণি পেশার মানুষের জন্য না। যারা ইতিহাস আশ্রয়ী তথ্যনির্ভর উপন্যাস পছন্দ করে, তাদের কাছে বেশ রোমাঞ্চকর মনে হতে পারে উপন্যাসটি। এই উপন্যাসের স্থানকাল এবং পটভূমি মিরিঞ্জার। এখন লামা এবং মিরিঞ্জায় প্রায় অর্ধশত জুমঘরের রিসোর্ট আছে। অথচ দুই বছর আগেও এসব পাহাড়ে সন্ধ্যার পরে ভয়ে কেউ যেতে সাহস করত না। মোবাইলের টর্চ জ্বালিয়ে শত শত রাত আমি একা এই মিরিঞ্জার বুকে দাপিয়ে বেরিয়েছি নির্ভয়ে নির্বিঘ্নে। এই পুরোটা সময় আমাকে কয়েক লাখ পাহাড়ি মশা এবং পিঁপড়ার কামড় খেতে হয়েছে। অসংখ্যবার শরীর থেকে জোঁক ছাড়াতে হয়েছে। বৃষ্টির রাতে জুমঘরে ভয়ঙ্কর বিষধর সাপের সঙ্গে রাত কাটাতে হয়েছে। কালবৈশাখীর রাতে পাহাড়ের চূড়ায় খুবই আতঙ্ক নিয়ে রাত পার করতে হয়েছে। এই উপন্যাসের জন্য পাহাড়ে আমার অজস্র বিনিদ্র রাত কেটেছে। এত এত প্রতিকূলতার জন্য আমার পরিবার এবং প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের সদস্যরা বারবার আমাকে ঢাকায় ফিরে যেতে অনুরোধ করেছে। কিন্তু আমি আমার সিদ্ধান্তে বরাবরের মতোই অনড় ছিলাম। কিছুদিন পর আমি জুমচাষ করা শিখলাম। শিকারে গেলাম। পুরোটা সময় আমি তাদের সঙ্গে কাটিয়েছি। এর মধ্যে তাদের ভাষা বুঝতে চেষ্টা করেছি। তবুও লেখা এগুচ্ছিল না। আমার কাছে মনে হচ্ছিল আমার আরও অভিজ্ঞতা দরকার, সময় দরকার। আমি নিরাশ হইনি। লেগে ছিলাম এক ধ্যানে। আমার কাছে ব্যর্থতা বলতে কিছু নেই। তাই হাল ছাড়িনি। বহু বর্ষার দিন আমি পাহাড়ে কাটিয়েছি, কিন্তু কখনোই পা পিছলে পড়ে যাইনি। শেষের দিকে একদিন বৃষ্টির মধ্যে পুইত্তা ঝিড়িতে গিয়ে আধা ঘণ্টার ব্যবধানে মেরুদণ্ডের নিচের মূল জয়েন্টে তিনবার পড়ে গিয়ে মারাত্মক ব্যথা পেয়েছিলাম। মেরুদণ্ড ফ্র্যাকচার হয়ে
গিয়েছিল। দীর্ঘ দুই বছর পাহাড়ে থাকার পর ঢাকা ফিরলাম। ডাক্তার আমাকে টানা দুই মাসের বেড রেস্টে থাকার পরামর্শ দিলেন। গরম পানির ছ্যাক, ইঞ্জেকশন আর ওষুধের ওপর কাটলো কয়েকটা মাস। এক পর্যায়ে সুস্থ হলাম। আবার লিখতে
শুরু করলাম। একপর্যায়ে গত নভেম্বরে লেখা
শেষ হলো।’
আপনার মতামত লিখুন :