ঢাকা রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

প্রবাস জীবনের অপ্রত্যাশিত বাস্তবতা

মির্জা হাসান মাহমুদ

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৪, ০৫:১২ পিএম

প্রবাস জীবনের অপ্রত্যাশিত বাস্তবতা

ছবি: ইন্টারনেট

প্রবাস জীবনের প্রথম চিন্তা আসলে উচ্চ আয়। অনেকেই উন্নত দেশগুলোতে যেতে চান উচ্চ আয়ের স্বপ্নে, যেখানে কর্মসংস্থানের সুযোগ বেশি এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত। কিন্তু প্রবাসে পৌঁছে দেখা যায় যে, আয় যেমন বেশি তেমনি ব্যয়ও বিপুল। বাসস্থান, খাদ্য, পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা, এবং অন্যান্য দৈনন্দিন খরচের চাপ প্রবাসীদের বাস্তব জীবনে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। আর এই উচ্চ ব্যয়ের ফলে সঞ্চয় করা প্রায়শই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। প্রবাসে জীবনযাত্রার খরচের জটিলতা এবং প্রবাসীরা কীভাবে এই খরচের সাথে সামঞ্জস্য করেন, তা নিয়ে আজকের আলোচনা।

সবচেয়ে বড় ব্যয়
বিদেশে যাওয়ার পর প্রথম চ্যালেঞ্জ হলো একটি সাশ্রয়ী বাসস্থান খুঁজে পাওয়া। বাসস্থানের খরচ প্রবাসে সাধারণত সবচেয়ে বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যয় হিসেবে দেখা যায়। বড় শহরগুলোতে, বিশেষ করে নিউ ইয়র্ক, লন্ডন, টোকিও, দুবাই, সিডনির মতো জায়গায় ভাড়ার খরচ অত্যন্ত বেশি। এক কক্ষের অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া অনেক সময় মাসিক আয়ের ৩০-৫০% পর্যন্ত খেয়ে ফেলে। ভাড়ার বাইরে অ্যাপার্টমেন্ট মেরামত, ইউটিলিটি বিল (বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস), এবং অন্যান্য অতিরিক্ত খরচের জন্যও প্রবাসীদের টাকা ব্যয় করতে হয়। উন্নত দেশগুলোর বেশিরভাগ জায়গায় ইউটিলিটি বিলগুলো বেশ ব্যয়বহুল হয়। এখানেই একজন প্রবাসীর মাসিক খরচের উল্লেখযোগ্য অংশ চলে যায়।

আয় যেভাবে ব্যয়ে বদলে যায়
প্রবাসীরা অনেক সময় তাদের দেশে কম খরচে যেসব পণ্য পেতেন, বিদেশে সেসব কিনতে গিয়ে দ্বিগুণ খরচ করেন।  প্রবাসে স্থানীয় খাদ্যপণ্যের দাম তুলনামূলকভাবে কম হলেও, দেশীয় খাদ্য সামগ্রীর দাম অনেক বেশি হয়। অধিকাংশ প্রবাসীরা তাদের স্বদেশীয় খাবার বা উপাদান কিনতে চান; বড় শহরগুলোতে দেশীয় পণ্য বা খাবারের সরবরাহ থাকলেও, তা অনেক বেশি দামে বিক্রি হয়। আর তা কিনতে গেলে অনেক বেশি অর্থ ব্যয় হয়ে যায়। আবার নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য; যেমন, হাইজিন পণ্য, কসমেটিক্স, এবং অন্যান্য গৃহস্থালীর সামগ্রীর দামও প্রবাসে বেশি হতে পারে। অনেক প্রবাসীই এই ধরনের খরচ কমানোর জন্য চেষ্টা করেন, কিন্তু ব্যয় সব সময় নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না।

অপ্রত্যাশিত ব্যয় 
স্বাস্থ্যসেবার খরচ বিদেশে অনেক বেশি হয়ে থাকে, বিশেষ করে যারা উন্নত দেশে বসবাস করেন।  আবার বেশিরভাগ উন্নত দেশে স্বাস্থ্যসেবা বিনামূল্যে পাওয়া যায় না, এজন্য স্বাস্থ্যবিমা বাধ্যতামূলক করা হয়। এই বিমার প্রিমিয়ামও অনেক সময় বেশ উচ্চ হয়ে থাকে। অনেক প্রবাসীকে মাসে কয়েকশ ডলার স্বাস্থ্যবিমার জন্য খরচ করতে হয়।  এছাড়া জরুরি চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের খরচও অত্যন্ত বেশি হয়। প্রবাসীরা যদি কোনো কারণে বিমার বাইরে গিয়ে চিকিৎসা করাতে চান, তাহলে তাদের অনেক বড় অঙ্কের টাকা দিতে হয়, যা অনেকের জন্য অপ্রত্যাশিত চাপ তৈরি করে।

চলাচলের প্রয়োজনীয়তা
প্রবাসে জীবনের আরেকটি বড় খরচের জায়গা হলো পরিবহন।  
অনেক দেশেই পাবলিক ট্রান্সপোর্ট অত্যন্ত উন্নত, তবে এর জন্যও প্রতিমাসে বড় অঙ্কের খরচ গুনতে হয়। বড় শহরগুলোতে মেট্রো, বাস বা ট্রেনের জন্য নিয়মিত যাতায়াতের পাস কিনতে হলে মাসিক খরচ অনেক বেশি হয়ে দাঁড়ায়। যদি কেউ ব্যক্তিগত গাড়ি কিনতে চান, তাহলে তার জন্য গাড়ির দাম, রক্ষণাবেক্ষণ, জ্বালানি খরচ, এবং বিমার খরচ; সব মিলিয়ে ব্যয় অনেক বেড়ে যায়। যাদের গাড়ি রয়েছে, তারা গড়ে মাসে কয়েকশ ডলার শুধু গাড়ির জন্য খরচ করেন।  

জীবনযাত্রার ব্যয় সামলানোর কৌশল
প্রবাসীরা তাদের দৈনন্দিন খরচের ওপর নিয়ন্ত্রণ আনার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেন:
বাজেট তৈরি: খরচের উপর নজর রাখার জন্য প্রবাসীরা মাসিক বাজেট তৈরি করেন। এতে অপ্রয়োজনীয় খরচ কমানো এবং সঞ্চয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়।

গ্রুপে বাসা শেয়ার করা 
অনেক প্রবাসী একা বাসা ভাড়া না নিয়ে গ্রুপে বা পরিবারের সদস্যদের সাথে বাসা ভাগাভাগি করেন, যাতে খরচ কমানো যায়।

পাবলিক ট্রান্সপোর্ট
ব্যক্তিগত গাড়ি না রেখে অনেকেই পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করে খরচ কমানোর চেষ্টা করেন।
স্থানীয় বাজার থেকে কেনাকাটা: অনেক প্রবাসী সুপারমার্কেটের বদলে স্থানীয় বাজার থেকে খাদ্য ও অন্যান্য পণ্য কিনে খরচ কমানোর চেষ্টা করেন।

আরবি/ আরএফ

Link copied!